সরকারি বিতরণব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডকে গম সরবরাহের জন্য মনোনীত করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
প্রতি মেট্রিক টনের দর ৩১৫.২৯ ডলার হিসাবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় ১৭৩ কোটি ৪০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১০.০০ টাকা হিসেবে)। আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ মেট্রিক টন এবং রাশিয়া থেকে জি-টু-জি ভিত্তিতে তিন লাখ মেট্রিক টনসহ পাঁচ লাখ মেট্রিক টন গম ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় গম আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক গম ক্রয়ের জন্য গত ৪ ডিসেম্বর প্যাকেজ-৬-এর জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে মোট চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে রেনপন্সিভ হয়।
সূত্র জানায়, দরপত্রে অংশ নেয়া অপর তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্রিন ফ্লাওয়ার ডিএমসিসি প্রতি মেট্রিক টন গমের দর ৩১৯ ডলার; মেসার্স সেরিয়াল কর্পস ট্রেডিং এলএলসি প্রতি মেট্রিক টন গমের দর ৩২০ ডলার এবং মেসার্স এমসি ফুড ডিএমসিসি প্রতি মেট্রিক টন গমের দর ৩১৬.১৬ ডলার উল্লেখ করেছিল। উল্লেখিত প্রস্তাব তিনটিকে নন-রেসপন্সিভ হিসেবে ঘোষণা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী, সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক উদ্ধৃত দর (প্রতি মেট্রিক টন ৩১৫.২৯ ডলার) অন্যান্য গম রফতানিকারক দেশগুলোর গমের গড়মূল্য ৩৪৩.৮৫ ডলার অপেক্ষা ২৮.৫৬ ডলার কম।
জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে গমের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। এর বাইরে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গমের চাহিদা সরকারি পর্যায়ে ৯ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। প্রতিকূল বাজারমূল্যের কারণে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহ ২০২৩ অভিযানে ১ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কোনো গম সংগৃহীত হয়নি।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ^ব্যাপী খাদ্যসঙ্কট, কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বহুল আলোচিত শস্যচুক্তি নবায়ন না হওয়া, বিশে্বর বৃহত্তম ক্রেতা চীন কর্তৃক এক কোটি মেট্রিক টন এবং ভারত কর্তৃক এক কোটি মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত এবং কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আগামী উৎপাদন মৌসুমে উৎপাদনের নেতিবাচক বার্তার ফলে বর্তমান বিশ^বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া গাজা যুদ্ধ ও উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্থিরতার কারণে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং জাহাজ চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিশ^ব্যাপী জাহাজ ভাড়ার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় জরুরি পরিসেবা হিসেবে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখা এবং সরকারি নিরাপত্তা মজুত গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স অ্যাগ্রোকর্প ইন্টান্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক বাংলাদেশ বন্দর পৌঁছানো পর্যন্ত উদ্ধৃত দরে দরপত্র গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে। এ জন্যই গম কেনার এই প্রস্তাবটি ক্রয় কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উঠানো হচ্ছে।