সাবেক রাষ্ট্রদূত রাজীব ভাটিয়া সংবাদপত্রের একটি নিবন্ধে লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর ‘আঞ্চলিক তাৎপর্যে অনুপ্রাণিত তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উভয় দেশের উচ্চ অবস্থানকে ব্যাপকভাবে প্রদর্শন করেছে।’
১২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় দৈনিক ‘দ্য হিন্দু’-তে প্রকাশিত ‘দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার একটি মডেল, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক’- শিরোনামে সাবেক রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, বিশেষ ‘বন্ধন’ লালন করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের অবদানকে স্বীকার করা দরকার।
বাংলাদেশে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে এক নিবন্ধে লিখেছেন, শত্রু শক্তি সদিচ্ছাকে ক্ষুন্ন করতে চাইলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়তে থাকবে।
৯ সেপ্টেম্বর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ বলা হয়েছে ‘ভারত ও বাংলাদেশের পরিপক্ক নেতৃত্ব ছোটখাটো মতবিরোধ ও স্বার্থের ভাগাভাগিকে হুমকি হতে দেয়নি’- শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখা হয় যে, ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিরাপদ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে উভয় দেশকে এই হুমকির বিরদ্ধে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
সাম্প্রতিক সফরে তিনি লিখেন, সংযোগ, পরিবেশ, পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচারের মতো খাতে সাতটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং পাঁচটি নতুন অবকাঠামো প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে।
নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, ‘উল্লেখযোগ্যভাবে আসামের শিলচর জেলা থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর পানিবন্টনের জন্য একটি চুক্তি রয়েছে। ভারত ফেনী নদীর উপর অস্থায়ী পানিবণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য অনুরোধ করে, যা ত্রিপুরার পানি প্রয়োজন পূরণ করছে।’
তিস্তা ইস্যু নিয়ে তিনি লিখেছেন, অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তি ভারতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের টানাপোড়নে আটকে আছে। ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদনদীর পানি বণ্টন এবং বন্যার তথ্য পরীক্ষা যৌথ নদী কমিশনের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের জন্য ২০০টি বৃত্তি ঘোষণা করেছে। যুদ্ধে যোগদানকারী প্রবীণ সৈনিক ও তাদের পরিবারের চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের জন্য ভারতের একটি কর্মসূচি রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো জনগণের পারস্পরিক বন্ধন দৃঢ় করেছে।
কম্প্রিহেনসিভ ইকোনোমিক পার্টনারশীপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে এবং আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির অধীনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়া বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা আর পাবে না। তবে তিনি জানান, ‘সিইপিএ এই পরিবর্তন পরিচালনা করতে এবং বাংলাদেশ যে বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করে তা সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে।’
সাংবাদিক ও কলামিস্ট সুবিমল ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর আগামী কয়েক বছরের জন্য প্রাথমিকভাবে অর্থনীতিক ও সংযোগসহ বিভিন্ন ফ্রন্টে সহযোগিতার গতিশীলতা এনে দেবে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ৮ সেপ্টেম্বরের সংখ্যার এক উপ-সম্পাদকীয়তে লেখা হয় যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে উন্নত যোগাযোগ কেবল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাই বাড়ায় না বরং জনগণের মধ্যে আরও ভাল সম্পর্ক ও সৃষ্টি করে।
তিনি লিখেছেন, উভয় দেশ একইসাথে তাদের নিজ নিজ দেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীদের নিরঙ্কুশ নেতৃত্বের আট বছরে অনেক দীর্ঘস্থায়ী মাইলফলক অর্জিত হয়েছে, এই সফর পরবর্তীকালে কয়েক বছরের জন্য প্রাথমিকভাবে অর্থনীতি, সংযোগ ও বিবিধ সহযোগিতার দ্বার উন্মোচিত হবে।
ভারতীয় প্রবীণ সাংবাদিক এবং বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গৌতম লাহিড়ী বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সাথে সাথে বর্তমান বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিপ্রেক্ষিতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কিভাবে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায় তার একটি নির্দেশিকা তৈরি হয়েছে।
বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কুশিয়ারার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ৫৪টি অভিন্ন নদনদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের যাত্রা শুরু হয়েছে।
ভারত নেপাল ও ভুটানে তার পণ্য রফতানি করতে বাংলাদেশকে করমুক্ত ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নেপাল ও ভুটান থেকে যাতে করে বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারে সেই লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রেস ক্লাব অফ ইন্ডিয়া (পিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি লাহিড়ী বলেন, ‘এসব বিষয় বিবেচনা করে, আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ছিল একটি সফল সফর যেখানে দুই দেশের মধ্যে অনেক জমে থাকা সমস্যার সমাধান হয়েছে।’
সূত্র : বাসস