শুক্রবার, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী র‌্যালি ও আলোচনা সভা সারাদেশে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, মানববন্ধন হাসিনার দালালরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে : সারজিস শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র বিএনপি মেনে নেবে না : জয়নুল আবদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে-তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎহীন সচিবালয়, বন্ধ দাপ্তরিক কার্যক্রম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের নিহত ৪ পেঁয়াজের দাম কমছেই, খুশি ভোক্তারা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য মিল-কারখানা, বেকারের আর্তনাদ

সফল মুমিন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ৮৯ বার পঠিত

সর্বকালের বিশ্ববাসী পারলৌকিক জীবনে দুই ভাগে বিভক্ত হবে যথা- ১. সফল অর্থাৎ জান্নাতবাসী এবং ২. ব্যর্থ অর্থাৎ জাহান্নামবাসী। তদ্রুপ মুমিনদের আল্লাহ দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন যথা- ১. সফল বা পরিপূর্ণ মুমিন এবং ২. অপরিপূর্ণ মুমিন। আল্লাহ তায়ালা সফল মুমিনদের বর্ণনা দিয়েছেন সূরা আল মুমিনুন (আয়াত : ১-৯) এ, যা নিম্নরূপ-

১. অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ।
২. যারা তাদের সালাতে বিনয় প্রকাশ করতে থাকে।
৩. যারা অযথা (কথাবার্তা ও কাজকর্ম) বিষয় থেকে বিরত থাকে।
৪. যারা জাকাত আদায় করে থাকে।
৫. যারা নিজেদের কামনার বা লজ্জাস্থানকে সংযত রাখে।
৬. তবে তাদের স্ত্রী অথবা মালিকানাভুক্ত বাঁদী-দাসীদের বেলায় নয়, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
৭. কেউ যদি এদের ব্যতীত অন্যকে কামনা করে, তবে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী।
৮. এবং যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
৯. এবং যারা নিজেদের সালাতের ব্যাপারে যত্নবান থাকে।
এরপর দুটো আয়াতে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দেন- সফল মুমিনদের যথাযথ পুরস্কার অর্থাৎ শীর্ষস্থানীয় জান্নাত ‘জান্নাতুল ফেরদাউস’।
১০. তারাই হবে উত্তরাধিকারী তাদের।
১১. যারা হবে উত্তরাধিকারী জান্নাতুল ফেরদাউসের, যেখানে তারা চিরদিন বাস করবে।

আলোচ্য আয়াতে অত্যাবশ্যকীয় বা ফরজ ইবাদত চারটি। তন্মধ্যে এখানে উল্লেখ করেছেন মাত্র দুটো, যথা- প্রথমটি সালাত (দুইবার উল্লিখিত) এবং দ্বিতীয়টি জাকাত, যা তিনি কুরআনের শুরুতেই বলেছেন, যার দ্বারা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয় সালাত ও জাকাত সর্বোত্তম ইবাদত এবং সালাত সর্বাধিক আদায়কৃত ইবাদত। সব ইবাদতের মধ্যে একমাত্র সালাতই জান্নাতের চাবি এবং অজু হলো সালাতের চাবি। ফলে অজুর গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। বেলাল রা: সর্বদা অজু অবস্থায় থাকতেন। কুরআনে সর্বাধিকবার (৮২ বার) সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সালাতের হিসাব নেয়া হবে শেষ বিচারের দিনে সর্বপ্রথম। যিনি এ হিসাবে সফল হবেন, তিনি পরবর্তী হিসাবগুলোতে সফল হয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ। এ সম্পর্কে একটি হাদিস উল্লেখযোগ্য যথা- হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি নিজে শুনেছি প্রিয়নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব হবে, যদি সালাত ঠিক হয়ে যায় তবে বান্দা সফলকাম হবে। আর যদি সালাতের হিসাব ঠিক না হয়, তবে বান্দার জীবন সাধনা ব্যর্থ হবে। যদি ফরজ সালাত আদায়ের ব্যাপারে ত্রুটি পাওয়া যায় তবে করুণাময় আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করবেন, ‘আমার বান্দার নফল ইবাদতের প্রতি লক্ষ করো’। যদি কিছু নফল ইবাদত থাকে তবে তা দিয়ে ফরজের যে ত্রুটি রয়েছে তা পূর্ণ করা হবে।

ধর্মীয় ভাই ও বোনেরা! ১. সফল মুমিন হতে হলে তার সালাত আদায় হতে হবে ‘খুসুউন’ সহকারে। ‘খুসুউন’ শব্দটি দিয়ে যা বুঝানো হয়েছে তা হলো- আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকা, বিনয় অবলম্বন করা, শরীর বা অঙ্গ-প্রতঙ্গ স্থির রাখা বা নড়াচড়া না করা, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি স্থির রাখা এবং অন্য কোনো দিকে না তাকানো, মনের একাগ্রতা বজায় রাখা ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে রাসূল সা:-এর বাণী অবশ্যই স্মরণীয় ও পালনীয়। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তুমি এভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাকে দেখছ, যদি তোমার এমন অবস্থা না হয় তথা তুমি তাকে দেখতে না পারো, তবে এ কথার পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখো যে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন। সালাতরত অবস্থায় আমরা আল্লাহর দৃষ্টিতে আছি, এ সত্য কথাটি কোনো অবস্থাতেই আমরা যেন ভুলে না যাই এবং আল্লাহর তরফ থেকে এ কথা শুনতে না হয় যে ‘হে গোলাম! তোমার এ ধরনের সালাতের আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’

হজরত আবুজর গিফারি রা: বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যতক্ষণ বান্দার মন আল্লাহ তায়ালার দিকে নিবদ্ধ থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা বান্দার দিকে রহমতের নজরে দেখেন। পক্ষান্তরে, যখন বান্দার মন এদিক-সেদিক চলে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের নজর সরিয়ে নেন। (আহমদ, আবু দাউদ, নাসায়ি, দারেমি)
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসূলে করিম সা:-এর কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, সালাতের মধ্যে মন এদিক-সেদিক চলে যায়, এর কারণ কী? তখন তিনি ইরশাদ করেছেন, এটি শয়তানের আক্রমণ, শয়তান বান্দাকে সালাত থেকে হঠাৎ সরিয়ে নেয়।

হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, তুমি সিজদার স্থানে তোমার দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখবে। হজরত আনাস রা: থেকে এ কথাও বর্ণিত আছে, সালাতে এদিক-সেদিক দেখা সালাতের ধ্বংসের কারণ হয়। একান্ত প্রয়োজন হলে নফলে এমন করতে পারে, ফরজে নয়।

আলোচ্য অবস্থাগুলো যথাসম্ভব পালন করতে পারলে ‘খুসুউন’সহকারে সালাত আদায় হয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভীতসন্ত্রস্ত বা আল্লাহকে ভয় করা, আল্লাহ আমাকে দেখছেন মনে রাখা, দণ্ডায়মান-রুকু-সিজদা-বসা ইত্যাদি অবস্থায় যথাস্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা, ধীর স্থিরভাবে দণ্ডায়মান বা ওঠা-বসা করা, কোনো দিকে আদৌ না তাকানো, তাড়াহুড়া না করা, সালাত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তা স্মরণে রাখা, অর্থ জানা থাকলে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তা স্মরণে আনা।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com