যে কোন খাবারের স্বাদ বাড়াতে লেবুর কোন জুড়ি নেই যা খাবারে তৃপ্তি দেয়। তবে লেবুর রস রেখে খোসাটা ফেলে দেয়া হয়। অনেকে জানেন না এই খোসাতে কি গুন আছে। এতে আছে ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের মত খনিজ উপাদান, ফাইবার ও ভিটামিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেবুর খোসার মধ্যে রয়েছে নিউট্রিয়েন্টস, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। এছাড়াও লেবুর খোসার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। জেনে নিন লেবুর খোসার যেসব রোগ প্রতিরোধ করে-
কিডনি স্টোনের মতো রোগ দূরে থাকে
নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে সিট্রিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। যার প্রভাবে কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে।
কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমে
লেবুর খোসায় উপস্থিত ডায়াটারি ফাইবার শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন কিছু খেল দেখায় যে কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। সেই সঙ্গে আলসার এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যাও কমে যায়।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
লেবুর খোসায় উপস্থিত স্য়ালভেসস্ট্রল কিউ ৪০ এবং লিমোনেন্স নামে দুটি উপাদান ক্যানসার সেলের ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নিয়মিত লেবুর খোসা খেলে শরীরের ভিতরে ক্যানসার সেলের জন্ম নেওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। এখানেই শেষ নয়, লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশেনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
মুখ গহ্বরের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে মুখ গহ্বর সংক্রান্ত একাধিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তাই তো নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক অ্যাসিড মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, জিঞ্জিভাইটিস সহ একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীরে রক্তের প্রবাহে উন্নতি ঘটে
লেবুর খোসা খাওয়া মাত্র শরীরের ভিতরে এমন কিছু রদবদল হতে শুরু করে যে সারা শরীরে রক্তের সরবারহ বাড়তে শুরু করে। ফলে দেহের প্রতিটি কোনায় অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না। ফলে ছোট-বড় সব ধরনের রোগই দূরে পালায়।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ
পেকটিন নামে একটি উপাদান প্রচুর মাত্রায় থাকায় লেবুর খোসা নিয়মিত খেলে ওজন কমার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কারণ এই উপাদানটি শরীরে উপস্থিত অতিরিক্ত চর্বিকে ঝড়িয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
হার্টের ক্ষমতা বাড়ায়
লেবুর খোসায় উপস্থিত পলিফেনল নামে একটি উপাদান শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অন্যদিকে লেবুর পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণা রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের রাগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
লিভারে ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ এত মাত্রায় বেড়ে যায় যে লিভারের ভিতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বাড়তে সময় লাগে না।
হাড় শক্ত হয়
প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম থাকার কারণে লেবুর খোসা খাওয়া শুরু করলে ধীরে ধীরে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনফ্লেমেটরি পলিআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপরোসিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
লেবুর খোসার ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের নিচে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের বয়স কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বলিরেখা যেমন কমে, তেমনি ত্বক টানটান হয়ে ওঠে।
হজম ক্ষমতা বাড়ায়
ফাইবার সমৃদ্ধ যে কোনও খাবার হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই উপাদানটি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে লেবুর খেসায়। তাই তো বদ-হজন থেকে গ্যাস-অম্বল, যে কোনও ধরনের হজম সংক্রান্ত সমস্যায় এই প্রকৃতিক উপাদানটি উপকারে আসে।
ব্যবহার করার নিয়ম:
প্রথমে একটি লেবুকে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। পুরো ঠাণ্ডা হয়ে জমে গেলে এবার একটি গ্রেটার দিয়ে লেবুর খোসা সমেত গ্রেট করুন।
রান্না করা গরম গরম স্যুপ, মাছের ঝোল বা নুডলসের উপরে ছড়িয়ে দিন লেবুর কুচি। জলের উপরেও এই গোটা লেবুর কুচি ছড়িয়ে খেতে পারেন। যেমন স্বাস্থ্যকর, তেমনই খাবারে স্বাদও বাড়ায় গোটা লেবুর কুচি।