স্বাক্ষর জাল করে সংসদ সদস্য শাহে আলমের পক্ষে পত্রিকায় প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ এনে বানারীপাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানসহ ৫ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন অপর আওয়ামী লীগ নেতা।বুধবার (১৮ অক্টোবর) বরিশালের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার দাস।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য বিপিআইতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মামুন অর রশীদ।বিবাদীরা হলেন- বানরীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত লাল কুন্ডু, সহসভাপতি মোস্তফা সরদার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদা, মামুনুর রশিদ স্বপন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন।প্রকাশিত ভুয়া সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ নামায় তিনি (বাদী) ও মামলার ৫ জন সাক্ষী কখনো স্বাক্ষর দেননি। অথচ সেখানে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে।
সাক্ষীরা হলেন- বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম শান্ত, সদস্য সেলিম সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খাঁ ও মিজানুর রহমান মিঠু।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. মামুন অর রশীদ বলেন, বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির কিছু সদস্যের স্বাক্ষর জাল করে একটা প্রতিবাদ গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগ দিলে, আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে প্রেরণ করেছেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. শাহে আলমের পক্ষে একটি লেখায় স্বাক্ষর জাল করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে কমিটির অপর চার সদস্য।
এ অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় কমিটির সদস্য মো. শাহে আলমসহ কতিপয় ব্যক্তিকে কারণ দর্শানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। সে মোতাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে।
কিন্তু পরবর্তীতে অভিযোগকারীদের স্বাক্ষর জাল করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করেছে। যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। তাই অভিযোগকারী চার আওয়ামী লীগ নেতা স্বাক্ষর জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিযোগ পত্রে।
এদিকে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ. জলিল ঘরামী। এ বিষয়ে তিনি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আ. জলিল ঘরামীর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হুদাসহ কতিপয় ব্যক্তি তার বসতঘরে যান এবং ভুল তথ্য উপস্থাপন করে একটি স্বাক্ষর নেয়।
পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে তার স্বাক্ষর ব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। দল বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে একমত নেই জানিয়ে অভিযোগে তিনি শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
এর আগে, ১৭টি বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহে আলমকে সম্প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। এরপর বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম-এমপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদককে শোকজের পর এমপি শাহে আলমের বিরুদ্ধে প্রকাশিত ভুয়া সংবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ নামা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।