শনিবার, ১১:৫৩ অপরাহ্ন, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সবজির দাম কমলেও বেড়েছে চাল ও মুরগির

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৬ বার পঠিত

দেশজুড়ে বাজার দরে স্থিতিশীলতা ফিরছেই না। সপ্তাহজুড়ে দেখা গেছে বাজারে একটি পণ্যের দাম কমে তো; বাড়ে আরেকটির দাম। শীতকালীন সবজির দাম কমতির দিকে থাকলেও বেড়েই চলেছে সব ধরনের চালের দাম। ঊর্ধ্বমুখী ব্রয়লার মুরগির দামও। এ দিকে এখনো স্বাভাবিক হয়নি বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ। ছুটির দিনে বাজারে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয় ক্রেতাদের।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলেন, দেশে এখন আমনের ভরা মৌসুম। বাজারে নতুন ধানের চাল সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম বাড়ছে। রাজধানীর মিরপর ৬নং সেকশনের বাজারে চাল ব্যবসায়ী আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল হালিম বলেন, গত এক সপ্তাহে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে থেকে ২ টাকা থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকায় উঠেছে। এ মৌসুমে বাজারে সরবরাহ বেশি হলেও স্বর্ণা ও পায়জাম জাতের চাল দাম বেড়েছে।

খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়তি। এর প্রভাবেই খুচরা ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে। অন্য দিকে চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়েছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি মণ ধান দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম বাড়ায় চালের দাম বেড়ে গেছে। বাজার ঘুরে মিনিকেট চাল ৭২-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি নাজিরশাইল জাতের চালের দাম উঠেছে ৮০ টাকা পর্যন্ত।

কয়েক সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর হুট করে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহেও ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল। এ দিকে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে ঢাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত কাপ্তানবাজারে মুরগির সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। তবে সোনালি জাতের মুরগি আগের দামে অর্থাৎ প্রতি কেজি ৩২০ টাকা, কক প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মালিবাগ বাজারে মুরগি কিনতে এসে এক শিক্ষার্থী বলেন, মেসে তারা অনেকটাই মুরগির মাংসের ওপর নির্ভরশীল। কিছুদিন আগেও দাম একটু কম ছিল বলে তারা একটু স্বস্তিতে ছিলেন। এখন দেখছি আবার দাম হুট করে বেড়ে গেছে।

এদিকে প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর এগারো দিন চলে গেলেও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পাড়া মহল্লার বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। আর খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে এক প্রকারের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন তেলের দাম রাখছেন ইচ্ছামতো। কোনো কোনো ব্যবসায়ী খোলা সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করছেন। আবার অনেক দোকানিকে বোতলজাত তেলও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বোতলের সয়াবিন তেল বাজারে ছাড়ে তারা সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। দাম বাড়ানোর পরও তারা তেল সরবরাহ করছে না। গত মাসের শেষ দিকে বাজারে হঠাৎ করে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বড় বড় কোম্পানি। পরে উৎপাদনকারীদের দাবির মুখে ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এই দাম বাড়ানোর ফলে এখন বোতলের এক লিটার সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৭৫ টাকা। আর খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১৫৭ টাকা।

তবে এ দামে হাতেগোনা কিছু বড় বড় দোকান ছাড়া তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বেশির ভাগ দোকানেই বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই। দু-একটি দোকানে সীমিত পরিসরে তেল থাকলেও দাম রাখা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা পর্যন্ত। কাওরান বাজারে মুদি ব্যবসায়ী আমির খসরু বলেন, কোম্পানির তেল দেওয়ার কথা বললে আটা ময়দা ডাল নেয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দিচ্ছে, তা ছাড়া তেল দিচ্ছে না। আবার অন্যান্য যেসব পণ্য নিতে বাধ্য করছে সেগুলোরও দাম ধরছে বেশি। ব্যবসায়ীদের এক রকম জিম্মি করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পরিবেশকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দু-একটি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানি নতুন দামের বোতলজাত তেল বাজারে ছাড়েনি। এ জন্য তারাও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটি দিতে পারছেন না।

দীর্ঘদিন অস্থিতিশীল থাকা পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। দাম কমেছে বেশ। এক-দেড় মাস আগে দেশী ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে দাম কমেছে আলুরও। নতুন আলুর দাম ১২০ টাকা থেকে কমে ৭০ টাকায় নেমে এসেছে। এ ধরনের নতুন আলুর আধিক্যের কারণে পুরনো আলুর দামও কেজিপ্রতি ১০ টাকার কমে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। ফলে কমতে শুরু করেছে সব ধরনের সবজির দর। বিভিন্ন সবজি গড়ে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে কেনা যাচ্ছে। নানা জাতের শাকও বিক্রি হচ্ছে অর্ধেকেরও কম দামে। তা ছাড়া ডিমের দামও স্থিতিশীল রয়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় প্রতি ডজন বিক্রি হতে দেখা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com