রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে গত ১ অক্টোবর সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আউটসাইড ক্যাডেট এসআইদের প্রশিক্ষণ চলছিল। প্যারেড বিরতিতে সবাইকে নির্ধারিত নাশতা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণে থাকা এসআইরা নাশতা বর্জন করে হইচই ও বিশৃংখলা শুরু করেন।
ওই সময় সংগঠিত হয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয় করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এসআইরা। পরে প্যারেড থেকে তারা ব্যারাকে ফিরে যান। এ ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় একাডেমিতে।
অভিযুক্ত এসআইদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় ২৫২ এসআইকে বরখাস্ত করা হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় বিবেচনায় এসআই পদে নিয়োগ পান ছাত্রলীগ নেতারা। তারাই মূলত বর্তমান পুলিশ একাডেমিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করেছিলেন।
গতকাল সোমবার পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় থানার ওই চিঠি দেওয়া হয়। এর আগে অভিযুক্তদের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে একাডেমি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঁঞা বলেন, বরাখাস্তের ক্ষেত্রে তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বিচেনায় নেওয়া হয়নি। শৃঙ্খলা ভঙ্গই কারণ।
জানা গেছে, পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে গত ১ অক্টোবর সকাল ৭টা ২৫ মিনিট থেকে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারস ব্যাচ ২০২৩-এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এ সময়ে পূর্বনির্ধারিত মেনু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীর প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু ওই নাশতা না খেয়ে তারা হইচই করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রশিক্ষণরতরা ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেয় করে বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। হইচই করতে করতে নিজেদের খুশিমতো প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান তারা।
প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআই হিসেবে এ ধরনের আচরণ এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলাপরিপন্থী।এ ঘটনায় একডেমির পুলিশ পরিদর্শক মহসিন আলী একাডেমির অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ওই অভিযোগের পর একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেন। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাদের বরখাস্ত করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঁঞা বলেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণেই ডিসচার্জ করা হয়েছে। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হয়নি।’
পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেছেন, ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগেই তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে।’