সরকার আবারও গুম-খুনের মতো ভয়াবহ অপরাধ শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে বিনা ভোটের অবৈধ সরকার গুম, খুন, অপহরণকে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার রক্ষা-কবজে পরিণত করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে র্যাবের সাবেক এবং বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপে পিছু হটায় গুম-খুনের আতংকে থাকা পরিবারগুলোতে কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু ইদানিং আবারও গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধ শুরু করেছে সরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পৈশাচিকতায় তাদের সাজানো গল্প একই থাকে। প্রথমে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া। অতঃপর কখনো অনন্তকালের জন্য নিখোঁজ, কখনো অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা। আবার কখনো রাস্তার ধারে অথবা ডোবা নালা বা নদীতে লাশ পাওয়ার মতো রোমহর্ষক ঘটনা। অনাচার, দুঃশাসন, লুটপাট, টাকা পাচার ও মেগা দুর্নীতির স্ফীতিতে বহমান রয়েছে ক্ষমতাসীনদের পরিবারবর্গ।’
রিজভী বলেন, ইতিমধ্যে জাতিসংঘ থেকে গুম হওয়া সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ পর্যালোচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দুরাচার অবৈধ সরকারকে আতংক ঘিরে ফেলেছে। আর স্বয়ংক্রিয় ভোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গুম-খুন নিয়ে প্রলাপ বকছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বলেন, ‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, গুম-অপহরণ-দুঃশাসন চালিয়ে যেভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তার পরিণতি হবে ভয়ংকর। সেদিন বেশি দূরে নয়, যে দিন গুম-খুন অপহরণের শিকার পরিবারগুলোর শোকার্তরা কাফনের কাপড় পরে স্বজনদের খোঁজে গণভবনের দিকে রওনা দিবে। দেশের প্রতিটি শোকার্ত মানুষের ধারণা প্রতিটি গুমের হুকুমের প্রধান আসামী বসে আছেন গণভবনে। গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ গণতন্ত্র হত্যার বিচার এদেশেই হবে। কারণ এদের জন্য মানবতা ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশকে ঘিরে ধরেছে অদ্ভুত এক রহস্যময় আঁধার। রাস্ট্র ও সরকারে কোথায় কি হচ্ছে সব কিছুতেই অস্পষ্টতা- রহস্যময়তা। জনমনে প্রশ্ন-তাহলে ৭ ফেব্রুয়ারি সুনিশ্চিত ভঙ্গিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কাথা-বালিশ ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল তা-কি ভুল ছিল? এটা কি এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে? আইজিপির নাম কি ভুলে দেয়া হয়েছে? নাকি তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল? বড় প্রশ্নটি হচ্ছে রাষ্ট্র-সরকারের অভ্যন্তরে হচ্ছেটা কি? সরকারের নাটাই কার হাতে?
সিরাজগঞ্জ সদর থানার যুবদল নেতা আকবর আলীকে হত্যা প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অল্প কিছুদিন আগে সিরাজগঞ্জ সদর থানার যুবদল নেতা আকবর আলীকে আওয়ামী ক্যাডাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। যেহেতু আসামিরা ক্ষমতাসীন দলের লোক তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। ইতোমধ্যে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। হত্যার আসামিরা জামিন পেয়ে এলাকায় গিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে এবং নিহত আকবর আলীর আত্মীয়-স্বজনদের দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। অথচ সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও নির্বিকার থেকেছে। এহেন পরিস্থিতে নিহতের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আওয়ামী লীগাররা ছাড়া এদেশে আর কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। উল্লিখিত ঘটনা এই সরকারের নির্দয় মনোবৃত্তির সার কথা, এটাই আওয়ামী শাসনের নমুনা।’