আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আছে ষড়যন্ত্রের শঙ্কা। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের লোকজন নানা কথা বলছে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে চলতি বছরই নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকার নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দিলে চলতি বছরই নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামতে পারে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচন আদায় করা হবে।
গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতা। গত রবিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় আগামী ৫ আগস্ট সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত ১৪-১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তারা চায় চলতি বছরেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিক। কারণ দীর্ঘদিন দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। কিন্তু সরকার নির্বাচনের দিকে না গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যস্ত। তারা সংস্কার ও নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে সরে যাচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব মামলা হয়েছে সেসব থেকে তাকে মুক্ত করতে দলের আইনজীবীরা আদালতের মাধ্যমে চেষ্টা করছেন। মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করবেন। আশা করছি, শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন তারাও ইতিমধ্যে যে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে, তা জোরদার হবে। দেশ নির্বাচনমুখী হবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বিএনপি জনগণের পক্ষ হয়ে দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছে। আশা করছি, সরকার জনগণের মনোভাব বুঝে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। তারিখ ঘোষিত হলেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। আর দেরি করলে এবং তারেক রহমান দেশে ফিরলে জনগণই নির্বাচনের দাবি আদায় করে নেবে।’
গত রবিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের অনেকেই চলতি বছরে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলা অসম্ভব। এজন্য নির্বাচনের ঘোষণাটা তাড়াতাড়ি দরকার। গত ১৬ বছর দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের চেষ্টা করা হয়নি, চেষ্টাটা চালু করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে, কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, এ দাবি অবাস্তব। এত দ্রুত বিচার ও সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা বলে এসেছি, সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। যে নির্বাচন হবে এবং যে দল সরকারে আসবে তারা সংস্কারগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, আমরা প্রতিটি সংস্কারকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
গত রবিবার বিকেলে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে চলতি বছর ৫ আগস্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য তিন থেকে চার মাসের বেশি সময়ের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাব, যদি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চায়, তাহলে জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানকে সমুন্নত রাখতে ৫ আগস্টেই সংসদ নির্বাচন দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। যদি সংস্কার লাগে, সংস্কার করতে হবে। কিন্তু সংস্কার সংস্কার খেলা যেন আমরা না করি। সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেসব সংস্কারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে।’
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একদলীয় বাকশাল থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ৯ বছর রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবেন। নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। জনগণের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।’