শনিবার, ১১:২৮ অপরাহ্ন, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যু নিশ্চিত করল হিজবুল্লাহ

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩ বার পঠিত

লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি।

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ সংগঠনটির মহান ও অমর শহীদ কমরেডদের সাথে যোগ দিয়েছেন; যাদের তিনি ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা আমাদের সহমর্মিতা এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি তার সাথের শহীদদের, যারা তার সাথে এই পবিত্র পথে যাত্রা করেছে বৈরুতে বিশ্বাসঘাতক ইহুদিবাদীদের হামলায়।’

হিজবুল্লাহ আরো জানিয়েছে, যদিও তাদের প্রধান নেতা নিহত হয়েছেন তা সত্ত্বেও গাজা ও ফিলিস্তিনিদের সহযোগিতায় লেবাননের প্রতিরক্ষায় শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের জিহাদ অব্যাহত থাকবে।

এর আগে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) দাবি করে, শুক্রবার বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তখন বিষয়টি নিয়ে হিজবুল্লাহ কোনো মন্তব্য করেনি।

গতকাল বিকেলে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। ওই হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয় হিজবুল্লাহর সদর দফতরকে। হামলার সময় সেখানে ছিলেন হাসান নাসরুল্লাহ।

আইডিএফ আরো বলেছে, হাসান নাসরাল্লাহকে টার্গেট করে সে হামলা চালানো হয়েছিল। ওই হামলায় তার সাথে হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারও নিহত হয়েছেন।

আইডিএফ চিফ অব স্টাফ লেফট্যানেন্ট জেনারেল হারজি হালেভি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘এখানে বার্তা খুব পরিষ্কার। ইসরাইলি নাগরিকদের যারা হুমকি দেবে তাদের কিভাবে খুঁজে বের করতে হয় সেটা আমরা জানি। সেটা উত্তরে, দক্ষিণে কিংবা আরো দূরে হলেও আমরা খুঁজে পাবো।’

আইডিএফ বলেছে, দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর সিনিয়র নেতারা যখন বৈঠক করছিলেন তখন সেখানে হামলা চালানো হয়। দক্ষিণ বৈরুতের এ জায়গাটি হিজবুল্লাহর একটি শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

আইডিএফ তাদের ‘এক্স’ প্লাটফর্মে লিখেছে, হাসান নাসরাল্লাহ পৃথিবীতে আর আতঙ্ক ছড়াতে পারবে না।

ইসরাইলি বাহিনী গত বেশ কয়েকদিন যাবত লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরাইল দাবি করছে, লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে কাবু করতে তাদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে।

হিজবুল্লাহকে ‘সর্বোচ্চ শক্তি’ দিয়ে আঘাত করার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরাইল পুরোদমে হামলা শুরুর সপ্তাহ খানেক আগে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

দুটি আলাদা ঘটনায় হাজার হাজার পেজার এবং রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হওয়ায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

হাসান নাসরুল্লাহর (৬৪) জন্ম ১৯৬০ সালে। বেড়ে উঠেছেন বৈরুতের পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের বুর্জ হামুদ এলাকায়। বাবা আবদুল করিম ছিলেন একজন সাধারণ সবজি বিক্রেতা। তার ৯ সন্তানের মধ্যে নাসরুল্লাহ ছিলেন সবার বড়।

১৯৭৫ সালে লেবানন গৃহযুদ্ধের মুখে পড়লে হাসান নাসরুল্লাহ শিয়া মুভমেন্ট ‘আমাল’–এ যোগ দেন। পরে ১৯৮২ সালে আরও কয়েকজনের সাথে দলটি থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ১৯৮৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কথা জানায় হিজবুল্লাহ। তাতে যোগ দেন হাসান নাসরুল্লাহ।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর প্রধান হন নাসরুল্লাহ। এর আগে ইসরাইলের এক হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হন তার পূর্বসূরি আব্বাস আল–মুসাবি। হিজবুল্লাহপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর মুসাবি হত্যার প্রতিশোধ নেয়া ছিল হাসান নাসরুল্লাহর প্রথম কাজ। সে অনুযায়ী ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট হামলার নির্দেশ দেন তিনি।

নাসরুল্লাহ লেবাননের দক্ষিণে ইসরাইলি বাহিনীর সাথেও তার যোদ্ধাদের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। একপর্যায়ে ২০০০ সালে সেখান থেকে পিছু হটে দেশে ফিরে যান ইসরাইলি সেনারা। তবে নাসরুল্লাহর ব্যক্তিগত ক্ষতিও কম হয়নি। ইসরাইলি সেনাদের সাথে লড়াইয়ে প্রাণ দিতে হয় তার বড় ছেলে হাদিকে।

নাসরুল্লাহর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের পাশাপাশি ইরাক ও ইয়েমেনের মিলিশিয়াদের প্রশিক্ষণগত সহায়তা দিয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যে ইরানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের এক সমৃদ্ধ ভান্ডার রয়েছে হিজবুল্লাহর।

দখলকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সেনাদের তাড়াতে প্রথমে একটি মিলিশিয়া দল হিসেবে গড়ে উঠেছিল হিজবুল্লাহ। পরে এ দলকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী এক বাহিনীতে রূপ দেন নাসরুল্লাহ। সংগঠনটি এখন দেশের রাজনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী একটি শক্তি।

সর্বশেষ হিজবুল্লাহ–ইসরাইল উত্তেজনা বেড়ে যায় গত বছরের ৮ অক্টোবর থেকে। ওই দিন ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের রকেট হামলার জের ধরে গাজায় নজিরবিহীন তাণ্ডব শুরু করে দেশটি। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইসরাইলের অভ্যন্তর ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ।

সূত্র : এএফপি, বিবিসি ও অন্যান্য

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com