রাজধানী ঢাকা শহরে শীতের আমেজ এখনো তেমনভাবে অনুভূত হচ্ছে না। তার মানে এই নয় যে, শীতকাল শুরু হয়নি। গ্রামাঞ্চলে ইতোমধ্যে শীত জেঁকে বসেছে। এই ঋতুতে মানবদেহে নানা রোগ বাসা বাঁধে, বিশেষ করে হাড়ের সংযুক্ত অংশগুলোয়। তাই এই সময় রোগের লক্ষণ, উপসর্গ এবং ধরনের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। আক্রান্ত হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হতে।
মানবদেহের যেসব স্থানে সাধারণত ব্যথা হয় সেগুলো হলো- ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কটি, গোড়ালি, কাঁধ, কনুই ও কব্জি। সাধারণত শীতকালে শরীরের জয়েন্ট বা জোড়া অংশে বাতের ব্যথা অতিমাত্রায় বেড়ে যেতে পারে। এ সময় যারা আর্থ্রাইটিস, রিওমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ও অস্ট্রিও-আর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন, তাদের কষ্ট অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া পেশি, লিগামেন্ট, হাড় ও স্নায়ুর ব্যথাও তীব্র হয়ে থাকে এই শীতকালে। সতর্কতা অবলম্বন না করলে এসব রোগে কষ্ট বাড়ে।
চিকিৎসা : কুসুম গরম পানির সেঁক আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমানোয় কার্যকর। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের ওষুধ খেতে হবে। ব্যথানাশক জেল বা মলম দিয়ে হালকাভাবে জোড়ায় মেসেজ করতে হবে। ব্যথা নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জয়েন্টে ইনজেকশন দেওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধে করণীয় : এই সময় যথেষ্ট গরম কাপড় পরে থাকতে হবে। আক্রান্ত জোড়া বসা, দাঁড়ানো অথবা যে কোনো অবস্থায় বেশিক্ষণ রাখা যাবে না। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে স্টিক, পায়ে কুশনযুক্ত জুতা এবং গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও কব্জিতে সাপোর্ট বা ব্রেচ ব্যবহার করতে হবে। হালকা ব্যায়াম জোড়ার ব্যথা উপশমে বেশ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে শীতকালে কঠোর ব্যায়াম আক্রান্ত জোড়ায় রক্ত চলাচল কমিয়ে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। জোড়ার স্বাভাবিক নড়াচড়া এবং পেশি, টেনডন ও লিগামেন্টের নমনীয়তা জোড়া ব্যথামুক্ত রাখে। ফল ও ফলের রস, সতেজ শাকসবজিসহ উপযুক্ত খাবার শীতকালে আর্থ্রাইটিস বা বাতব্যথার তীব্রতা কমাতে সহায়তা করে থাকে। গাজর, শশা, মুলা ইত্যাদি সবজি ব্যথা সৃষ্টিকারী পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। সকালে খালি পেটে রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং জোড়ায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখে বলে ব্যথা কম অনুভূত হয়। আদা ও লেবুর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে এবং রাতে পান করলে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমে যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ‘এ’ ও ‘সি’ খেতে হবে। তবে রোগটি বেশিমাত্রায় অনুভূত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ