বাংলাদেশে অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে টাস্কফোর্স গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গত কয়েক মাস থেকেই অবৈধ বিদেশিদের বাংলাদেশের আইনে বৈধ হওয়ার নোটিস দিয়ে আসছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। বৈধতা অর্জনের সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি অতিক্রান্ত হওয়ার পর এই টাস্কফোর্স গঠন করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের বহিরাগমন-২ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই টাস্কফোর্স বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে গৃহীত সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন ও পরামর্শ প্রদান করবে। কমিটি এ-সংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান ও প্রয়োজনবোধে সুপারিশ প্রণয়ন করতে পারবে। তবে অবৈধ বিদেশিদের জেলে দেওয়া বা মামলা করবে না টাস্কফোর্স।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বহুসংখ্যক ভারতীয় ও চীনা নাগরিক অবৈধ ভিসায় বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের গত ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে বৈধতা অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হিসেবে গত তিন মাসে ১২ হাজার অবৈধ বিদেশি জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত দুই ধরনের অবৈধ বিদেশি আছেন। কাজের জন্য এক বছরের ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে আর ভিসা নবায়ন করনেনি এমন বিদেশি। আবার ভ্রমণ ভিসায় এসে বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এমন অবৈধ বিদেশি। কাজের জন্য এসে অবৈধ বিদেশির সংখ্যা ৪৫ হাজার। আর ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে ভিসা নবায়ন না করে থেকে যাওয়াদের সংখ্যা লক্ষাধিক। অবস্থানরত অবৈধ বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন ভারতীয় ও চীনের নাগরিক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত টাস্কফোর্সের একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। দেশের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে অবস্থানরত অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে কাজ করছে। দফায় দফায় তাদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু বিদেশি নাগরিক বৈধতা নিয়েছেন আবার অনেকে নিজ দেশে জরিমানা দিয়ে ফিরে গেছেন। তবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে জেল দেওয়ার বিধান থাকলেও সরকার এখনই বিদেশিদের জেল বা বড় কোনো শাস্তি দেবে না। বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের কাজের সুযোগ রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে। তবে বিদেশিদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে।’
রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় এবং অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কঠোর হওয়ার পর ভারতও বাংলাদেশিদের প্রতি কঠোর হয়েছে। ভারত সে দেশে অবৈধভাবে বাস করার দায়ে বাংলাদেশের নয়জন নাগরিককে তাদের ফরেন অ্যাক্টে আটক করেছে। বিষয়টি তারা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ও বহিরাগমন-২ অধিশাখার যুগ্ম সচিব কমিটির সদস্য সচিব ছাড়া কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (কনস্যুলার), জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক-১ অধিশাখার যুগ্ম সচিব, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (ইমিগ্রেশন), ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পাসপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রেশন), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পরিচালক (অপারেশন উইং), প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের পরিচালক (বহিঃসম্পর্ক সংযোগ উইং) এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচালক (এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড লিয়াজোঁ ব্যুরো)।