হাড়ে ব্যথা অতিসাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে মাঝবয়সী বা তার বেশি বয়সের নারী-পুরুষের জন্য। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরেরও অনেক পরিবর্তন হয়। শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় মাংসপেশির আকার ও হাড়ের ঘনত্ব কমে আসে। এতে হাতে বারবার আঘাত লাগার প্রবণতা দেখা দেয় এবং হাড় ভেঙে যায়। যদি হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ায় বা আঘাতে ব্যথা হতে থাকে, তবে তা এক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হাড়ে সংক্রমণ, রক্ত চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা ক্যানসারের কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যদি হাড়ের ব্যথার কোনো কারণ খুঁজে না পান, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন এবং ব্যথার কারণ বের করুন।
উপসর্গ : লক্ষণীয় উপসর্গ হলো- বসে থাকলে বা নড়াচড়া করলে অস্বস্তি লাগে। অন্যান্য উপসর্গ নির্ভর করে ব্যথার নির্দিষ্ট কারণগুলোর ওপর। ইনজুরির ক্ষেত্রে- যে হাড়ে ব্যথা হয়, সেখানে আরও কিছু উপসর্গ থাকে। যেমন- স্থানটি ফুলে যাওয়া, দৃশ্যমান ভাঙা বা অঙ্গবিকৃতি, আঘাতের স্থানে কট করে শব্দ হওয়া ইত্যাদি। খনিজের ঘাটটিতে হাড়ের ব্যথার সঙ্গে মাংসপেশি ও টিস্যুতে ব্যথা করে, ঘুমের সমস্যা হয়, পেশি কামড়ায়, অবসাদ ও দুর্বল লাগে। অস্টিওপরোসিসে পিঠে ব্যথা করে, রোগী ন্যুয়ে থাকে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওজন কমে যায়। ছড়িয়ে পড়া বা মেটাস্টাটিক ক্যানসারে বিস্তৃত উপসর্গ থাকে, যা নির্ভর করে ক্যানসারটি কোথায় হয়েছে তার ওপর। এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকব্যথা, হাড় ভেঙে যাওয়া, খিঁচুনি, মাথা ঘোরা, জন্ডিস, ছোট ছোট শ্বাস ফেলা, পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। হাড়ের ক্যানসারে হাড় ভাঙা বেড়ে যায়, ত্বকের নিচে পি- অনুভূত হয়, টিউমারটি নার্ভে চাপ দিলে অসাড় বা ঝিনঝিন অনুভূতি হয়। হাড়ে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে জয়েন্টে ব্যথা হয়, জয়েন্ট কাজ করে না, জয়েন্ট দুর্বল হয়ে যায়। ইনফেকশন হলে স্থানটি লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, গরম হয়ে যায়। অঙ্গ নড়াচড়া করতে সমস্যা হয়, বমিবমি ভাব হয়, ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। লিউকেমিয়ায় শরীর অবসন্ন হয়ে পড়ে, ত্বক ফ্যাকাশে হয়, রোগী ছোট ছোট শ্বাস নেয়, রাতে ঘেমে যায় ও হঠাৎ ওজন কমে যায়।
হাড়ের ব্যথার চিকিৎসা : চিকিৎসক হাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার পর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা করবেন। আক্রান্ত স্থান যতটা সম্ভব বিশ্রামে রাখতে হবে। মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা উপশমে ব্যথানাশক ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়, তাহলে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে পারেন। ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করতে হবে; উপসর্গ চলে গেলেও। প্রদাহ কমাতে সাধারণত কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়।
সার্জারি : ইনফেকশনে হাড়ের কোনো অংশ মরে গেলে সেই অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়। হাড় ভেঙে গেলে ও টিউমার থাকলে সার্জারির প্রয়োজন হয়। মারাত্মক ক্ষেত্রে রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
হাড়ের ব্যথা রোধ করবেন যেভাবে : এ জন্য হাড় শক্তিশালী করা ও হাড়কে সুস্থ রাখা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ করবেন। মদ্যপান পরিহার করবেন। ধূমপান পরিহার করবেন।
যখন ডাক্তার দেখাবেন : মারাত্মক অবস্থার কারণে হাড়ে ব্যথা হতে পারে। এমনকি কোনো জরুরি অবস্থাও হাড়ে মৃদু ব্যথার কারণ হতে পারে। যদি আপনার হাড়ে খুব ব্যথা করে এবং কয়েক দিনে ব্যথা ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।
যদি হাড়ে ব্যথার সঙ্গে ওজন কমে যায়, ক্ষুধা কমে যায় অথবা অবসন্ন ইত্যাদি উপসর্গ থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। ইনজুরির কারণে হাড়ে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। আঘাত হাড়ে ইনফেকশন ঘটাতে পারে।
লেখক : উপাধ্যক্ষ ও সহযোগী অধ্যাপক অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল