রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান ২০১৪ সালে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-আরডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর ওই বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দুই দফায় দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় শুধু শেখ হাসিনাকে খুশি করতে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’ নির্মাণ প্রকল্প নেন তিনি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কেবল ভবন নির্মাণে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বাকি টাকা চেয়েছিল আরডিএ। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে বিপুল টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা ভবনটি এখন আরডিএর গলার কাঁটা। তবে ভবনটিতে এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দুর্লভ ছবির গ্যালারি স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে।
রাজশাহী নগরীর তালাইমারি মোড়ে ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণ প্রকল্প নেয় আরডিএ। প্রথম দফায় ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন এবং অবকাঠামো নির্মাণ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মূল ভবনের নির্মাণের কাজ পায় ঢাকার দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেকটস্ লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে ঢিমেতালেই চলেছে প্রকল্পের কাজ। এর মধ্যে প্রকল্পের পিডি আরডিএর সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান দুর্নীতির মামলায় কারাগারে গেলে কাজে আরও ধীরগতি আসে। পরে পিডি হিসেবে নিয়োগ পান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিক। বাকি কাজ তার তত্ত্বাবধানেই সম্পন্ন হয়।
আরডিএ সূত্রমতে, ২০১৮ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন হয় একনেকে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু কাজের মাঝপথে এসে প্রকল্পটির নকশায় ব্যাপক পরিবর্তন আনে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল প্রথমে ৫৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরে সেটি বাড়িয়ে শুধু প্রথম ধাপের (অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ) জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রথমে প্রকল্প মেয়াদ ছিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরে সেটি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়।
এই প্রকল্পের আওতায় এক দশমিক ৪২ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু স্কয়ারটির বেজমেন্টের মধ্যে গাড়ি পার্কিং, আর্ট গ্যালারি ও জলাধারবেষ্টিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য তৈরি করার কথা ছিল। এ ছাড়া ৬ হাজার ৩৩২ দশমিক ৭১ বর্গমিটার গ্রাউন্ড ফ্লোর হবে, যেখানে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং, ডিজিটাল স্ক্রিনযুক্ত স্থায়ী আর্ট গ্যালারি ও মিউজিয়াম থাকবে। এক হাজার ৫৭৬ দশমিক ৮৬ বর্গমিটার ফার্স্ট ফ্লোরের মধ্যে আধুনিক রেস্তোরাঁ, দৃষ্টিনন্দন ল্যান্ডস্কেপ, উন্মুক্ত স্থানে বসা এবং সুস্থধারার বিনোদনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
আরডিএর তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের নকশা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তবে কাজের মাঝে নকশায় পরিবর্তন এনে আরও এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা নেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ, তিনটির স্থলে পাঁচটি লিফট, ৪২ টন থেকে বাড়িয়ে ২৬২ টনের এয়ারকুলার, আসবাবের পরিমাণ বৃদ্ধি, ইলেকট্রিক সাবস্টেশনের ক্যাপাসিটি বাড়িয়ে ৫০০ কেভি, জেনারেটর ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনা খাতের খরচ বাড়ানোসহ সংশোধনের পর নানা খাতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ বাতিল করে দেয়। এখন শুধু ৬২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১২ বর্গমিটার জমিতে নির্মিত একটি ভবন ছয় মাস ধরে পড়ে আছে।
এ বিষয়ে আরডিএর চেয়ারম্যান (যুগ্ম সচিব) এসএম তুহিনুর আলম বলেন, নবনির্মিত ভবনটির নাম পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরডিএ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আগের পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হয়েছে। এখন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে সিনেপ্লেক্স, ক্যাফেটেরিয়া, কনফারেন্স রুম এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভাড়া দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজশাহীতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ে নানা দুর্লভ আলোকচিত্রের জন্য আলাদা গ্যালারি সংরক্ষণ করা হবে। এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেলেই পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।
আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভবনটি নাম পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে। আমরা আরডিএ ভবন নামেই ব্র্যান্ডিং করতে চাই।