বৃহস্পতিবার, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

হামাসের প্রশংসায় লিফশিৎজ, জানালেন ইসরাইল তাদেরকে ‘বলির পাঁঠা’ বানিয়েছে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৩৫ বার পঠিত

গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মুক্তি দেয়া ইসরাইলি নারী ইয়োশেভেদ লিফশিৎ হামাসের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে জানিয়েছেন, ইসরাইল সরকারই তাকে এবং তাদের মতো লোকদের ‘বলির পাঁঠা বানিয়েছে। তিনি আজ মঙ্গলবার এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। এ সময় হামাসের হাতে তার বন্দী হওয়া, বন্দী অবস্থায় গাজায় পাড়ি দেয়া, সেখানে তার অবস্থান, অবস্থানের সময় তার সাথে করা আচরণের বর্ণনা করেন। তিনি হামাসের সুড়ঙ্গকে মাকড়শার জাল হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘স্পাইডারওয়েব অব টানেলস।’ তিনি জানান, হামাস তাদের সাথে খুবই আন্তরিক আচরণ করেছে।

লিফশিৎজ (৮৫) এবং নুরিত কুপার (৭৯) সোমবার কাতার ও মিসরের মধ্যস্ততায় সোমবার মুক্তি পান। এর আগে গত শুক্রবার আরো দুই মার্কিনিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস।

সংবাদ সম্মেলনে লিফশিৎজ ৭ অক্টোবর কিবুজে হামাসের হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এমন এক নরকের মধ্য দিয়ে গেছি, যা কখনো কল্পনাও করিনি। তারা [হামাস] কিবুজে তাণ্ডব চালিয়েছিল। আমাদের সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না।’

তিনি বলেন, মটরসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আমার দুপা ছিল একদিকে, মাথা ছিল অন্যদিকে।’ তিনি বলেন, অপহরণকারীরা ‘মাঠের ওপর দিয়ে গাজার দিকে উড়ে ছুটছিল।’ তিনি বলেন, এ সময় তাকে অপহরণকারীরা লাঠি দিয়ে তাকে প্রহার করে, তবে ‘হাড় ভাঙেনি।’ অবশ্য ‘এত জোরে পিটিয়েছিল যে আমার দমই বন্ধ হয়ে আসছিল।’

তিনি বলেন, তারা তার ঘড়ি ও অলঙ্কার খুলে নিয়েছিল।

তিনি বলেন, গাজায় তাকে একটি টানেলের নেটওয়ার্কের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয। তিনি একে ‘মাকড়শার জাল’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, এসব টানেলের মধ্য দিয়ে তাকে ‘কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হয়েছিল। এগুলোর মেঝ ছিল স্যাঁতস্যাঁতে।

সংবাদ সম্মেলনে তার সব কথা বোঝা যাচ্ছিল না। তবে তার মেয়ে শ্যারন তাকে সহায়তা করেন।

লিফশিৎজ বলেন, প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা পর তারা একটি বিশাল হলঘরে পৌঁছেন। সেখানে আরো প্রায় ২৫ জন বন্দীকে জড়ো করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের বলল যে তারা পবিত্র কোরআনে বিশ্বাস করে এবং আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না। তারা টানেলে থাকায় তারা আমাদের কিছু শর্ত দেয়।’

তবে দিনের শেষ ভাগে তাকে এবং কিবুজের আরো চার বন্দীকে আলাদা একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসা সহকারী ও একজন চিকিৎসক আসেন।’ তারা বন্দীদের ম্যাট্রেজে অবস্থান করতে বলেন। ওই ডাক্তার এক দিন পর পর এসে তাদের দেখে যেতেন এবং ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করতেন।

তিনি জানান, ‘চিকিৎসা ছিল ভালো।’
তিনি বলেন, আটককারীরা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করেছিল। তিনি বলেন, ‘তারা টয়লেট পরিষ্কার করত, আমাদের নয়। তারা ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে ভীত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের প্রতি খুবই উদার ছিল। তারা আমাদের পরিচ্ছন্ন রেখেছে। তারা আমাদের প্রতিটি বিষয়ে যত্নশীল ছিল। সেখানে অনেক নারী ছিল, তারা নারীদের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন ছিল, তারা প্রতিটি ব্যাপারে যত্ন নিয়েছে।’

আটককারীদের সাথে কথাবার্তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে লিফশিৎজ বলেন, তারা কথা বলার চেষ্টা করেছিল। তবে ‘আমরা তাদেরকে বলেছিলাম, কোনো রাজনীতি নয়… আমরা রাজনীতির কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।তারা সব ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলেছে। তারা আমাদের প্রতি ছিল বন্ধুপ্রতীম। তারা আমাদের সকল প্রয়োজন মেটানোর ব্যাপারে যত্নশীল ছিল। এটি অবশ্যই তাদের কৃতিত্ব। তারা যা খেয়েছিল, আমরা তাই খেয়েছি।’ তিনি দিনের এক বেলা খাবারের কথা সম্পর্কে বলেন, ‘রুটি, পনির ও শশা।’

তিনি বলেন, হামাসের পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার জ্ঞানের অভাব ‘আমাদের সবচেয়ে বেশি আহত’ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নেতাদের বলির পাঁঠা হয়েছি।’
তিনি বলেন হামলার আগে হামাস সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। তারা সীমান্তের ওপর দিয়ে বেলুন উড়িয়েছে, যাতে আমাদের খেতে আগুন ধরে। কিন্তু আইডিএ [ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স] এগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি।’

তিনি বলেন, তারপর সাবাতের সকালে হঠাৎ করে, যখন সবকিছু শান্ত ছিল, তখন ভারী গোলাবর্ষণ হলো। সীমান্ত বেড়া ভেঙে পড়ল, কিবুজের ফটক খুলে গেল। খুবই খারাপ, খুবই কঠিন। আমার স্মৃতিতে ওইসব ছবি পরিষ্কার রয়েছে।

হামাসের সদস্যদের ইসরাইলি নিরাপত্তা বাধা ডিঙানো প্রশ্নে তিনি বলেন, বিপুল সংখ্যক লোক বেড়ার কাছে চলে আসে। এতে খরচ হয়েছে ৪৯৩ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু কোনোই কাজে আসেনি।

তিনি বলেন, তার আটককারীরা বন্দীদের আটক করার জন্য অনেক আগে পরিকল্পনা করে রেখেছিল। এমনকি তারা তাদের জন্য শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পর্যন্ত মজুত করে রেখেছিল।

মুক্তির পর রেড ক্রিসেন্ট অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার আগে দৃশ্যত এক আটককারীর সাথে হ্যান্ডশেক করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আটককারীরা তাদের সাথে ‘সংবেদনশীলতার সাথে’ আচরণ করেছে।

উল্লেখ্য, হামাসের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের লোগো-সংবলিত বুলেট প্রুফ জামা পরিহিত লম্বা বন্দুকধারী এক ব্যক্তি লিফশিৎজকে আইসিআরসির সাদা গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। গাড়িতে প্রবেশ করার আগে তিনি তার হাতটি বাড়িয়ে দেন ওই হামাস সদস্যের দিকে। তারপর বলেন, ‘সালাম (শান্তি)।’

লিফশিৎজের স্বামী এখনো হামাসের হাতে বন্দী রয়েছে। তবে তাকে রাখা হয়েছে অন্য স্থানে।

হামাসের হাতে অন্তত ২২২ জন বন্দী রয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে বন্দী করা হয়।

এদিকে হামাসের সাবেক নেতা খালিদ মেশাল স্কাই নিউজকে বলেছেন, ইসরাইল গাজায় হামলা বন্ধ করলে তারা সব বেসামরিক বন্দীকে মুক্তি দেবে। তিনি আরো জানান, গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২২ বন্দী নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরাইলের কারাগারগুলোতে আটক ছয় হাজার বন্দীকে মুক্তি দিলেই কেবল তাদের হাতে আটক যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে।

সোমবার রাতে যে দুই বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তারা ইসরাইলের নাগরিক এবং বয়স্ক। মূলত স্বাস্থ্যগত কারণে তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের নাম যথাক্রমে নুরিত কুপার (৮০) ও ইয়োচেভেদ লিফশিটজ (৮৫)। রাফাহ ক্রসিং দিয়ে তাদেরকে প্রথমে মিসরে নেয়া হয়। সেখান থেকে বিমানযোগে তাদেরকে তেল আবিবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সুস্থ আছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা পরিবারের সাথে মিলিত হয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্দীদের মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানান, যুক্তরাষ্ট্র ‘হামাসের দুই ইসরাইলি নাগরিককে মুক্তিদানকে স্বাগত জানায়। আমরা গাজায় আটক বাকি সব বন্দীর মুক্তি নিশ্চিত করতে সবকিছু করব।’

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, দুই ইসরাইলি নারীকে মুক্তি প্রদান করায় যুক্তরাষ্ট্র ‘খুবই সন্তুষ্ট।’

তিনি এমএসএনবিসিকে সোমবার বলেন, ‘এই দুই বন্দীকে (ইসরাইলি নাগরিক) মুক্তিতে আমরা নিশ্চিতভাবেই খুবই সন্তুষ্ট। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার পর থেকে দুই আমেরিকান নাগরিকের মুক্তির পর এই মুক্তি মিলেছে।’

হামাস বন্দী মুক্তি অব্যাহত রাখলেও ইসরাইল তাদের হামলা বন্ধ করেনি। বরং তারা হামলা আরো জোরদার করেছে।

হামাস গত শুক্রবার জুডিথ রানান এবং তার মেয়ে নাতালি রানান নামে দুই মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দিয়েছিল। কাতার এতে মধ্যস্ততা করেছিল।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে ‘কয়েক দিনের টানা যোগাযোগের পর’ তাদেরকে মুক্তি দেয়া হয়।

হামাসের মুখপাত্র আবু ওবায়দা এর আগে বলেছিলেন, হামাস জুডিথ ও নাতালির সাথে আরো দুই বন্দীকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল তাদের গ্রহণ করেনি। তবে ইসরাইল একে ‘মিথ্যা প্রপাগান্ডা’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

সূত্র : আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল এবং অন্যান্য

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com