সোমবার, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৪৬ বার পঠিত

বিএনপিসহ সরকার বিরোধী দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী চলমান রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি বাড়ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল শুক্রবার এবং পর দিন শনিবার বাদ দিয়ে আগামী রোববার থেকে সপ্তাহজুড়ে ফের টানা অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। স্থায়ী কমিটিসহ বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতারা হাইকমান্ডকে চলমান অবরোধ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। গণতন্ত্র মঞ্চসহ যুগপতের শরিকরাও বিএনপিকে একই পরামর্শ দিয়েছে। আজ তৃতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচি শেষে নতুন এই ঘোষণা আসতে পারে।

গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টার টানা অবরোধ কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার শেষ হবে। গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। দলটির দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলা চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দিয়েছিল এবং এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। এর প্রতিবাদে পর দিন রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। হরতাল কর্মসূচি শেষে মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বিএনপির নয়াপল্টনস্থ মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি তাদের চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে জনগণের ব্যাপক সাড়া দেখছে। দলটির দাবি, জনগণের সমর্থনে নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে। সে কারণে সরকারের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সড়কপথে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলেনি। ঢাকার ভেতরেও সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি অনাস্থা দিয়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না। এই বিষয়টি দাবি আদায়ে বিএনপিকে টানা কর্মসূচিতে যেতে অনুপ্রাণিত করছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী সপ্তাহজুড়ে ফের দেশব্যাপী অবরোধের কর্মসূচি আসতে পারে। এমনকি আগামী সপ্তাহের পরেও অবরোধ চলতে পারে।

দলটির কিছু কিছু নেতা বলছেন, চলমান কর্মসূচিতে তারা যে সাড়া পাচ্ছেন, তাতে তারা আশাবাদী যে অচিরেই আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে পারবেন। দ্বিতীয় ধাপের অবরোধ কর্মসূচি আরো কঠোরভাবে পালনের পরিকল্পনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। সে কারণে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় সত্ত্বেও নেতাদের সর্বতোভাবে গ্রেফতার এড়িয়ে এবং কোনো শোডাউন না দিয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতারের পরিপ্রেক্ষিতে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এখন আন্দোলনের সার্বিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা গ্রেফতার হলেও চলমান আন্দোলনে কোনো ছন্দপতন হবে না বলে দাবি বিএনপি নেতাদের।

এ দিকে মহাসমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মামলা ও গ্রেফতার অভিযান চলমান থাকায় নেতারা প্রকাশ্যে না আসতে পারলেও অভ্যন্তরীণভাবে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির মহাসমাবেশে হামলার ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকাস্থ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে দলটি। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেগুলোকে আন্দোলনের পথে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চায় তারা। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে তারা যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবে। ওই ঘটনায় সরকারের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

দ্বিতীয় দিনে পিকেটিং : সরকার পতনে চলমান এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগরসহ সব জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীরা মিছিল করেছেন। রাজপথে পিকেটিং করেছেন। রাজধানীতে প্রায় প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মী এ দিন রাজপথে সরব থেকেছেন, মাঠে নেমে কর্মসূচি সফলে চেষ্টা করেছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান। একই দিন সমমনা বিভিন্ন জোটের নেতাকর্মীরাও মাঠে নেমেছেন। এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপি ঘোষিত সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে রাজধানীর রামপুরা বিশ্বরোডে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানগর বিএনপি নেতা ভিপি সামছুল ইসলাম শামছু, যুবদল নেতা শাওন, মহানগর উত্তর বিএনপির ফয়েজ আহমেদ ফরু, যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দীপু সরকার, রামপুরা থানা বিএনপির হেলাল কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রিজভী বলেন, এ আন্দোলন জনগণের আন্দোলন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন। হুমকি দিয়ে, গুলি করে হত্যা করে, দমন নিপীড়ন করে এ আন্দোলন দমানো যাবে না। এবার জনগণের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেই বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে।
রাজধানীর বিজয়নগর-পল্টন রোডে কৃষকদল সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। অবরোধ সমর্থনে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে মিছিল বের করে মহানগর দক্ষিণ যুবদল । মিছিল শেষে পুলিশের একটি বাস ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে অবরোধ সমর্থকরা। পুলিশ আসার আগে অবরোধকারীরা সটকে পড়ে। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদল আহ্বায়ক শরীফ উদ্দীন জুয়েলের নেতৃত্বে রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন চৌরাস্তায় মিছিল ও অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মারুফ এলাহী রনি, শ্যামল মালুম, যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান শাওন, আশিক রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী সামসুল হুদা, নাসরিন রহমান পপি প্রমুখ। বনশ্রী-মেরাদিয়া বাজারে আরেকটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রদলের।

এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক হায়াৎ মাহমুদ জুয়েল, সদস্য শাহেদ হাসানসহ আরো অনেকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক জহরুল হক সাইমুনের নেতৃত্বে মিরপুরে আরেকটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার নেতৃত্বে একটি মিছিল শেষে রাস্তা অবরোধ করেন নেতাকর্মীরা। তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী মোহাম্মদ ইলিয়াসের নেতৃত্বে মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সাফি ইসলামের নেতৃত্বে মৌচাক থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। গুলশান এলাকায় দফায় দফায় মিছিল বের করেন তিতুমীর কলেজে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

সংগঠনের সভাপতি আরিফ এমদাদ ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে গুলশান এলাকায় বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করেন। কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও এদিন মিছিল বের করেন। সরকারি বাঙলা কলেজের সভাপতি ইবরাহিম খলিলের নেতৃত্বে মিরপুরে মিছিল করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পল্লবীর কালশী রোডে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন এবং মিছিল বের করেন। তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টির নেতৃত্বে একটি মিছিল হয়। একইভাবে খিলক্ষেতেও বিএনপির একটি মিছিল বের হয়।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির বিভিন্ন থানায় ও ওয়ার্ডে মিছিল করেন নেতাকর্মীরা।

কিশোরগঞ্জে আরো একজনের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুই নেতার মৃত্যুর পর এবার ভৈরবের ঘটনায় আহত আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপির অবরোধে পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় কিশোরগঞ্জে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিন।
নিহতের নাম মো: আশিক মিয়া (৫০)। পিতার নাম আব্দুল কাদের। তিনি ভৈরব পৌর বিএনপি’র ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য। পেশায় তিনি একজন চা দোকানী ছিলেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরীফুল আলম।

গত মঙ্গলবার বিএনপির অবরোধের প্রথম দিনে ভৈরব-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মুসলিম মোড় এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে টিয়ারশেলের অতিরিক্ত গ্যাসে তিনি গুরুতর আহত হন। ঘটনার পর আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। এর আগে গত মঙ্গলবার কুলিয়ারচরে অবরোধের সমর্থনে মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে রেফায়েত উল্লাহ তনয় (২৩) ও বিল্লাল হোসেন রনি (৪০) নামে বিএনপি’র দুইজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয়সূতি বাসস্ট্যান্ডে তারা দুই দিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছিল। এ সময় পুলিশ পাশ থেকে অতর্কিতে গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

গত মঙ্গলবার একই সময়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এই ঘটনার জের ধরে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের কয়েকটি শেল ছোড়ে। শেলের অতিরিক্ত গ্যাসে মো: আশিক মিয়া (৫০) গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com