দখলবাজি-চাঁদাবাজির কারণে ছাত্ররাজনীতিকে মানুষ আগের মতো আর সম্মানের চোখে দেখে না বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
আজ শনিবার বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে অন্যতম বড় অন্তরায়। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।’
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইদানিংকালে পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজির নেতিবাচক খবর… নিজেদেরকে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে রাখবেন।’
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে প্রথম হাজারের মধ্যেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীগণ মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন। তারা রাজনীতির অনুশীলন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতি প্রত্যাশিত।’
আচার্য বলেন, ‘শুধু সনদসর্বস্ব শিক্ষা দিয়ে দেশ ও দশের উন্নয়ন সম্ভব না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে বাস্তব জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলে তবেই সেই শিক্ষা সফল হয়েছে বলা যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার তাগিদ দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘উপাচার্য ও শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মূল এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর শিক্ষার্থীদের মূল কাজ লেখাপড়া ও জ্ঞান অর্জন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরাও ব্যবসা শুরু করেই নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কীভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে, সেই চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকেন। বড় বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতিরাই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপী হন।’
চাকরিজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাকরিতে ঢুকেই কীভাবে গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া যায়, সেই চিন্তায় বিভোর থাকেন। নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য অনেক সময় দেশ ও জাতির বড় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা হন না।’
প্রসঙ্গত, এবারের সমাবর্তনে অংশ নেন মোট ১৫ হাজার ২১৯ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী ১১ হাজার ৪৪৪ জন, উইকেন্ড প্রোগ্রামের ৩ হাজার ৪৬১ জন, এমফিল ডিগ্রির ৩৪ জন এবং পিএইচডি সম্পন্নকারী ২৮০ জন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য মো. নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য শেখ মো. মনজুরুল হক, কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আখতার, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, সংসদ সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডীনরা।