পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলাটি সুপারির জন্য বিখ্যাত হওয়ায় এই উপজেলায় রয়েছে সারি সারি সুপারির বাগান। আর এসব বাগানে সুপারির গাছ থেকে ঝরে পড়া সুপারির খোল (পাতা) স্থানীয় ভাষায় ‘বাইল’ কেউ কেউ জ্বালানি হিসেবে, আবার কেউ বাড়ির আঙিনায় বেড়ার কাজে ব্যবহার করেন। তবে বেশির ভাগ খোলই আবর্জনার মতো পড়ে থাকত যত্রতত্র। তবে এত দিন সুপারির এসব খোলকে ফেলনা হিসেবে ধরা হলেও এখন এটি অর্থকরী পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।
বাজারে কেনা ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ওয়ানটাইম তৈজসপত্রের বিকল্প হিসেবে এই সুপারির খোল দিয়ে এখন স্বরূপকাঠিতে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব নানা ধরনের তৈজসপত্র। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন উজ্জল ফেলনা শুকনো সুপারির খোল দিয়ে নানা ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এসব তৈজসপত্র তৈরির জন্য উজ্জল ওই ইউনিয়নের মাহমুদকাঠিতে ‘এ আর ন্যাচারাল প্লেট’ নামের একটি কারখানা স্থাপন করেছেন। তার কারখানায় সুপারির শুকনো খোলের গোড়ার অংশ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন সাইজের থালা, নাশতার প্লেট, বাটি, ট্রেসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র।
আর ওই কারখানায় উৎপাদিত এসব তৈজসপত্র চালান দেওয়া হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
সরেজমিনে ওই কারখানায় গিয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা উজ্জলের সঙ্গে। তিনি জানান, ইউটিউব দেখে উজ্জ্বল এ কাজে উৎসাহিত হয়ে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে খুলনা থেকে মেশিন সংগ্রহ করেন। সেই মেশিন দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উপজেলার স্বরূপকাঠি-কুড়িয়ানার সড়কের পাশে মাহমুদকাঠি হাসপাতালের কাছেই গড়ে তোলেন ‘এ আর ন্যাচালার প্লেট’ নামে ছোট্ট একটি কারখানা।
তার কারখানায় এখন নারী-পুরুষ মিলিয়ে আটজন কর্মচারী রয়েছেন। হ্যান্ডমাইক হাতে উজ্জ্বল এলাকায় ঘুরে ঘুরে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন সুপারির খোল বিক্রি করে অর্থ আয়ের জন্য। স্থানীয় লোকজন তার কারখানায় এসে সুপারির খোল বিক্রি করে যায়।
এ ছাড়া সুপারির খোল সংগ্রহের জন্য আলাদা কর্মী নিয়োগ দেওয়া আছে তার। ওই সব কর্মী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ঝরে পড়া শুকনো সুপারি খোলের গোড়া কেটে প্রতিপিস এক টাকা করে ক্রয় করে কারখানায় নিয়ে আসেন।
খোলের সেই গোড়ার অংশকে ধুয়ে পরিষ্কার করে তা দিয়ে মেশিনে তৈরি করা হচ্ছে হরেক ডিজাইনের নানা সাইজের তৈজসপত্র। প্রতিটি বড় সাইজের পণ্য আট টাকায় এবং ছোট সাইজের পণ্য চার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের মাধ্যমে একদিকে যেমন অর্থ উপার্জন হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশেরও উপকার হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা আকরাম হোসেন উজ্জ্বল জানান, তিনি তার সামান্য পুঁজি দিয়ে ছোট মেশিন কিনে স্বল্প পরিসরে এই কারখানা তৈরি করেছেন। তার কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি তাকে অর্থনৈতিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া হয়, তাহলে তিনি তার কারখানার পরিসর আরো বৃদ্ধি করতে পারবেন। এতে করে এলাকার বহু লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং পণ্য বিক্রির মাধ্যমে বহু অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহেদুর রহমান বলেন, পরিবেশবান্ধব এসব জিনিস তৈরি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। যার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ওই উদ্যোক্তার সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সুত্রঃ কালের কন্ঠ