দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়েছে। একই এলাকায় মধ্যরাতে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় এসব কথা বলা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৯ মে) আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে দুদিন আগে একটি ঘূর্ণিচক্রের (সাইক্লোনিক সার্কুলেশন) সৃষ্টি হয়, যা লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। লঘুচাপ তৈরির পর সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ধাপ পেরিয়ে তবেই ঘূর্ণিঝড় হবে। মঙ্গলবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এর গতি-প্রকৃতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
ভারতীয় আবহাওয়া অফিস তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, এটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর বুধবার (১০ মে) ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পেতে পারে। প্রথম দিকে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হলেও ১১ মে ঘূর্ণিঝড়টি ধীরে ধীরে বাঁক নিয়ে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রাজশাহী, নেত্রকোনা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ এবং দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আরও দুদিন এমন তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। শনিবারের পর থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া পূর্বাভাসের মডেল বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা ভোলা থেকে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা আছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের অগ্রভাগ উপকূলে আঘাত শুরু করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে (রোববার) দুপুরের পর থেকে মধ্যরাত। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৪ মে দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা। ঘূর্ণিঝড় মোখার পেছনের অর্ধেক অংশ উপকূলে অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ১৫ মে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত। উপকূলে আঘাত করার সময় এটি অত্যন্ত তীব্র হতে পারে। এদিকে সাগরে যখন ঝড়ের জন্ম হচ্ছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নামজুল হক বলেন, তিনটি কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এক. এপ্রিল ও মে মাস দেশের উষ্ণ মাস। গত এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ দুই মাসের বৈশিষ্ট্যের কারণেই এখন গরম বেশি। গরম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো কম বৃষ্টি হওয়া। মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু বৃষ্টি হলেও গত দুদিন বৃষ্টি একেবারেই কম। আর এ কারণে গরম বাড়ছে।
গরম বেড়ে যাওয়ার তৃতীয় কারণ হিসেবে সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সাগর থেকে হাওয়া আসছে না; বরং ভূপৃষ্ঠের হাওয়া সাগরের দিকে ছুটছে। আর এ কারণে গরম বেশি।