শনিবার, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

৬ বিদেশী কোম্পানীর পাওনা বিপিসির কাছে ৩০০ মিলিয়ন : ডলার সংক‌টে মজুতও কমছে জ্বালানির

ডেস্ক রিপোর্ট:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩
  • ৬৮ বার পঠিত

ডলারের সংকটের কারণে আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধে লড়াই করছে বাংলাদেশ। যে কারণে দেশে জ্বালানির মজুতও আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও সরকারের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ একাধিক চিঠিতে এমন সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সোমবার চিঠির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দুটি চিঠি পর্যালোচনা করেছে রয়টার্স। এর একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ছয়টি বিদেশি কোম্পানি বিপিসির কাছে ৩০০ মিলিয়নের বেশি পাওনা রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি নির্ধারিত সময়ের তুলনায় কম কার্গো পাঠিয়েছে অথবা সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।

চিঠিতে সরকারকে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় মুদ্রা রুপি ব্যবহারের সুপারিশও করেছে বিপিসি। ডলারের মজুত বাঁচাতেই করা হয়েছে এ সুপারিশ।

রয়টার্সের অনুসন্ধান বলছে, গত এপ্রিলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রথম চিঠিটি দিয়েছিল বিপিসি। সেখানে সরকারের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছিল, মে মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি জ্বালানি আমদানি করা না যায়, সেক্ষেত্রে জ্বালানির মজুত আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাবে। এতে দেশজুড়ে ব্যাপক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে সরবরাহ ব্যবস্থা।

দ্বিতীয় চিঠিটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে ৯ মে। জ্বালানি আমদানির সাম্প্রতিক অবস্থা তুলে ধরে সেই চিঠিতে বিপিসি জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের ঘাটতি থাকায় এবং চাহিদা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ না করতে পারায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সঠিক সময়ে (জ্বালানি তেলের) আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে বিপিসি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। বিপিসি ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করেছে— বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ডলার সরবরাহ করতে পারছে না জাতীয় অর্থনীতির এই শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ডলারের মজুত রক্ষা করাকে আপাতত সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০২১ সালে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গত প্রায় দেড় বছরে বাংলাদেশের ডলারের মজুত হ্রাস পেয়েছে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

রয়টার্সকে মেজবাউল হক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি তেল ক্রয়ের জন্য বিপিসিকে ৫০০ কোটি ডলার এবং তরল গ্যাস আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাকে ২০০ কোটি ডলার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া আমদানি কারকদের ‘লেটার অব ক্রেডিট’ খুলতে যেন অসুবিধা না হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩০০ কোটি ডলারের বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে।

আমরা সবকিছু যৌক্তিকভাবে ম্যানেজের চেষ্টা করছি। বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে চলতে হবে এবং নানা চড়াই-উৎরাই সত্ত্বেও আমরা এখন পর্যন্ত রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রাখতে পেরেছি এখন পর্যন্ত, রয়টার্সকে বলেন মেজবাউল হক।

১৭ কোটি মানুষ অধ্যুষিত বাংলাদেশের মোট চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি মাসে ৫ লাখ ডন পরিশোধিত তেল এবং ১ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে বিপিসি।

আন্তর্জাতিক যেসব ডিলার কোম্পানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বকেয়া ঋণের টাকা পায়, এপ্রিলের চিঠিতে সেসবের একটি তালিকা জানিয়েছিল বিপিসি। তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলো হলো মার্কিন ডিলার প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সিনোপেক, ভিটোল, ইনোক, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্প লিমিটেড, পেট্রোচায়না এবং ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি।

৯ মে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে যে চিঠি দিয়েছিল বিপিসি, সেখান থেকে জানা যায়— আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ডিলার সংস্থার কাছে বিপিসির বকেয়া জমেছে ৪ হাজার ১১০ কোটি (৪১ দশমিক ১০ বিলিয়ন) ডলার।

৯ মে’র চিঠিতে ডলারের মজুত বাঁচাতে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে রুপির ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশও জানিয়েছে বিপিসি।

বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বর ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় রপ্তানি কারকদের ডলারের পরিবর্তে রুপি ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছিল।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com