বরিশাল বিভাগের প্রথম বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল শহীদ সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতালের নির্মাণকাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। শিশুদের চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যার এই হাসপাতালের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। দুই বছরের মধ্যে হাসপাতালটি নির্মাণকাজ শেষ করে চালু হাওয়ার কথা ছিল। এখন সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী জুনে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হাসপাতালের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাবস্টেশনের জন্য দোতলা ভবনের নির্মাণকাজের দরপত্র ও কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছরের মাঝামাঝিতে। এখনো ভবনের নকশা পাওয়া যায়নি। ফলে ভবনের কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। ফলে হাসপাতাল ভবনটির কাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হলেও এর চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হতে আরও অনেক সময় লেগে যেতে পারে।
বরিশাল বিভাগে এত দিন শিশু চিকিৎসার জন্য বড় পরিসরে এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন একমাত্র জায়গা ছিল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড। ওয়ার্ড–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, শিশু ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ৩৬টি শয্যা। অথচ এখানে প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ রোগী ভর্তি থাকছে। শীত মৌসুমে এই চাপ আরও বেড়ে যায়।
তখন নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ ব্যাপক বেড়ে যায়। সারা বছরই এই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা ও ৪২ উপজেলা থেকে আসা অসুস্থ শিশুরা। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় একই শয্যায় দুজন, আবার অনেককেই মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হয়। একইভাবে বহির্বিভাগে লেগে থাকে শিশুরোগীর ভিড়।
এই পরিস্থিতিতে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশাল নগরের আমানতগঞ্জ এলাকায় ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভিতের ওপর প্রাথমিকভাবে চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এই হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম হওয়ার কথা থাকলেও এর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি ছয় বছরেও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে এটাই প্রথম ২০০ শয্যার কোনো বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল। এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য জরুরি বিভাগ ছাড়াও রেডিওলজি, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ, অপারেশন ব্লক, ওষুধ সরবরাহ বিভাগ, থেরাপি বিভাগ, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, প্রশাসনিক ব্লক ও সম্মেলনকক্ষ থাকবে।
গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, চারতলা মূল ভবনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এর রং, জানালার গ্রিল স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক অনেক কাজ এখনো বাকি। পাশেই আলাদা করে দোতলা আরেকটি ভবনে সাবস্টেশন নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।
নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালটির ঠিকাদার বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান। নির্মাণকাজে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা ছিল। এ ছাড়া হাসপাতালের জায়গাটি ছিল একটি ডোবা। সেটি ভরাট করে কাজ শুরু করতে হয়েছে। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। এ জন্য চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়েছে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’
বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কামাল হোসেন হাওলাদার (হাসপাতাল) বলেন, ‘হাসপাতালের চারতলা মূল ভবনের কাজ ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে জুন মাসের মধ্যে শিশু হাসপাতালের সব কাজ সম্পন্ন করে ভবনটি হস্তান্তর করা যায়।’ তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিদ্যুতের সাবস্টেশনের জন্য দোতলা ভবন নির্মাণকাজের সম্প্রতি দরপত্র ও কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো নকশা পাওয়া যায়নি, তাই কাজ শুরু হয়নি। তাই এই কাজের অগ্রগতি খুব একটা নেই।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বড় ছেলে সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল চার বছর। তার নামেই এই হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়েছে। তৎকালীন মন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সরকারি বাসভবনে অবস্থানকালে ঘাতকদের বুলেটে শহীদ হয় সুকান্ত বাবু। ওই রাতে ওই পরিবারের পাঁচ সদস্য শহীদ হয়েছিলেন।