শুক্রবার, ০৬:২১ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব উত্থাপন আজ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৫২ বার পঠিত

সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু

ঢাকা প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি (সুবর্ণজয়ন্তী) উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন (একাদশ সংসদের ২২তম) শুরু হয়। এর আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশন আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সংসদে ভাষণ দিবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। এরপর সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করবেন।

অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার সব সংসদ সদস্যদের স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যরা এবং চার জাতীয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে স্পিকার বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ৫০ বছর ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি। ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন। শুক্রবার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এই মহান সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেবেন। সবার অংশগ্রহণে সংসদের বিশেষ অধিবেশন কার্যকর ও প্রাণবন্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এরপর স্পিকার সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হচ্ছেন- এইচ এন আশিকুর রহমান, আসাদুজ্জামান নূর, মো: মকবুল হোসেন, কাজী ফিরোজ রশীদ ও কানিজ ফাতেমা আহমেদ। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা অগ্রবর্তিতার ভিত্তিতে সংসদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্য অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। এরপর সংসদে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার। স্পিকার বলেন, বিগত অধিবেশনের পর আমরা দুজন সাবেক মন্ত্রী ও সাতজন সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। তারা হলেন- সাবেক তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, সাবেক তথ্য ও পাটমন্ত্রী হাবিব উল্লাহ খান এবং সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকী, রেজা আলী, মো: দেলোয়ার হোসেন, সামসুল আলম প্রামাণিক, মো: মোজাম্মেল হক, আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী ও এনামুল হক। তাদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করছে জাতীয় সংসদ।

শোক প্রস্তাবে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতদের প্রতি গভীর শোক জানানো হয়। পাশাপাশি বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া মাদারীপুরের শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস দুর্ঘটনা, তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প, মোজাম্বিক ও মালাবিতে উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ফ্রেডির আঘাত, সৌদি আরবের মক্কায় ওমরাহ করতে যাওয়ার সময় বাস দুর্ঘটনা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সড়ক দুর্ঘটনাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক এবং এসব ঘটনায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়। পরে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান।
অধিবেশন শুরুর আগে স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত অধিবেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই সাথে অধিবেশনের কার্যসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ আজ বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এরপর সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব তুলবেন। পরে দুই দিনব্যাপী সাধারণ প্রস্তাবের ওপর সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখবেন। এরপর তা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছিল। এই হিসেবে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও বছরব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হবে। আলোচনা সভা, সেমিনার, প্রদর্শনী, মেলাসহ নানা আয়োজন থাকবে। বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের মিলনমেলাও হতে পারে। ওই সব অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের ৫০ বছরের অর্জনগুলো প্রচার করা হবে। বিশ্বের সংসদীয় ফোরামগুলোতে জাতীয় সংসদের ভূমিকাও তুলে ধরা হবে। সংসদে দেয়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণগুলো দেশে-বিদেশে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।

সংসদ বিষয়ক দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের সঙ্কলন ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রণীত ‘মুজিববর্ষ বিশেষ অধিবেশন’ শীর্ষক দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক চলাকালে বই দু’টির মোড়ক উন্মোচন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, মো: শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরংকুশ জয়ের পর ক্ষমতা না দেয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধু জাতিকে উপহার দেন সংবিধান। এরপর ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান- এটা বিশ্বে বিরল।
বাসস জানায় বই দু’টি মোড়ক উন্মোচনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) তার বক্তৃতায় বাংলাদেশ কিভাবে চলবে-তার দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। সুতরাং এটি আমাদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ।’
দু’টি বইয়ের একটি হলো সংসদে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্কলন ও অন্যটি হলো ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে ডাকা সংসদের বিশেষ অধিবেশনে প্রদত্ত আইনপ্রণেতাদের ভাষণের সঙ্কলন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য (এমপি), জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ ও এর জনগণকে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, ৫০ বছরে আমাদের প্রজন্ম বা পরবর্তী প্রজন্ম, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বক্তৃতা জানবে এবং এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে বোঝার, জনগণের অবস্থা, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সবকিছু জানার সুযোগ পাবে।
প্রধানমন্ত্রী সংসদের বিশেষ অধিবেশনে দেয়া সংসদ সদস্যদের বক্তৃতার সঙ্কলনের প্রশংসা করে বলেন, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ ব্যাপারে তিনি স্পিকার, সংসদ সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সংবিধান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধান বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান। কারণ এতে সর্বস্তরের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের জাতির পিতা বাংলাদেশের জনগণের ভোটে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করেন।

সরকার প্রধান বলেন, মাত্র ৯ মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন-যা ইতিহাসের একটি বিরল ঘটনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটিকে সম্ভবত গোটা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এর মাধ্যমে গরিব, অভাবি, বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত করা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানে সুবিধাবঞ্চিতসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সংবিধানের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে সাতটি ছাড়া বাকি সব আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com