রবিবার, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সিনেমার বাইরে খান সাহেবের যত গল্প

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৪৮ বার পঠিত

দুরন্তগতিতে ছুটে চলছে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। শাহরুখ নিজেই যে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী, তা আবার দেখল ভারত তথা বিশ্ববাসী। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রেকর্ড গড়ে যাচ্ছে সিনেমাটি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তৃতীয় দিনে ৯৪ কোটি রুপি আয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী সিনেমাটির মোট আয় ৩১৩ কোটি রুপি। আমাদের আজকের আয়োজন সেই বিখ্যাত কিংবদন্তি শাহরুখ খানের ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা নিয়ে। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন- আজহারুল ইসলাম অভি

হিরো নাকি ভিলেন?

আমরা সবাই হিরো হিসেবেই চিনি শাহরুখ খানকে। কিন্তু তিনি যে ভিলেনও ছিলেন, সে কথা অনেকেই জানি না। শুধু ভিলেন বললে ভুল হবে। তিনি আসলে সফল ভিলেন ছিলেন। ভিলেনকেও তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন হিরোর কাতারে। শাহরুখের প্রথম ছবি ‘দিওয়ানা’ মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। বলা হয়, নব্বইয়ের দশক ধরে বলিউড শাহরুখ খানকে তৈরি করেছে। পরের দশক শাহরুখ দুই হাতভরে দিয়েছে বলিউডকে। ভারতের বাইরে বলিউডের যে বিশাল জনপ্রিয়তা, এর একটি বড় অংশ এসেছে শাহরুখের হাত ধরে। নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ চলচ্চিত্রে এমন সব চরিত্র দিয়ে নিজেকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা বানিয়েছেন- যা অন্য তারকারা ভাবতেই পারেন না। ‘ডর’, ‘বাজিগর’, ‘ডুপ্লিকেট’, ‘ডন’, ‘ফ্যান’, ‘রইস’ সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্র হয়ে দর্শকের মন কেড়েছেন শাহরুখ। বলিউডের বড় পর্দায় ভিলেনকে হিরোর কাতারে নিয়ে আসা বা হিরোর চেয়ে বড় উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ায় শাহরুখের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
আন্ডারগ্রাউন্ড ডনের ফোনও পেয়েছিলেন শাহরুখ!

একটা সময় ছিল- যখন বলিউডের অন্য সুপারস্টারদের কাছে নিয়মিত মাফিয়াদের ফোন আসত। ডনদের ‘বন্ধু’ হিসেবে প্রায়ই তাদের ওই ডনদের প্রযোজিত সিনেমায় অভিনয়ের চাপ আসত। নিজের ও পরিবারের প্রাণের ভয়ে তারা ওইসব সিনেমায় অভিনয়ও করতেন।

১৯৯৫ সালের আগ পর্যন্ত শাহরুখের জীবন ঠিকঠাকই ছিল। এই বছর ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়ে লে যায়েঙ্গে’ মুক্তির পর বদলে গেল শাহরুখের জীবন। তুমুল হিট করে সর্বকালের সেরা অর্থ উপার্জনকারী সিনেমার তালিকায় নাম লেখালেন। রাতারাতি ‘স্ট্রাগলিং অ্যাক্টর’ থেকে সুপারস্টার বনে গেলেন শাহরুখ। ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় মুম্বাইয়ের সিনিয়র পুলিশ অফিসার রাকেশ মারিয়া মহেশ ভাটকে ফোন করে জানান, ডনদের নতুন টার্গেট শাহরুখ খান। তাই শাহরুখকে নিয়ে সব ধরনের আউটডোর শুটিং বন্ধ রাখা হয়। মহেশ ভাট সঙ্গে সঙ্গে শাহরুখকে সবটা জানান। এর পর থেকে ঘরের বাইরে তাকে ‘ওয়াই’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দেওয়া হতো। বাড়ি থেকে শুটিংয়ে যাওয়ার পথে নিরাপত্তার খাতিরে পাঁচ মিনিট পর পর গাড়ি বদলাতে হত শাহরুখকে। পরে ১৯৯৭ সালে খান্ডালা থেকে ‘দিল তো পাগাল হ্যায়’ সিনেমার শেষ লটের শুটিং করে ফিরছিলেন শাহরুখ। সেদিনই ঘটে গেল সেই ঘটনা। গাড়িতে বেজে উঠল অজানা নম্বর থেকে ফোন। মনে মনে প্রস্তুত ছিলেন শাহরুখ। ফোনের অন্যপ্রান্তে ছিলেন কুখ্যাত ডন আবু সালেম। তিনি শাহরুখকে ফোন করে পার্টিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে হাসাহাসি আর গালাগালি করছিলেন। শাহরুখ ঠাণ্ডা মাথায় ইংরেজিতে উত্তর দিয়েছিলেন। শাহরুখের সঙ্গে সালেমের আলাপ দীর্ঘদিন বলিউডের আলোচনার বিষয় ছিল। ওই সময় পরিস্থিতি সামলে সাহসের সঙ্গে জুতসই উত্তর দেওয়ার জন্যও প্রশংসিত হন শাহরুখ।

ভারতে অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলে তোলপাড়

২০১৫ সালের কথা। শাহরুখ খান একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ভারতে ওই সময়ে চলমান নানা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে কথা বলেন এবং এ নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। শাহরুখ বলেছিলেন, অসহিষ্ণুতা ‘চরম একটা পর্যায়ে আছে এবং আমি মনে করি এটা বাড়ছে।’ ভারতে মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারীদের হত্যা এবং গরুর মাংস খাওয়া কেন্দ্র করে একজনকে মেরে ফেলার ঘটনার পর বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ ও চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই রাষ্ট্র থেকে পাওয়া নানা পুরস্কার ফেরত দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তখন। শাহরুখ খান বলেন, ‘মাংস খাওয়ার মতো একটি বিষয় নিয়ে আমরা যা করছি! মানুষের খাদ্যাভ্যাস কী করে একটি ইস্যু হতে পারে।’ বিষয়টিকে ‘নির্বুদ্ধিতা’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘অসহিষ্ণুতাই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশপ্রেমিক হিসেবে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো ও ধর্মনিরপেক্ষ না হওয়াটাই একটি বড় অপরাধ।’ শাহরুখ খানের এই বক্তব্যের পর ভারতে টুইটার ব্যবহারকারীদের মধ্যে তোলপাড় পড়ে যায়, বিশেষত ভারতের রাজনৈতিক দল বিজেপির নেতারা এ ধরনের মন্তব্যের জন্য শাহরুখের সমালোচনা করেন।

সালমান খানের সঙ্গে বিবাদ

দুই খানের বিবাদের কথা অবশ্য অনেকেই জানেন। ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির আরেক সুপারস্টার সালমান খানের সঙ্গে একপর্যায়ে শাহরুখ খানের বিবাদ শুরু হয়। এর আগে বেশ কয়েকটি সফল সিনেমায় দুজন একসঙ্গে অভিনয় করলেও দুই খান একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। দুই নায়কের ভক্তরাও এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা তর্কবিতর্কে জড়ান। তবে উভয়পক্ষই এখন দাবি করছেন, তাদের মধ্যকার সম্পর্কের দূরত্ব মিটে গেছে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া ‘জিরো’ সিনেমায় দুজন একসঙ্গে একটি গানে নাচেনও।

ফারাহ খানের স্বামীকে থাপ্পড়ের ঘটনা

শাহরুখ খান বলিউডের সিনেমা পরিচালক ও কোরিওগ্রাফার ফারাহ খানের স্বামী শিরিশ কুন্দারকে একবার চড় মেরেছিলেন। অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক পার্টিতে এই ঘটনা ঘটে। ভারতের গণমাধ্যমে এই খবর বেশ ফলাও করে ছাপা হয় এবং সিনেমার ভক্তদের মধ্যে এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। ফারাহ খান শাহরুখের জনপ্রিয় সিনেমা ‘ম্যা হু না’ এবং ‘ওম শান্তি ওম’-এর পরিচালক।

রাজনীতিতে নেই বাদশাহ

২০১৭ সালের কথা। রইস মুক্তির পর নেট দুনিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলো যে, বলিউড বাদশাহ এবার রাজনীতিতে আসছেন। ‘রইস’ ছবিতে শাহরুখ খান যেভাবে নির্বাচনে লড়েছেন, তা দেখে অনেকের মধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছিল- এবার বুঝি তিনি সত্যি সত্যিই রাজনীতিতে আসতে চলেছেন। কিন্তু পরে তিনি জানিয়েছিলেন- পর্দায় যা-ই হোক, পলিটিক্সে পা রাখবেন না। শাহরুখ খান বলেন, স্রেফ অভিনয়টাই করতে চাই।

পিতা-মাতার মজার ঘটনা

শাহরুখ খানের জন্ম দিল্লিতে। বাবা মির তাজ মোহাম্মদ ছিলেন পাকিস্তানি পাঠান বংশীয়। মির তাজ মোহাম্মদ খান মূলত একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তার মা লতিফা ফাতিমা ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল শাহনেওয়াজ খানের মেয়ে। এতটুকু আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু জানি না যে বিষয়টি, তা হচ্ছে শাহরুখ খানের পিতা-মাতার বিয়ে নিয়েও আছে একটা মজার কাহিনি। তারাও বিয়ে করেছিলেন প্রেম করে। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর শাহরুখের মাকে উদ্ধার করার পর রক্তের দরকার হয়। তখন শাহরুখের বাবা মির তাজ মোহাম্মদ রক্ত দেন। এভাবে তাদের মধ্যে সখ্য শুরু হয়- যা পরে রূপ নেয় প্রণয়ে।

শাহরুখের নানার বিষয়ে যে কথা অনেকেই জানেন না

বর্তমান লালকেল্লার শিয়রে উড়তে থাকা ‘তিরঙ্গা’ ভারতের গৌরবের প্রতীক। স্বাধীনতার আগে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের আগে ওই স্থানে ব্রিটিশ পতাকা উড়ত। কিন্তু আপনারা জানেন কি ব্রিটিশ পতাকা ছুড়ে ফেলে দিয়ে কে সর্বপ্রথম ওই লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন? তিনি হলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। তিনি আর কেউ নন- মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট জননেতা, আজাদ হিন্দের মেজর ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের নয়নমণি ‘জেনারেল শাহনেওয়াজ খান’। তিনি ছিলেন বর্তমান জনপ্রিয় বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের নানা। জন্ম ২৪ জানুয়ারি ১৯১৪ আর মৃত্যু ৯ ডিসেম্বর ১৯৮৩। দেশের জন্য যারা নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন, জেনারেল শাহনেওয়াজ ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি দারুণ বক্তৃতা দিতে পারতেন। লালকেল্লায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত Light and sound show-তে নেতাফজর সঙ্গে সঙ্গে শাহনেওয়াজ খানেরও বক্তৃতা শোনা যেত।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com