রাজশাহীতে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। চাহিদামতো চাঁদা না দিলে রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে নানা কায়দায় হুমকি দিচ্ছে। ‘স্বৈরাচারের দোসর’ কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছে তারা। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হানা দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা বলেন, রাজশাহীতে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকাে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তারা কখনো কখনো রাজনৈতিক দলের কর্মী, আবার কখনো ডিবি পুলিশের পরিচয়ও দিচ্ছে। ফোন করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দাবি করছে। টাকার জন্য গভীর রাতে দলবেঁধে গিয়ে রুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করছে। পুলিশের অনেকে নিজেরাই ভুক্তভোগী হওয়ায় লোকজনের অভিযোগ পেয়েও কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস করছেন না। আবার কোনো প্রতিকার পাবেন না ভেবে অনেক ভুক্তভোগীও পুলিশে অভিযোগ দিচ্ছেন না। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেকে ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেড়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পট পরিবর্তনের পর থেকে পাড়ামহল্লায় গজিয়ে উঠেছে নতুন নতুন কিশোর গ্যাং। তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত, প্রকাশ্যে দলবেঁধে মাদক সেবন করতে দেখা যায়। গত মাসে শহরের তেরখাদিয়া ডাবতলায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের কবলে পড়েন গোদাগাড়ীর প্রেমতলীর নয়ন মেম্বার। কিশোর গ্যাং সদস্যরা তাঁর কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ বলে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। এ ঘটনা জানাজানির পর পরিচিতদের নিয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকায় সমঝোতা করা হয়। নয়ন মেম্বার জানান, তাঁর বিরুদ্ধে দেশের কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। যারা তাঁকে ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়েছে, তারা নিজেদের একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কিশোর-যুবকদের কয়েকটি দল সংঘবদ্ধভাবে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। রাস্তায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই পুলিশের মতো জেরা করে। টাকার দাবিতে আটকে রাখে। অনেকেই ঝামেলা এড়াতে টাকাপয়সা দিয়ে চলে যায়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গোদাগাড়ীর বিদিরপুরের এক কৃষক জানান, তাঁকে বারবার ফোন করে টাকা দাবি করা হচ্ছে। টাকা না দিলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, একজন পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘটনা জানিয়ে পরামর্শ চেয়েছিলেন। তিনি তাঁকে ফোন বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর শনিবার রাতে একটি দল বাড়ির দরজায় ধাক্কাধাক্কি করে। নগরীর কোর্ট এলাকার ব্যবসায়ী সেতাবুর রহমান বলেন, ‘ছোটখাটো ব্যবসা করি। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর নতুন উপদ্রব শুরু হয়েছে। পরিচিত অপরিচিত কিশোর-তরুণরা দলবেঁধে এসে টাকা দাবি করছে।’ বাগমারার এক ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করে তাঁর কাছ থেকে মোবাইল নম্বর নেয় এক যুবক। এরপর দিনে কয়েকবার কল করে দেখা করতে চায়। ওই ব্যক্তি দেখা করলে তাঁর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘অফিস সময় হলেই চার-পাঁচ জনের দলবদ্ধ তরুণ-কিশোর এসে হাজির হচ্ছে। কেউ টাকা, কেউ ১০টা করে ভিজিডি কার্ড চাচ্ছে।’ নগর পুলিশের মুখপাত্র সাবিনা ইয়াসমিন জানান, তাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ভুক্তভোগী কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।