গুটি ও সেনি পোকায় আক্রমণে ভোলার আলু চাষিদের অধিকাংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কৃষকের মুখ মলিন হয়ে গেছে। রবিবার (১৮ মার্চ) দুপুরের দিকে ভোলা সদর উপজেলা পশ্চিম ইলিশ, পূর্ব ইলিশা, বাপ্তা, রাজাপুর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা ক্ষেত থেকে আলু তুলছেন। তাতে অধিকাংশ আলুই পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন লাভের আশায় আবাদ করা আলু চাষিরা ভুগতেন দূর চিন্তায়। পুষিয়ে উঠতে পারবেন না খরচ।
কৃষক ইউছুফ(৪৬) জানান, তিনি ১৩ গন্ডা বর্গা জমিতে ২০ মণ বীজ আলু আবাদ করেছেন। এতে তাঁর প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আশাবাদী তাঁর জমি থেকে প্রায় ২৫০ মণ আলু পাবেন। বর্তমান আলুর বাজার চলছে মণ প্রাতি ৪০০ টাকা। এতে তিনি ১ লক্ষ টাকার মতো আলু বিক্রি করতে পারবেন। তাতে ক্ষতি হতে পারে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো। কারণ শেষ সময়ের দিয়ে আলু ক্ষেত সেনি পোকায় আক্রমণ করছে। তাই চারের এক অংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসারা সেনি পোকা দমনের জন্য কোনো পরামর্শ দেয়নি। আর সরকারি কোনো বীজও আমি পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আমি গত বছর ১৩ গন্ডা জমিতে আলু আবাদ করেছিলাম। তাতে ১ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে। আলু বিক্রি করি ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার। তাতে আমার খরচ বাদে ৪০ হাজার মতো লাভ হয়েছে। কৃষক ইউছুফ পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাকার মাথা এলাকার কাজী বাড়ির জয়নাল কাজীর ছেলে তিনি।
কৃষক মফিজুল ইসলাম (৩৫) বলেন, আমি এ বছর এক কানি ১৭ গন্ডা বর্গা জমিতে আলু আবাদ করেছি। তাতে আমার প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা মতো খরচ হয়েছে। এক কানি জমির আলু তুলেছি। তাতে ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করছি। আর ১৭ গন্ডার আলু তুলতেছি। এবছ আলু ভালো হয় নাই। কারণ বৃষ্টি হয়নি তাই আলু পুষ্টি ও ওজন হয়নি। এবং শেষ সময়ে এসে আলু ক্ষেতে গুটি ও সেনি পোকা আক্রমণ করে। তাতে অধিকাংশ আলু নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর আলু চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ বছরও আলু চাষ করেছি। কিন্তু এখন দেখি লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষক মফিজুল ইসলাম এর বাড়ি ইউনিয়নের ইলিশ গ্রামে। তিনি মৃত আব্দুল মোতালেব মীরের ছেলে।
কৃষক সিরাজ(৫৫) বলেন, বড় আশা করে আলু চাষ করেছি। ভাবছিলাম লাভবান হবে। কিন্তু আল্লাহে ক্ষেতে ভালোই ফলন দিছে। শেষ সময় এসে গুটি পোকা আর সেনি পোকায় আক্রমণ করে অনেক আলু নষ্ট করে পেলছে। কি করমু আলু তুলে পোকার আক্রমণ করা আলু গুলো পালিয়ে দিতে হয়৷
তিনি আরও বলেন, আমি ২ একর ৪০ শতাংশ জমিতে আলুর আবাদ করেছি। তাতে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এক শতাংশ জমিতে আড়াই মণ আলু আসছে। মণ প্রতি ক্ষেত থেকে ৪০০ টাকা করে বেপারীরা কিনে নিচ্ছে। তাতে দেখা যায় আমার লোকসান গুনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছর ২ একর জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। তাতে ২ লক্ষ টাকার মতো খরচ হলেও কোনো লাভ হয়নি। কৃষি সিরাজের বাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘার হাওলা গ্রামে। তিনি হায়দার আলী হাজী বাড়ির আলী আকবরের ছেলে।
জেলার কৃষি অফিস সূত্র জানা গেছে, এবছর জেলার ৭ উপজেলায় ৫ হাজার ৪ শত ১০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষমাত্রা নিধারন করা হয়েছে। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে। আলু আবাদে শতভাগ পরিশুদ্ধ ভালো ফলনের আশা করা যায় না। প্রতি বছরই ৫% ক্ষয়ক্ষতির ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবির জানান, আলু তোলার শেষের দিকে কিছু কিছু জায়গায় গুটি ও সেনি পোকায় আক্রমণ করায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তবে তা মারাত্মক প্রয়োজায় ক্ষতি হয়নি। কৃষকদের কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আলুর ক্ষতিকর সব চেয়ে বড় যে রোগটি তাহলো লেইট ব্লাইট বা মড়ক। সেই রোগ থেকে থেকে আলু রেহাই পেয়েছে। জেলার ৪৫% আলু তোলা হয়ে গেছেও জানান তিনি।