চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৩ বা ২৪ মার্চ শুরু হবে সংযমের মাস পবিত্র রমজান। রোজায় কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাসের খরচেও বড় একটা চাপ পড়ে। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি। সরকার রমজান মাসের বাজার নিয়ন্ত্রণে হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে এর এক মাস আগেই মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পড়ে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ। রমজান সামনে রেখে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সরকারের হুঁশিয়াতেও অটল বাজার সিন্ডিকেট- এমনটাই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
রোজার আগেই হু হু করে বাড়ছে শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, সবজিভেদে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে। দুই একটি ছাড়া কোনো সবজিই ৩০ থেকে ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার (২০ মার্চ) সকালে নগরীর নতুন বাজার, বাজাররোড, সাগরদী বাজার, চৌমাথা বাজার,বটতলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার একাধিক বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি ৬০ টাকা। ৩০ টাকা কেজি টমেটো।
এছাড়া-পাতাকপি ২০-২৫ টাকা,শিম ৩০-৪০ টাকা, করলা ৮০-৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০, পটল ৬০, ঢেঁড়স ৮০, কচুর লতি ৬০, পেঁপে ৩০-৪০, বরবটি ৮০ ও ধুন্দুল ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
দেশি মুরগীর ডিম ৬৫ টাকা হালি,লাল ডিম ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে।
বাজার রোডের এক ডিম ক্রেতা বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে ডিম ৪৩ টাকায় কিনেছি সেই ডিম আজকে ৪৫ টাকা হালি কিনতে হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, আবার নতুন করে সিন্ডিকেট তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।’
বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ থেকে ২৫৫ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ২৪৫-২৫০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩৪০ টাকা। লেয়ার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩২৫ টাকা কেজিতে।গরুর মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ থেকে ১১শ’ টাকা কেজিতে।
ক্রেতারা বলছেন, মাংসের চাহিদা মেটাতে যারা ব্রয়লার মুরগির ওপরেই ভরসা করতেন চোখ বন্ধ করে তারাও এখন দিশেহারা।
বটতলা বাজারের মুরগি বিক্রেতা বলেন, খামারিরা দাম বাড়িয়েছে। তারা দাম বাড়ালে তো আমাদের কিছু করার থাকে না।’
আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বড় রসুন ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। ছোট রসুনের বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়।
এছাড়া আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, খোলা চিনি ১১৩ থেকে ১১৫ টাকা,ইন্ডিয়ান মসুর ডাল ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।শুকনো মরিচ ৪০০-৪৫০ টাকা,হলুদের গুড়া ২৭০ টাকা,মিনিকেট চাল ৭৩ টাকা,আটাশ চাল ৫৫ টাক, পোলাওর চাল ১১০-১৩০ টাকা,
বাজারে খোলা আটার কেজি ৬০ টাকা ও প্যাকেট আটা ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৭০ টাকা। দুই কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে লিটার প্রতি ১৯০ টাকা,সরিষার তেল ২৮৫, লবণ ৩৮-৪০ টাকা কেজি।
কম দামের মাছ হিসেবে পরিচিত চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। রুই মাছের দাম এখন ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে।
ক্রেতারা বলছেন, মাছেভাতে বাঙালীর পাতে এখন প্রতি বেলায় মাছ জোটা ভাগ্যের বিষয়।
চৌমাথা বাজার সবজি ব্যবসায়ীরা বলেন, সবজির দাম গত সপ্তাহে কম থাকলে এ সপ্তাহে তা কেজি প্রতি ৫/৭ টাকা বেড়েছে।মোকাম থেকে সবজি কেনার পর শ্রমিকের মজুরি,খাজনা,পরিবহন ব্যয়,দোকানভাড়া বিদ্যুতের বিল দিতে হয়।আর রোজায় এখন সব কিছু দাম বেড়েছে।আমাদের ও দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।অনেক সময় সকাল থেকে বিকেল হওয়া আগেই সবজি নষ্ট হয়ে যায়।এসব কারনে দাম একটু বেশি।
বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু কলনীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢালাই এর কাজ করেন মোঃ খোকন। প্রতিদিন কাজ করলে ৭০০ টাকা মজুরি পায়।এ আয় দিয়ে ভালোই চলছিল তার। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে দিশাহারা করে তুলে তাকে।মোঃ খোকন বলেন, আগে দুই-চার টাকা আয় করা যেত এখন জীবন বাঁচানোই দায়। দাম বাড়ার পরে আয় দূরের কথা, খাবার একবেলা জুটলে আরেক বেলায় জুটে না।গরুর মাংস খাওয়াতো ছেড়েছি অনেক দিন আগে এখন ২ মাস ধরে ব্রয়লার খাওয়াও ছেরে দিয়েছি।ছেলেমেয়েকে যে পুষ্টির জন্য ডিম খাওয়াবো তার উপায় ও এখন নেই।এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গরীব মানুষদের না খেয়ে মরতে হবে।
একই এলাকার বাসিন্দা পারভিন আক্তার একটি প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন।তিনি বলেন,বাজারে পণ্য কিনতে এসে দাম শুনে বারবার হোঁচট খেতে হয় আমাকে।দাম বাড়ার কারণে খাবারের পরিমাণ কমাতে হয়েছে।আগের মতো বাজার সদাই হয় না। এখন বাজারের কথা উঠলে ভয় হয়। ডাল-ভাত খেয়ে যখন যা জোটে তা খেয়ে কোনোভাবে দিন কাটে।সামনে রোজা আসতেছে তখন নিজে কি খাবো আর ছেলেমেয়েকে কি খাওয়াবো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশালের সহকারী পরিচালক সুমী রানী মিত্র বলেন, ‘আমাদের বাজার তদারকি অভিযান অব্যহত রয়েছে।আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে অযথা কেউ মূল্য বৃদ্ধি করবে তা হবে না।ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন কোন ঘটনা ঘটলে প্রমানসহ লিখিত অভিযোগে অবগত করুন বা ১৬১২১ নম্বরে যোগাযোগ করুন। অভিযোগ প্রমানিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
তিনি আরো বলেন,‘রমজানে যারা দাম বাড়াবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মানুষের জন্য বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।’
এদিকে পণ্যের আকস্মিক লাগামহীন মূল্যে অনেক ক্রেতাই দিশেহারা।নিত্যপণ্যের লাগামহীন এই মূল্যবৃদ্ধি কমানোর দাবীতে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।তারা বলেন সরকারকে অচিরেই দাম সহনীয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হবে।আসছে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর হবে এমনটাই প্রত্যাশা ক্রেতাদের।