বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এর বিরুদ্ধে অর্থ বানিজ্য, নেতা-কর্মীদের হয়রানী, আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁতের রাজনীতিসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। শিরিনের নিপিড়ণ আর স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, পৌরসভাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে- অর্থের বিনিময়ে কমিটি বাণিজ্যের। পাশাপাশি ইফতার বাণিজ্য ও গ্রুপিং করে ভাঙ্গন ধরানোর চেস্টার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। শিরিন ও তার অনুসারীদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে ক্রমেই বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত বরিশাল বিএনপি ক্রমশ মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছে। ফলে সরকার পতন আন্দোলনে শিরিনের নেতৃত্বাধীন বিভাগীয় সদর দপ্তর বরিশালে বিএনপি রাজপথে উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি।
বিগত ২৮ অক্টোবরের পর সরকার পতনের আন্দোলনে অবরোধ কর্মসূচি পালনের নামে পুলিশের সাথে আঁতাত করে অনেকটা নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার হন শিরিন। তার নাটকীয় গ্রেফতার চালাকি নেতাকর্মীরা বুঝতে পেরে শিরিনের মুক্তির দাবীতে বরিশাল বিভাগের কোনো জেলা কিংবা উপজেলা বিএনপি প্রতিবাদ মিছিল করে নাই এমনকি দল থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দেওয়া নাই।
সরকার পতনের আন্দোলনে বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও সদর উপজেলা বিএনপি যখন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ তখনই মেরুদণ্ডহীন বরিশাল বিএনপির হাল ধরেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল সদর উপজেলা বিএনপির ১ নং সদস্য বরিশাল সদরের গর্বিত সন্তান আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতুল্লাহ। পুলিশী বাঁধা তোয়াক্কা না করে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে একমাত্র তিনিই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বরিশালের রাজপথে।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে সরকার পতনে দলের আন্দোল শুরু থেকে নেতাকর্মীদের জন্য এ পর্যন্ত আসা ৩৪ লাখ টাকার সামান্য কিছু টাকা নিজ অনুসারী নেতাদের মধ্যে বন্টন করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন।
বরিশাল বিভাগের একাধিক জেলা ও উপজেলা বিএনপির নির্ভরযোগ্য দ্বায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিন কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দ্বায়িত্ব পাবার পর থেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর তার এই মিশন বাস্তবায়ন করতে বিভাগের সর্বত্র তার নিজের লোক দিয়ে কমিটির বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। তবে অনেক জায়গায় সুফল পেলেও বরিশাল-২ নির্বাচনী সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর এলাকা উজিরপুর ও বানারীপাড়ায় ব্যর্থ হয় শিরিন। কারণ এই জনপদে সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুর নেতৃত্বাধীন নেতাদের কাছে দলের সাংগঠনিক বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ বা কমিটি বাণিজ্য গ্রহনযোগ্য নয়। প্রবাসে থেকেও এই দুই উপজেলার মোট ১৭ ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভায় সকল ওয়ার্ড কমিটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি গঠন করে দেন সান্টু নিজেই।
উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হুমায়ূন খান জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও উজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা হৃদয়ের স্পন্দন দানবীর খ্যাত এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ভাই বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় মোট ১৭ টি ইউনিয়ন এবং ২ টি পৌরসভা রয়েছে। এই আসনে সান্টু ভাই দলের দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে আজ অবধি দলীয় সকল কর্মসূচী বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রতি বছর রমজান মাস এলেই প্রত্যেক ইউনিয়নে বিএনপির উদ্যোগে সম্পুর্ণ সান্টু ভাইয়ের অর্থায়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আর এই ইফতার মাহফিলের জন্য উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ৩০ হাজার এবং প্রতিটি পৌর বিএনপিকে ৪০ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় দলীয়ভাবে ১৮ রমজান শিকারপুর ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে স্থানীয় কাজী বাড়ী মহিলা স্কুুল মাঠে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
ইফতার মাহফিলে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া ও ইফতার মাহফিলের ব্যানারে শিরিন ও টিপু কাজীর নাম না থাকায় বিলকিস জাহান শিরিন অনুসারী টিপু কাজী ইফতার মাহফিলের দ্বায়িত্বে থাকা বিএনপি নেতা প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমানসহ ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠান ভন্ডুল করতে ব্যানার ছিড়ে ফেলে। এনিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দিলে এক পর্যায় উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
বরিশালে যে কোনো দলীয় কর্মসূচী নিজেরাও করবে না আর কেউ করলেও তা যে কোনো মূল্যে তা প্রতিহত করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন শিরিন ও তার অনুসারী বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান, সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন, সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ভূয়া নেতা এনায়েত হোসেন বাচ্চু, সদস্য সচিব কুখ্যাত মাদক কারবারি ও ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ ডাকাত রফিকুল ইসলাম সেলিম মোল্লা।
বরিশাল বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, একসময় বরিশাল জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চানের আর্থিক সহায়তায় ফেরি করে হলুদ মরিচের গুঁড়ো বিক্রেতা মজিবর রহমান সরোয়ারের ছত্রছায়ায় থেকে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া বিএনপির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে কমিটি বাণিজ্য করা জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন বরিশালের কাউনিয়ায় পাঁচ তলা ও ফকির বাড়ি রোডে পাঁচ তলা দুটি বাড়ির কাজ সম্পন্ন করে এখন ঢাকার উত্তরায় বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। আর এই নির্মানাধীন বাড়ির কাজ সম্পন্ন করতে বিলকিস জাহান শিরিনের সাথে কমিটি বাণিজ্য শুরু করেন শাহীন।
শিরিনের বিরুদ্ধে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ বরিশাল বিভাগের সর্বত্র। বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কমিটি কমিটি বাণিজ্য করার কারণে ক্ষোভে ফুঁসছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এমনকি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি দেয়ার কারণে সেখানে শিরিনের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল পর্যন্ত করেছেন নেতাকর্মীরা। এভাবে গোটা বিভাগ জুড়ে নেতাকর্মীদের দাবি বরিশাল বিএনপিকে বাঁচাতে দূরণীতিবাজ শিরিনকে দ্রুত পদচ্যুত করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
এবিষয়ে বিলকিস জাহান শিরিনকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নাই