বৃহস্পতিবার, ০৬:১৭ অপরাহ্ন, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে দিনভর খোঁজাখুঁজি, ভোরে জমিতে পাওয়া গেল লাশ গৌরনদীতে মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই-খাতা, কলম ও গরিব-অসহায়, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের লাঠিচার্জে আহত ৭ জন ঢামেকে শেখ পরিবারের নামে থাকা ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠক চলছে ‘আ.লীগকে পুনর্বাসন করতে হলে আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে করতে হবে’ ভারত তার দেশের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে : পাকিস্তান টিউলিপ সিদ্দিককে ‘দুনীতিগ্রস্ত’ বললেন ইলন মাস্ক প্রধান উপদেষ্টার ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে যাচ্ছে বিএনপি আজকেই টাকা না দিলে দুর্বার রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি বাতিল

শেবাচিমে ভয়ঙ্কর ওদের রুখবে কে?

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৯০ বার পঠিত

রোববার দুপুর আড়াইটা। বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ১২ নম্বর শয্যা ঘিরে দুই নারীর বাগ্‌বিতণ্ডা। তাঁদের মধ্যে বিছানার চাদর নিয়ে টানাটানি। কয়েক মিনিট পর তাঁদের মধ্যে সমঝোতা হলে শিশু রোগী নিয়ে শয্যায় ওঠেন এক অভিভাবক। এর পাশেই অসুস্থ শিশুসন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বাকেরগঞ্জের সুন্দরকাঠি গ্রামের লোকমান হোসেন। গত শুক্রবার সন্তানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে শয্যা পাননি তিনি। ঠাঁই হয়েছে মেঝেতে।

লোকমান হোসেন জানালেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তিন মাসের সন্তান ফাতেমাকে মেঝেতে রাখায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই দিনের বেলা সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়া দুই নারী ওয়ার্ডের বুয়া। নিয়োগ ছাড়াই রোগীদের নানা সেবা দিয়ে বকশিশ নেন তাঁরা। ১২ নম্বর শয্যাটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দুই নারী দুই রোগীর অভিভাবকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। তাই একজন রোগী ওঠাতে গেলে অন্যজন বাধা দেওয়ায় দু’জনের মধ্যে বচসা হয়। শয্যায় ওঠা রোগীর স্বজন জানান, চারদিন ওয়ার্ডের মেঝেতে থাকার পর শয্যাটি পেতে বুয়াকে ১১০ টাকা দিতে হয়েছে।

শয্যা নিয়ে এ রকম কাড়াকাড়ি দিনে একাধিকবার ঘটছে শেবাচিম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ওয়ার্ডটি ৩৬ শয্যার। গতকাল রোববারও ভর্তি ছিল ১২৭ শিশু। এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা প্রায় একই রকম। নির্ধারিত শয্যার চেয়ে তিন গুণের বেশি রোগী। এজন্য একটি শয্যা পেতে স্বজনের মধ্যে যেমন হাহাকার, অন্যদিকে হাসপাতালে ‘বুয়া’ নামধারীরা করছেন বাণিজ্য।

শিশু ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার মশিউর রহমান তপু জানান, শীত মৌসুম শুরুর পরই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। শৈত্যপ্রবাহে তা আরও বেড়েছে। বেশিরভাগ শিশু ভুগছে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে। চিকিৎসা দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন। এক শয্যায় দু’জন করে শিশু রোগী রেখেও তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না।

ওয়ার্ডের ভর্তি রেজিস্ট্রারের তথ্য সূত্রে সেবিকা নাসরিন বেগম জানান, গত বৃহস্পতিবার ১২০, শুক্রবার ১৩৮, শনিবার ও রোববার ১২৭ জন করে রোগী ভর্তি ছিল শিশু ওয়ার্ডে। গত তিন দিনে এই ওয়ার্ডে তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে কাড়াকাড়ি শুধু শয্যা সংকট নিয়েই হয় না, চিকিৎসা সরঞ্জামও অপ্রতুল। পুরো ওয়ার্ডের জন্য মাত্র একটি নেবুলাইজার। সেটি নিয়েও কাড়াকাড়ি হয় রোগীর স্বজনের মধ্যে। অক্সিজেন পরিমাপের জন্য অক্সিমিটারও বিকল।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুরের জাকির হোসেন জানান, ওষুধের দাম ১০০ টাকার মধ্যে থাকলে সেটা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়। দাম এর চেয়ে বেশি হলে বাইরে থেকে কেনার জন্য নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দেন। দেড় মাস বয়সী ছেলে রহমতউল্লাহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে নিয়ে ছয় দিন আগে হাসপাতালে আসেন জাকির হোসেন।

১০ মাসের সন্তান আলিফাকে নিয়ে আট দিন শিশু ওয়ার্ডে ছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার লাইলী বেগম। সন্তানকে নিয়ে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। তিনি জানান, এক বুয়াকে ১০০ টাকা ঘুষ দিয়ে একটি শয্যা পেয়েছিলেন। ওই বুয়াকে প্রতিদিন শয্যাভাড়া দিতে হয়েছে ৫০ টাকা করে।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১০ মাস বয়সী সন্তান তূর্য্য দত্তকে নিয়ে চার দিন ধরে শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে আছেন নলছিটির ষাটপাকিয়া গ্রামের প্রিয়াংকা মাঝি। তিনি জানান, সকাল ও বিকেলে সিনিয়র চিকিৎসকরা ওয়ার্ড পরিদর্শনে গেলে মেঝের রোগীদের উঠিয়ে প্রতি শয্যায় দু’জন করে রাখা হয়। চিকিৎসকরা চলে যাওয়ার পর আবার তাদের মেঝেতে নামানো হয়।

শিশু ওয়ার্ডের সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, শী?তের তীব্রতা বে?ড়ে যাওয়ায় মেডিসিন ও শিশু ওয়া?র্ডে রোগী বেড়েছে। তবে শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ অনেক বেশি। তারা সবাই ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আপাতত প্রতি শয্যায় দু’জন করে রোগী রাখার জন্য বলা হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সামলাতে জরুরিভাবে ১০০টি শয্যা স্থাপনের কাজ চলছে। অক্সিমিটার বিকল ও নেবুলাইজার সংকটের বিষয়টি শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরতরা তাঁকে জানাননি। হাসপাতালের মজুতে পর্যাপ্ত নেবুলাইজার রয়েছে। সূত্র : সমকাল

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com