রাজপথ ছাড়া কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে মতামত দিয়েছেন ৮২টি সাংগঠনিক জেলা ও ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা। পাশাপাশি শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না বলেও নেতারা মতামত দেন। দুই-একজন নেতা, বিএনপিদলীয় এমপিদের জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করারও মতামত দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, গত চার দিনে ৮২টি সাংগঠনিক জেলার একজন করে, ১০ বিভাগীয় সাংগঠনিকসহ মোট ৯২ জন নেতা উল্লিখিত মতামত তুলে ধরেন। তাদের মতামত সমর্থন করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ মূলমঞ্চে থাকা নেতারাও বক্তব্য রাখেন।
নেতারা বলেন, রাজপথে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য প্রথমত ঢাকাকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ঢাকায় থানায়-থানায় ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে কর্মসূচি করতে হবে। তৃণমূল আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। এখন ঢাকা উজ্জীবিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সারাদেশ জেগে উঠবে। রাজপথে যদি সফল হওয়া না যায়, বিএনপি বিরোধীদের কারও রেহাই মিলবে না- এ কথা মাথায় রেখে পথ চলতে হবে। দলের মধ্যে কোনো বিভেদ রাখা যাবে না। যেখানে যে সমস্যা রয়েছে দ্রুত সমাধান করতে হবে। এসব নেতা আরও বলেছেন, ঢাকায় মহাসমাবেশ শেষ করে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবারের বৈঠকে নেতারা কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। তারা বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবে কিংবা অভিপ্রায় ব্যক্ত করবেন তাদের প্রতিহত করা হবে। তারা বলেন, বিএনপির তৃণমূল কখনো বেঈমানি করেনি। কেন্দ্রীয় কিছু নেতা লোভে পড়ে বিগত দিনে দলের সঙ্গে বিশ^াসঘাতকতা করেছে, ভুল সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন। কিন্তু এবার যদি একই রকমভাবে কেউ ভুল করার সাহস দেখায় তা হলে তাকে অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, ওয়ান ইলেভেনে দলের বেঈমানরা সক্রিয় না হলে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতো না। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু বিশ^াসঘাতকের প্ররোচনায় বিএনপির হাইকমান্ড আন্দোলন থামিয়ে দেন। ২০১৮ সালেও নির্বাচনেও দলের মধ্যে কিছু লোভি ছিল। যারা ক্ষমতাসীন দলকে বিশ^াস করে শুধু নিজেদের আসন নিশ্চিত করে পুরো দলকে নির্বাচনে নিয়েছিল। নির্বাচনে তারা নিজেরা ডুবেছে, দলকেও ডুবিয়েছে। কিন্তু এবার যদি আর কোনো বেঈমানের আবির্ভাব ঘটে তা হলে তার বিচার দলের হাইকমান্ড নয়, তৃণমূল নেতাকর্মীরা যেখানে পাবে সেখানে করবে।
তারা এ-ও বলেন, সারাদেশে নেতাকর্মীদের এবার বাঁচা-মরার লড়াই। হয় জিততে হবে, নয় মরতে হবেÑ এ মন্ত্র নিয়ে সবাইকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এ আন্দোলন সফল করতে কেন্দ্রের নেতাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বেরিয়ে মাঠে আসতে হবে।
সব ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক শক্তিতে আন্দোলন করার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এ মুহূর্তে কার পদ আছে, কার পদ নেই, কে ওপরে, কে নিচে কিংবা কে মূল্যায়িত হননি সেসব নিয়ে কোন্দল করা যাবে না। আগে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রতিটি সভায়, আগামী ১০ বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে নির্দেশনা দেন দলের হাইকমান্ড। এর মধ্যে প্রত্যেক থানা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে পথসভা, কর্মিসভা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন দলের শীর্ষ নেতারা।
গত বুধবার ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আগামী ১২ অক্টোবর থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। শুরুর দিন চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং সবশেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় হবে সমাবেশ। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এসব সমাবেশ সফল করতেই এ সভা হয়েছে।