‘আকরাম খান বিএনপির সমাবেশে গিয়ে অপরাধ করেছে। এ জন্য তার দোকান বন্ধ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ ও মামলা করে আরও গুরুতর অপরাধ করেছে সে। তার ক্ষমা নাই। ওই দোকান আজীবন বন্ধ থাকবে।’
প্রথম আলোকে কথাগুলো বলছিলেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম।
বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যাওয়ার জের ধরে উপজেলার ব্যবসায়ী মো. আকরাম খানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে দোকানটি তালা মারার অভিযোগ রয়েছে আবদুর রহিমসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে। এরপর এক মাস পেরিয়ে গেলেও ওই দোকানের তালা খুলতে দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আকরাম খান বাগধা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সহসভাপতি। ইউনিয়নের চাত্রীশিরা বাঁশতলা বাজারে থাকা তাঁর ওয়ার্কশপটি এক মাস আগে তালা মেরে চাবি নিয়ে যাওয়া হয়।
বরিশালে সমাবেশে যাওয়ার জের ধরে আগৈলঝাড়ায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পর প্রথম আলোয় একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর ২৯টি প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও পুলিশে অভিযোগ করার কারণে আকরাম খানের ওয়ার্কশপটির তালা খুলে দেওয়া হচ্ছে না।
আকরাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমাবেশে যাওয়ার জের ধরে আবদুর রহিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২০ থেকে ২৫ জন নেতা-কর্মী ৫ নভেম্বর আমার দোকানে হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর করেন। ওই সময় আমার একটি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেন তাঁরা। এরপর দোকানটি তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে যান। এ বিষয়ে আমি বরিশালের পুলিশ সুপারের কাছে ৯ নভেম্বর অভিযোগ করি। পুলিশ সুপারের নির্দেশে আবদুর রহিমের বসতঘর থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে আমাকে ফেরত দেন আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম।’
এক মাসেও তাঁর দোকানটি খুলে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে আকরাম খান বলেন, ‘মা, স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সাতজনের সংসার। আয়ের একমাত্র অবলম্বন দোকানটি এক মাস ধরে বন্ধ। এ কারণে সংসার চালাতে হচ্ছে ধারদেনা করে। বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসার খরচও চালাতে পারছি না। চার সন্তানে লেখাপড়ার খরচও দিতে পারছি না। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। এরপরও দোকান খুলে দেওয়া হয়নি। তাঁদের একটাই কথা, আমি কেন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি? সে কারণে আমার দোকান আজীবন বন্ধ থাকবে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাগধা ইউনিয়নের কয়েকজন ব্যবসায়ী ৫ নভেম্বর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দেন। এরপর বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৩০ থেকে ৪০ জন নেতা-কর্মী বাগধা বাজারের ১৯টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠাসহ উপজেলায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান তালা মেরে বন্ধ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একা নই, ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সব নেতা একত্র হয়ে দোকানগুলো বন্ধ করেছিলাম। পরে ২৯টি দোকান খুলে দেওয়া হয়েছে। আকরাম আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারে কাছে অভিযোগ করায় তাঁর ওপর সবাই ক্ষিপ্ত। আমি এখন ঢাকায় আছি। গিয়ে দোকান খোলার ব্যবস্থা করে দেব।’
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম বলেন, আকরাম খানের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়েছে। দোকান বন্ধের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুত্রঃ প্রথম আলো