এনজিও কর্মকর্তার অপমান সইতে না পেরে মাদারীপুরের রাজৈরে বিষপানে এক নারীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে মৃত্যু হয় হালিমা বেগমের। জানা গেছে, নিহত হালিমা বেগম রাজৈর উপজেলার নরারকান্দি গ্রামের জব্বার মোড়লের স্ত্রী। সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তার। ৬০ হাজার টাকা নেয়া ঋণ সুদসহ ৬৭ হাজার ৬শ’ ২০ টাকা পরিশোধের শেষ তারিখ ছিল ২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত ২৭টা কিস্তিতে ৪০ হাজার ৫শ’ টাকার পরিশোধ করা হয়েছে।স্বজনদের অভিযোগ, ঋণের টাকা পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করায় লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয় হালিমা।এনজিওর এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি স্বজন ও এলাকাবাসীর। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস পুলিশের।
স্বজনরা জানায়, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বেসরকারি এনজিও বিজ-এর মাদারীপুরের রাজৈর শাখা থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেন হালিমা বেগম নামে এক নারী। প্রতি সপ্তাহে ১৫শ’ টাকা করে কিস্তি দেওয়ার কথা। গত বুধবার ২৮ নম্বর কিস্তির টাকা চাইতে বাড়িতে যান প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী সাইফুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন। টাকা দিতে না পারায় অকথ্য ভাষায় পরিবারের সবাইকে গালিগালাজ করেন তারা। একপর্যায়ে গোয়ালঘর থেকে গরু বাহির করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করেন এনজিওর মাঠকর্মীরা। বাঁধা দিলে ক্ষিপ্ত হন সাইফুলসহ সঙ্গে থাকা লোকজন। পাওনা কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে একদিন সময় দেন তারা। তা না হলে বিষ খেয়ে হালিমাকে মরতে বলেন বিজ-এ কর্মকর্তারা। পাড়াপ্রতিবেশীর সামনে এমন অপমান সইতে না পেরে বুধবার রাতেই বিষপান করেন হালিমা। গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেলে। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হালিমা।নিহত হালিমা বেগমের মেয়ে সুখি আক্তার বলেন, আমার আম্মু ৬০ হাজার টাকা ঋণ আনছে। প্রতি সপ্তাহে ১৫শ’ টাকা কিস্তি। বেশির ভাগই কিস্তি শেষ হয়েছে। আমাদের সঞ্চয়ের অনেক টাকা জমাও আছে। বুধবার সাইফুলসহ কয়েকজন বাড়িতে আসে, আম্মু বলছে এই সপ্তাহ টাকা দিতে পারবো না। পরের সপ্তাহে একসঙ্গে দুটি কিস্তি দিবো। কিন্তু কেউ আম্মুর কথা শোনেনি। অকথ্য ভাষায় গালিগালজ, পরে গোয়ালঘর থেকে গরু নিয়ে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে এনজিওর লোকজন। যাবার সময় আম্মুকে বিষ কিনে মরে যেতে বলে তারা। আম্মু অপমান সইতে না পেরে বিষ খায়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা জগলুল শেখ বলেন, প্রথমে মিষ্টি কথা বলে ঋণ দেয়। পরে কিস্তির টাকার জন্য চাপ দেয় কর্মকর্তার। এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ। তা না হলে এজিওকর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
এদিকে এনজিওর অফিসে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে না পাওয়া গেলেও অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম মুফোঠোনে চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত দেনার কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় হালিমা।
রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ জানান, নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।