পাঠ্যবই থেকে শিশুদের মনে তাদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়েই সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী ছেলে না মেয়ে তার এই পরিচয় আল্লাহ প্রদত্ত শারীরিক গঠন বা অবয়ব না ভেবে বরং তাদের চিন্তা ও আচরণ থেকেই নির্ধারণের কৌশল শেখানো হয়েছে সপ্তম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যসূচির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে। যদিও মনোবিজ্ঞানীদের মতে শুধু হরমোনাল ইমব্যালেন্স বা হরমোন বিষয়ে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিরাই এমন অস্বাভাবিক আচরণ বা চিন্তা করতে পারে। সার্বিকভাবে কোমলমতি সব শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যসূচিতে এমন একটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন হয়নি বলেও জানান তারা।
এই বইয়ের তৃতীয় তথা সম্প্রদায় অধ্যায়ে (৪৪ থেকে ৬১ পৃষ্ঠা) শিশুদের লিঙ্গ পরিচয়ের নানা দিক বর্ণনা করা হয়েছে। বইয়ের ৫১ পৃষ্ঠায় নতুন পরিচয় অনুচ্ছেদে শরীফার গল্প অংশে শিক্ষার্থীদের জন্য গল্পে গল্পে শেখানো হয়েছে একজন ছেলে তার চিন্তা থেকেই এবং আচরণগত পরিবর্তন করে নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিতে পারে। এমনকি একজন ছেলে তার ইচ্ছার কারণে নিজেকে মেয়ে হিসেবেও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই গল্পে আনাই নামে একজন শিক্ষার্থীর সাথে শরীফার যে কথোপকথন হয়েছে সেখানে শরীফা নিজেই স্বীকার করছে, সে ছোটবেলায় ছেলে ছিল। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে বড় হলো তখন সেই শরীফ আহমেদই নিজেকে মেয়ে ভাবতে শুরু করল এবং মেয়েদের মতো আচরণ করতে লাগল। আর এটা তার ভালো লাগে।
একই বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠায় নতুন প্রশ্ন অনুচ্ছেদে পাঁচজন শিক্ষার্থীর (গণেশ, রনি, অন্বেষা, রফিক ও নীলা) কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে। এই কথোপকথনে রনি নামের একজন শিক্ষার্থী বলছে ‘তার মা তাকে শিখিয়েছেন ছোটবেলায় লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছেলে বা মেয়ে হয় না।’ বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে। অর্থাৎ শিশুকাল থেকে ছেলে বা মেয়েদের যে আদালা লিঙ্গ পরিচয় থাকে এটা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মন থেকেই মুছে দেয়া হয়েছে সপ্তম শ্রেণীর বইটির এই অধ্যায়ে।
বইটির বর্ণনা অনুযায়ী এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, একজন ছেলে যদি তার ইচ্ছামতো মেয়ের আচরণ করতে পারে কিংবা তার সার্বিক আচরণ বা তার বন্ধু সহপাঠী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও যদি সে মেয়েদেরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে বড় হতে থাকে তাহলে একটি পর্যায়ে সমাজ সংস্কৃতি বা রীতি অনুসারে সে তার বিয়ে কিংবা যৌনচাহিদা মেটাতে গিয়ে অবশ্যই একজন ছেলেকেই বেছে নেবে। আর এভাবেই সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ে বা সমকামিতার চর্চাও সমাজে চলে আসবে। মুসলিম প্রধান একটি দেশে পাঠ্যপুস্তকে এমন বিতর্কিত বিষয়ে এবং চিরন্তন একটি সত্য ও আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মকেই আমাদের সমাজ থেকে তুলে দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে।
বইটির ৫৫ ও ৫৬ পৃষ্ঠায় লিঙ্গ বৈচিত্র্য এবং জেন্ডারের ধারণা অংশে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে আলোচনা করা হয়েছে সেখানে ফাতেমা নামের একজন শিক্ষার্থী নিজেই বলছে এই পাঠে তারা যেটা বুঝেছে সেটা হলো ছেলেমেয়েদের চেহারা আচরণ কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের স্বতসিদ্ধ কোনো নিয়ম নেই। তারা নিজেকে ছেলে বা মেয়ে যেটা ভাববেন সেই অনুযায়ীই আচরণ করতে পারবে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং পিরোজপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি কাজী সাইফুদ্দীন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানান, ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টি মূলত কোনো ছেলে বা মেয়ের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। এটা মূলত একটি মানসিক রোগ। এটা সবার মধ্যে আবার হয় না। কারো মধ্যে হরমোনাল ইমব্যালেন্স হলেই কেবল এটা হতে পারে। তাই কেউ যদি ইচ্ছা করল সে ছেলে আর তাই সে ছেলে হবে, আবার কেউ ইচ্ছা করল সে মেয়ে, কাজেই সে মেয়ে হয়ে গেলো এটা হবে না, সম্ভবও না। আর সপ্তম শ্রেণীর নতুন পাঠ্যবইয়ে এমন একটি বিষয়কে কেনইবা কোমলমতি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো এটা আসলে আমার বোধগম্যও নয়। এগুলোর লেখকইবা কারা? তারা কেন এগুলো ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বইয়ে (পাঠ্যসূচিতে) নিয়ে এলো?