বৃহস্পতিবার, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া সেই হলো বাবা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
  • ১৪১ বার পঠিত

বাবাকে দেখেই সন্তান তার সবকিছু গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ বাবাকে অনুসরণ করে সামনের দিনগুলোতে চলার প্রয়াস। বাবা, সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাকে। বাবা হলো একজন সন্তানের কাছে বটবৃক্ষসম।

সন্তানের আদর-শাসন ও বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। আর বাবার তুলনা বাবা নিজেই। বাবা শ্বাশত, চির আপন, চিরন্তন। আজকের দিনটিতে কেমন যেনো এক ব্যতিক্রম অনুভূতি দেখতে পেলাম, সাত বছরের আহরার কারীব সকাল ৮টায় ঘুম ভেঙে তার বাবার পায়ের কাছে গিয়ে কী যেনো বলার চেষ্টা করছে।

কারীবের কিছু বলার অনুভূতি দেখে বাবা বুঝতে পারছেন সে কিছু বলতে চায়। স্পস্টভাবে শুনতে পেলেন কারীবের বাবা… কারীব বললো, বাবা তুমি কেমন আছো? হ্যাঁ, বাবা-ছেলের ঠিক অনুভূতি বুঝতে পেলেন যে, সে বাবার সঙ্গে যেতে চায়। তাই বুঝিয়ে দিলো আজকের দিনটিকে। সুযোগ এসেছে সেই বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসা প্রকাশের। আজ বিশ্ব বাবা দিবস।

বাবাকে হারিয়েছি আজ থেকে ৩৯ বছর আগে। বাবা রেখে গেছেন তার আট ছেলেকে। এখন বুঝি আমার বাবা আমাদের জন্য কত কষ্ট করতেন, কেন এত চিন্তা করতেন। কতোই না কষ্ট করেছেন আমার বাবা, যদিও পৃথিবীর সব বাবাই সন্তানদের জন্য কষ্ট করে থাকেন। মা-ও বেঁচে নেই এই পৃথিবীতে। মায়ের মুখে বাবার অনেক স্মৃতি শুনেছি।

চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল কাছিয়াড়া গ্রাম। এই গ্রামটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমার বাবা মরহুম মাস্টার কলিম উল্লাহ মিয়াজী। পিতার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে মাস্টার কলিম উল্লাহ ছিলেন দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব মেধাবী। কিন্তু পরিবারের অভাব অনটন দেখে প্রাথমিক শিক্ষা অবস্থাতেই চলে গেলেন কুমিল্লার কোর্টবাড়ির দক্ষিণ বিজয়পুর ইউনিয়ের মৌলভী বাড়িটিতে।

সেখানেই বাড়িতে বাড়িতে গৃহশিক্ষক থেকে তার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতেন আবার তার গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ও ভাই-বোনদের জন্য কিছু জমানো অর্থও পাঠাতেন। বাবা সেখানে নবাব হুচ্চা মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষকতা শেষে তদানীন্তন ইস্ট পাকিস্তান মডেল সার্ভে ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট-বার্ড-এর সূচনালগ্নে এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আখতার হামিদ সাহেবের সহযোগি হিসেবেও কাজে দেশের সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বাবার এই কথাগুলোর বলার পেছনে একটি কারণ, একজন আদর্শবান বাবাকে আমি নবাগত সন্তানের বাবা হিসেবে আজকের দিনটিতে স্মরণ করলাম নতুন আঙ্গিকে। সেই মাস্টার কলিম উল্লাহর আট সন্তানের মধ্যে আমি সপ্তম ছেলে হিসেবে আজ বুঝতে পারি বাবা শব্দটি কতোই না মধুর। স্মৃতির আয়নায় আজও ভেসে আসে বাবা গুণকীর্তনের কথা।

সন্তান হিসেবে তখন আমি যা বুঝিনি কিংবা বুঝতে চেষ্টা করিনি, এখন বাবা হিসেবে তা উপলব্ধি করছি। যখন সন্তানের শরীর খারাপের খবর শুনি, তখন নিজের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট অনুভূত হয়, হয়তো বা আমার বাবাও এর চেয়ে বেশি কষ্ট পেতেন বাবার আট সন্তানের কিছু হলে। নিজের অজান্তে চোখ ভিজে যায় আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে— ‘বাবা তোমার ছেলে তোমার জন্য কিছুই করতে পারছে না, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তুমি তো চলে গেলে না ফেরার দেশে। বাবা তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।’ আজও তোমার ছাত্র কিংবা সমবয়সিদের কাছে শুনতে পাই মাস্টার কলিম উল্লাহর আদর্শের কথা। সমাজ উন্নয়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থায় সফলতার কথা।
বাবা, সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাকে, আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। আর বাবার তুলনা বাবা নিজেই। আর বাবা হারানোর কষ্টকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যখনই ‘মা’ জননী আট সহোদরকে মাত্র একটি যুগ বুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পেরেছেন। ১৯৯৪ সালের ২৫ মে মা-ও না ফেরার দেশে চলে গিয়ে পরকালের আসল ঠিকানায় পাড়ি দেন, ঠিক তখনই আবার বাবার ভূমিকা পালন করেন আমাদেরই মিঞাভাই (জন্মদাতা বাবার চেয়েও কোনো অংশ কম নয়)। ঠিক এভাবে চলতে থাকলেন বড় ভাই ‘বাবা’ নামক শব্দটিতে জায়গা করে নিয়ে।

এরপর প্রয়াত মা-বাবার পর মিঞাভাইয়ের ছায়াতল থেকে বের হই ২০০৯ সালের ১২ জুন। বাবাকে হারিয়েছি ৩৮ বছর আগে। ১৯৮৩ সালের ১৭ জুলাই থেকে বাবা, আব্বা, পিতা এই মধুর শব্দগুলো মুছে গেছে একবারে শৈশব থেকেই। তারপরও মায়ের কোলে মাথা রেখে মুখে মুখে বাবা নামক শব্দটির রাজা-রানীর গল্পের মতো শুনেই বেড়ে ওঠেছিলাম ২৫ বছর আগে। ঠিক এরই মাঝে মাকেও হারালাম ১৯৯৪-এর ২৫ মে।

নতুন প্রজন্মের কাছে মা দিবস-বাবা দিবসের ধারণাগুলো দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গত শতাব্দীর প্রথমদিকে বাবা দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এ দিবস পালন শুরু। আজ বাঙালি সন্তানদের হৃদয়ে বাবা দিবসটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। হাজারো কষ্ট সয়ে তিলে তিলে যে সন্তানকে বড় করেছেন একজন বাবা, তাকে ঘিরেই এদিন হবে ব্যতিক্রমী উৎসব। তবে বাবা কি শুধুই একটি বিশেষ দিনের জন্য!

এরকম বিতর্ক থাকলেও এই বিশেষ দিনটিতে একটি ফুল অথবা একটি কার্ড নিয়ে শুভেচ্ছা জানালে বাবা তাতেই খুশি। বাবার চাহিদা এতটুকুই। ছোট-বড়, অখ্যাত-বিখ্যাত সবার কাছেই বাবা অসাধারণ। বাবার স্নেহ-ভালোবাসা সবারই প্রথম চাওয়া আর পাওয়া। সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস আর বছরের প্রতিক্ষণেই বাবাকে সম্মান দেবে সব সন্তানই। তাই আন্তর্জাতিক বাবা দিবসে শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাই বাবাকে। আজ বাবা পৃথিবীতে নেই। সব সন্তান যেনো ‘বাবা’ শব্দটিকে মূল্যায়ন করে। বৃদ্ধা কিংবা অসুস্থ থাকা বাবাকে কোনো সন্তান যেনো কষ্ট না দেয়, সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যেহেতু বাবার বিকল্প কিছুই নেই।

ইতিহাস যাই হোক, দিনটির তাৎপর্য এখানে যে, এই দিনটিতে বাবাকে বিশেষভাবে মনে করিয়ে দিয়ে, বাবাকে ভালোবাসার কথা স্মরণ, ভক্তি এবং বাবার প্রতি আমাদের কর্তব্যবোধ জাগিয়ে দিয়ে বরং আমাদেরই যেনো লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল। শুধু বছরে এক দিন নয়, বছরের প্রতিটি দিন যেনো আমরা বাবাকে ভালোবাসি, বাবাকে শ্রদ্ধা করি আমরা যেনো বাবার প্রতি ত্যাগ ও কর্তব্য কখনো ভুলে না যাই।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com