দেশের জেলা ৬৪টি। এর মধ্যে ১১টিতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রায় সারা দেশেই মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই পরিস্থিতি, যা হাড় কাঁপিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আছে কুয়াশার প্রকোপ।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ খুব কষ্টে আছেন। শীত উপেক্ষা করেই তাদের কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। আগের মতো কাজও পাচ্ছেন না তারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালাসহ ভাসমান ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার কমে গেছে।
খড়কুটো জ্বালিয়ে তাদের শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়ছে। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে শীতজনিত নানা রোগ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় নবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও চুয়াডাঙ্গায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় শনিবার ভোরে ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় দিনেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আর সন্ধ্যার পর ঘনত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দিনেও ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। অদূরের মানুষজন, বস্তু বা যানবাহন দেখা যাচ্ছে না।
দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকার বাইরে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছে নৌযান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
আবহাওয়াবিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, মোটা দাগে ছয়টি কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে-সবোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসা; বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপক এলাকা সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত হতে না পারা; উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব, জেড স্ট্রিম বা ঊর্ধ্বাকাশের বায়ু নেমে আসা এবং হিমালয়ের দিক থেকে আসা শীতল বায়ুপ্রবাহ; সূর্যের স্বল্পমেয়াদি কিরণকাল; দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাব; বাতাসের আর্দ্রতা।
এসব কারণ মিলিয়ে ব্যারোমিটারের পারদ শৈত্যপ্রবাহের পর্যায়ে নেমে না আসা সত্ত্বেও শীতের অনুভূতি অনেক বেশি, যা মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি তৈরি করছে। তবে সোমবার (কাল) ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষক বুয়েটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, পৌষ-মাঘে বাংলাদেশে শীত থাকাটাই স্বাভাবিক। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আবহাওয়াসংক্রান্ত বাস্তবতা বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে বিদ্যমান লঘুচাপের একটা দায় আছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তবে এটা ঠিক যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য পরিস্থিতির সঙ্গে আবহাওয়া ও জলবায়ুর চরম ভাবাপন্ন অবস্থা তৈরির সম্পর্ক আছে। এর মানে হচ্ছে, আবহাওয়া চরম বৈরী আচরণ করবে। যখন গরমকাল থাকবে, তখন অসহনীয় গরম পড়বে। অনাবৃষ্টি তৈরি হলে তা চরম খরায় রূপ নেবে।
অতিবৃষ্টি হলে অল্পসময়ে এক-দুই মাসের বৃষ্টি হবে। আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহে চরম শীতের অনুভূতি থাকবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মেলানো যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি সম্পর্কিত করা যাচ্ছে না।
আবহাওয়া বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে একে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। এছাড়া ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তা মাঝারি আকারের এবং এর নিচে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত নামলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়। আর ৪ ডিগ্রির নিচে নামলে তা অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহে রূপ নেয়।
অন্যদিকে গরমকালে ঘর শীতল করতে যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করা হয় তাতে আরামদায়ক পরিস্থিতি অনুভবের জন্য সাধারণত ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ব্যবহার করা হয়। বিদায়ি বছরে বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টির পর সরকারিভাবে এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রিতে ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ২৪ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা নামলেই শীত বা নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা অনুভূত হয়। শনিবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে পড়ে। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল অঞ্চলে।
অর্থাৎ ওইসব এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) মতে, প্রায় সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি আছে। বিশেষ করে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে এই পরিস্থিতি বেশি। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ৮.৪ থেকে ১২.৩ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও এর অনুভূতি আছে এলাকাভেদে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে।
অন্যদিকে শনিবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বঙ্গোপসাগরের পার কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৬ তাপমাত্রা যেহেতু গরম নয় বা ২৪ ডিগ্রি শীত অনুভবের জন্য যথেষ্ট, তাই দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও গরম তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়।
তবে সুখবর হচ্ছে, যেহেতু সাগরপারের এলাকায় তাপমাত্রা বাড়ছে, তাই ধীরে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে উষ্ণ আর্দ্রতা মিশ্রিত গরম বায়ু সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। এর ফলে সোমবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। এরপর কয়েকদিনের মধ্যে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি কমতে পারে।
যে ৬টি কারণে বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহেও তীব্র শীতের অনুভূতি তার মধ্যে প্রথমেই আসে সবোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির কম। বরিশাল বিভাগের খেপুপাড়ায় শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫.২ আর সর্বোচ্চ ১২.৩ ডিগ্রি। এখানে পার্থক্য প্রায় ১৩ ডিগ্রি।
অর্থাৎ ওই এলাকায় শীতের অনুভূতি কম বা হাড় কাঁপানো অবস্থায় নেই। কিন্তু ঢাকায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮.৮ আর সর্বনিম্ন ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পার্থক্য ৭ ডিগ্রির একটু বেশি। অন্যদিকে শনিবার ঢাকায় সারা দিনই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দুপুর দেড়টার দিকেও হালকা কুয়াশা ছিল রাজধানীতে। অন্যদিকে শীতকালে এমনিতেই উত্তর মেরুর দেশগুলোয় সূর্যের কিরণকাল থাকে অল্প।
বাংলাদেশের মতো দেশে ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ করার মতো কিরণ পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে সেই সুযোগ ১ থেকে ২ ঘণ্টার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু বাংলাদেশ নয়, পাকিস্তানের মরু এলাকাসহ ভারতের হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ হিমালয়ের পাদদেশীয় এলাকারই একই অবস্থা। দক্ষিণ এশিয়ার এই ব্যাপক এলাকা সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত হতে পারছে না।
এ বাস্তবতায় পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটিয়েছে হিমালয়ের দিক থেকে আসা শীতল বায়ু। আছে উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাব। জেড স্ট্রিম বা ঊর্ধ্বাকাশের বায়ু শীতল। সেটিও নেমে এসেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে। সাধারণত সাগরের কোনো অংশের পানির উষ্ণতা ২৬ ডিগ্রি পার করলে ওই এলাকায় লঘুচাপ তৈরি হয়।
ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এলাকা থেকে দক্ষিণদিকে বিষুবরেখা বা জিরো ডিগ্রি লাইন বরাবর এলাকাকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর বলা হয়। ওই এলাকায় লঘুচাপ অবস্থান করায় আশপাশের আর্দ্রতা (লঘুচাপের) কেন্দ্রের দিকে চলে যাচ্ছে। আর এই সুযোগে শূন্যস্থানে হিমালয়ের দিক থেকে আসা উত্তর বা উত্তর-পূর্বদিকের শীতল বায়ু স্থলভাগে প্রভাব বিস্তার করছে। আর এই শীতল বাতাসে আর্দ্রতা অনেক বেশি। তাই শীতের অনুভূতিও বেশি, যা অল্পতেই তীব্র শীতের অনুভূতি তৈরি করছে।
বিএমডির তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকার তাপমাত্রা নিম্নমুখী। শুক্রবার ১২ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা থাকলেও শনিবার তা সাড়ে ১১তে নেমে আসে। সকাল ৯টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার। ঢাকার বাইরে বাতাসের গতি, কুয়াশার প্রকোপ আরও বেশি বলে জানা গেছে। আকাশও আংশিক মেঘলা। ফলে কুয়াশা আর মেঘ ভেদ করে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাতে পারছে না।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
বুড়িচং (কুমিল্লা) : শনিবার প্রচণ্ড শীতে আলী মিয়া (৪৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার দোকানীতুলা গ্রামের আলী আছমতের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বুড়িচংয়ে কামারের কাজ করতেন। দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির কাজী হাসান উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, একটি দোতলা ঘর থেকে চাদর মোড়ানো শরীরে জবুথবু অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রচণ্ড ঠান্ডায় তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছি।
নবাবগঞ্জ : কলাকোপার বড় সমসাবাদের সামছুল হকের মেজ ছেলে মো. ফজল খান বেপারী (৪৫) শনিবার সকালে ইছামতি নদীতে গোছল করতে নামলে প্রচণ্ড শীতে মারা যান। স্থানীয়রা জানান, ফজল দীর্ঘদিন মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন।
কুড়িগ্রাম : টানা শীতের কারণে হাসপাতালে বেড়েছে শ্বাসকষ্ট, নিউমেনিয়া ও ডায়রিয়াজনিত রোগীর সংখ্যা। শহরের কাশিয়াবাড়ি এলাকার রিকশাচালক চটকু মিয়া বলেন, ‘ভোররাত স্কুলের ছওয়াগুলাক (বাচ্চাগুলোকে) উবাইতে উবাতে (নিয়ে যেতে) বুকোত সর্দি জমছে।’ তেমনি কৃষি ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে শীতে কাহিল হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। হিম ঠান্ডায় হাতের আঙুল অবশ হয়ে যায়।
বিশেষ করে আলুখেত ও বীজতলায় যারা কাজ করছেন তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মুর্শেদ জানান, শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোর ইনডোর ও আউটডোরে ১০ ভাগ রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট, নিউমেনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় দুদিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। শনিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগের দিন একই সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেছে যানবাহন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। হিম বাতাসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ আর ছিন্নমূল মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট ও শীতজনিত কারণে আব্দুল্লাহ নামের এক মাস বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে। এদিকে আলমডাঙ্গা উপেজলার পুটিমারী গ্রামে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আগুন পোহানোর সময় তাহারন নেছা (৭০) নামে একজন দগ্ধ হয়েছেন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তার ৬০-৭০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
বগুড়া : জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত। শনিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ বেড়েই চলেছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। তারা বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভিড় করছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলছেন, গত কয়েকদিনে সাড়ে ৫৯ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। শিগগিরই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ২৫ হাজার কম্বল ও নগদ অর্থ আসবে।
রাজবাড়ী : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে ভোর ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ফেরি বন্ধ ছিল। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক আলীম দাইয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে গেছে।
টাঙ্গাইল : জেলা সদর, আকুর টাকুরপাড়া, কাগমারা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতের কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ গরম পোশাক পরে জরুরি কাজ সারছেন। অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আদালত প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় খোলা আকাশের নিচে শীতের পোশাকের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। দূর-দুরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা তাদের চাহিদা, পছন্দ ও সামর্থ্য অনুযায়ী শীতের পোশাক ক্রয় করছেন। সদর উপজেলার ছোট বাসালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ ফজল হক বলেন, পুরোনো যে কাপড় ছিল তা দিয়ে আর শীত মানে না। তাই গরম কাপড় কিনতে এসেছি। ব্যবসায়ী হুমায়ন শেখ বলেন, আমরা চিটাগাং থেকে গরম কাপড়ের লট এনে বিক্রি করি। আগে যে লট তিন হাজার টাকা দিয়ে কিনতাম সেটির দাম এখন ১২ হাজার টাকার উপরে। তাই আগের তুলনায় লাভ অনেক কম হয়।
দাগনভুঞা : শীতে ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছে মানুষ। মৌসুমি ফেরিওয়ালারা মাথায় করে, আবার কেউ কেউ সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে লেপ-তোশক বিক্রি করছেন। ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা সফিউল হক বলেন, বিকাল হলেই ব্যবসা জমে উঠে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী শীতের কাপড় আনি। দোকানে ৮০ টাকা থেকে ৮শ টাকার মধ্যে শীত কাপড় রয়েছে।
রাঙামাটি : শীতবস্ত্রের অভাবে গ্রামাঞ্চলের দুস্থ ও অসহায় মানুষকে সকাল সন্ধ্যায় খড়কুটো ও লাকড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়। জেলা ও উপজেলা সদরগুলোতে কিছু লোকজনের মাঝে সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও দুর্গম এলাকায় তৎপরতা কম।
মেহেরপুর : শনিবার মেহেরপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৪ ডিগ্রি। জেলার পর্যটনকেন্দ্র মুজিবনগর স্মৃতি প্রকল্প, আমঝুপি ও ভাটপাড়া কুঠিবাড়িতে ৪ দিন ধরে কোনো পর্যটকের দেখা নেই। এতে পর্যটন এলাকার শতাধিক ভাসমান ব্যবসায়ী বেকার হয়ে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে এদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। মুজিবনগর পিকনিক স্পটের কেয়ারটেকার আলামিন হোসেন বলেন, এই সময় রোজ বাসভর্তি দর্শনার্থী এখানে পিকনিক বা শিক্ষা সফরে আসত। কয়েকদিন ধরে পর্যটকশূন্য।
ফরিদপুর ও ভাঙ্গা : শনিবার ভোর থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, বেলা ১১টায় ফরিদপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষ। দুপুরে নগরকান্দা সদর বাজারে কেনাকাটার জন্য এসে দল বেঁধে রাস্তার পাশেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। প্রচণ্ড শীত, ঘনকুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে বয়স্ক ও শিশুদের খুবই সমস্যা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) : ষাটোর্ধ হাবিবুর রহমান কালাইয়ের নিজস্ব জমিজমা নেই। উপজেলার যোগানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কাপাশিয়া গ্রামে মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে একটি ছোট ঘর তৈরি করে স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন। জীবিকা নির্বাহ করতে কনকনে শীত উপেক্ষা করে ঘর থেকে কাজের জন্য বের হতে হয় তাকে। তার মতো এলাকার সব দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা একই। হাবিবুর রহমান বলেন, একটা ছেলে আছে। খোঁজখবর নেয় না। ছোট মেয়ের জামাইয়ের বাড়িতে ঘর তুলে থাকি। কনকনে ঠান্ডায় শরীর চলে না। তবুও জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয়।
রাজশাহী : শনিবার ভোর ৬টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এটি চলতি মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে ২৯ ডিসেম্বর ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রাম জেলাত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, ইতোমধ্যে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৩৮ হাজার কম্বল ৯ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে নতুন করে ১ লাখ ১৪ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।