হৃদরোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ধারণা দিতে প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব হৃদরোগ দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন এ তারিখটি আন্তর্জাতিক ছুটির দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশ্ব হৃদরোগ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়- ’আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য’। স্লোগান- ‘সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যের প্রচারণা, ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়ন’। এবারের নীতিবাক্য- ‘হৃদয় সমাজের জন্য, প্রিয়জনদের জন্য এবং নিজে ব্যবহার করুন।’
হার্ট ফেইলিউর তখনই হয়, যখন হার্ট তার কাজ ঠিকমতো করতে পারে না। হার্টে ফেইল করলে হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হওয়ায় রক্ত বের হতে পারে না। ফলে ফুসফুস, পা এবং পেটে পানি জমে যায়। হার্ট ফেইলিউর হঠাৎ করে হতে পারে। আবার ধীরে ধীরে হতে পারে। হৃৎপিণ্ড প্রতিমিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত ও খাদ্যকণা পৌঁছে দেয়। একই সঙ্গে দেহের দুষিত রক্ত বিশুদ্ধকরণে ফুসফুসে সরবরাহ করে। দেহের প্রতিটি অঙ্গের বেঁচে থাকার জন্য হৃৎপিণ্ডকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হয়। নিজের দরকারি রসদ হৃৎপিণ্ড নিজস্ব তিনটি করোনারি আর্টারির মাধ্যমে নিয়ে থাকে। হৃৎপিণ্ড তার কাজ ঠিকমতো করতে না পারাই হলো হার্ট ফেইলিউর। হার্ট ফেইলিউর বা হৃৎপিরণ্ডর ব্যথা বা কর্মহীনতার জন্য সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অনেকে ভুল করে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টফেইলিউর একই রোগ ভেবে থাকেন। হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিউর আলাদা সমস্যা (যদিও একটির কারণে অন্যটি হতে পারে)। আবার দুটি এক সঙ্গেও হতে পারে। হৃদরোগ যাতে না হয়, সেজন্য যা করতে হবে তা হলো- অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ, ব্যায়ামের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, রক্তে চিনির মাত্রা বেশি এবং অন্যান্য সেসব অবস্থা যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে এবং আমাদের প্রিয়জনদের জীবন হুমকির মুখে ফেলতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা। আর সেসব তথ্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশ্ব হৃদরোগ দিবস উদ্যাপনের আন্তর্জাতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকতে আরও যা করতে হবে তা হলো-
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন : তেল-চর্বিমুক্ত খাদ্য, প্রাণিজ উৎস নয়, ভেষজ উৎস।
জীবনাচরণ পরিবর্তন : নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মমতো খাওয়া, হাঁটা, ঘুমানো।
ব্যায়াম : প্রতিদিন খালি পেটে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট নিয়ম অনুযায়ী হাঁটা।
দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন : নির্মোহ জীবন।
আসক্তিমুক্ত : ধূমপান, মদ্যপান, বা অন্য কোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ না করা।
নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস : রক্তের চিনির মাত্রা যা থাকতে হবে তা হলো- খালি পেটে (FBS) ৫-৬, খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর (PPBS) ৭-৮, তিন মাসের গড় (HbA1c) ৬-৭।
নিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ : রক্তচাপ রাখতে হবে উপরেরটা (Systolic)-৯০-১২০, নিচেরটা (Diastolic) ৬০-৮০।
নিয়ন্ত্রিত ওজন : ওজন নিয়ন্ত্রিত কিনা, তা বোঝার জন্য বিএমআই জানা দরকার। যা ১৮.৬ -২৩.৯ মধ্যে থাকতে হবে। বিএমআই জানার জন্য শরীরের ওজন কেজিকে মিটারের উচ্চতার বর্গ দিয়ে ভাগ করতে হবে। বিষয়টি একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তির শরীরের ওজন ৮০ কেজি, উচ্চতা ১.৬ মিটার, ১.৬-এর বর্গ হচ্ছে ২.৫৬, ৮০-কে ২.৫৬ দিয়ে ভাগ করলে যা হয়, তাই উক্ত ব্যক্তির বিএমআই (৩১.১৭)।
হৃদরোগ সৃষ্টির প্রধান ঝুঁকি : উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে মাত্রা অতিরিক্ত চবি, ডায়াবেটিস, শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, শারীরিক অক্ষমতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি।
লেখক : গবেষক, চিকিৎসক ও চিফ কনসালট্যান্ট