পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদে লংমার্চ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ঢাকা থেকে আগরতলা অভিমুখে এ লংমার্চ করা হবে। দলটির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। গত বৃহস্পতিবার তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে লংমার্চের দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
আজ শনিবার তিন সংগঠনের বৈঠক হবে, সেখানে এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে লংমার্চটি হতে পারে। এ কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে। যুবদলের একজন শীর্ষ নেতা জানান, ঢাকার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লংমার্চ শুরু করার কথা প্রাথমিক আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক বড় গাড়িবহর নিয়ে এটি শুরু করার পরিকল্পনা তাদের। পথে নিজ নিজ জেলার নেতাকর্মীরা গাড়িবহর নিয়ে অংশ নেবেন। লংমার্চের শুরু ও শেষে দুটি সমাবেশ হতে পারে। আজ শনিবারের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়াও সুশৃঙ্খলভাবে কর্মসূচি সফল করতে কয়েকটি টিমও গঠন করা হতে পারে। যারা সংশ্লিষ্ট জেলার সঙ্গে প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন। সব কিছু আজকের বৈঠকে চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
নেতারা জানান, প্রথমে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন ভারতের আগরতলা অভিমুখে এপারে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করতে চান তারা। তা ঢাকা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের সূত্রে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও জামিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন দেখা দেয়। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের কিছু মহল ও মিডিয়া প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। চিন্ময় ইস্যুসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার পর ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা-ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়।
এ ছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোতায়েন চেয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপও কামনা করেন তিনি। গত সোমবার বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলারও আহ্বান জানান। বাংলাদেশবিরোধী ভারতের এমন অবস্থানে অসন্তুষ্ট বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ভারতের এমন আচরণ কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। তারা অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তাই ভারতের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পরই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে রিজভী তার স্ত্রীর একটি ভারতীয় শাড়ি রাস্তায় ফেলে দিলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন নেতা-কর্মীরা। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আগরতলা অভিমুখে লংমার্চ করার সিদ্ধান্ত নিল বিএনপির তিন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।