রাজনীতি গণতান্ত্রিক অধিকার, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পুনরায় রাজনীতি চালু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার।
রোববার (৩১ মার্চ) দুপুরে বুয়েটে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভিসি এসব কথা বলেন।
ভিসি বলেন, রাজনীতি না করলে শিক্ষার্থীদের চোখ খুলবে না, দেশের প্রতি তাদের প্রেম আসবে না। এই বিষয়গুলো তারা চিন্তা করে যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ছাত্ররাজনীতি ওপেন হতে পারে। তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটা যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের আবার উদ্যোগী হতে হবে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা রাজনীতি করতেই হবে এমন তো কাউকে জোর করতে পারব না। তারা যদি নিজ থেকে উদ্যোগ নেয়, আমরা শিখতে চাই, করতে চাই, প্র্যাকটিস করতে চাই, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে; আমরাও করতে চাই। তাদের যদি সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তারা চালু করতে পারে, এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
এদিকে ইমতিয়াজকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি ফেরাতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ।
সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা জানি, ছাত্র রাজনীতিতে নেগেটিভ এলিমেন্ট রয়েছে। তবে এটাকে সংস্কার করতে হবে আরো ভালো ছাত্ররাজনীতি দিয়ে। অন্ধকার রাজনীতি চর্চা করবে মৌলবাদী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের গোষ্ঠীরা। হিজবুত তাহরীর শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল ইমেইলে মেইল পাঠায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার, ক্যাম্পাসে কিউআর কোড লাগায় জঙ্গিবাদ চর্চার। আমরা চাই বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আধুনিকায়ন করে স্মার্ট ছাত্ররাজনীতি উপহার দেবে।
সাদ্দাম হোসেন আরো বলেন, বুয়েটের ছাত্র রাজনীতির কাঠামো কি রকম হবে সেটি বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই নির্ধারণ করবে। কিন্তু বুয়েটে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি থাকতে হবে। ছাত্ররাজনীতি করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আরো সমৃদ্ধ হবে। স্মার্ট ছাত্র রাজনীতি উপহার দেবে। আমরা চাই বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিকে পথ দেখাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে তারা আরো আধুনিক ও ইনক্লুসিভ করবে। ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী ছাত্র রাজনীতি তারা উপহার দেবে। তারা তাক লাগানো প্রযুক্তি তৈরি করে বাংলাদেশকে গর্বিত করবে।
ক্যাম্পাসে উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রমের বিষয়ে বুয়েট ভিসি সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, আমরা ক্লাসে সবাইকে ছাত্র বা শিক্ষার্থী হিসেবে দেখি। এর বাইরে তারা কী ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, সেটা দেখার জন্য আমাদের কোনো মেকানিজম নেই। সেই কাজ সরকার বা অন্যদের। আমরা শুধু তথ্য দিতে পারব। আমরা পরীক্ষা বা একাডেমিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু যদি কোনো রাষ্ট্রীয় বিষয় হয়, তাহলে সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দফর সম্পাদকসহ অনেকেই বিশাল বহর নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। তাদেরকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা হিসেবে দেখেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। যার প্রেক্ষিতে, ক্যাম্পাসে পুনরায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়া ও নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ বিষয়ে তারা ছাত্ররাজনীতি প্রতিরোধে ছয় দফা দাবিও জানান।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি ও কর্মসূচিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চ মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ২১তম ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও হলের সিট বাতিল করতে হবে।
২. ইমতিয়াজের সাথে বুয়েটের বাকি যেসব শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল ও টার্ম বহিষ্কার করতে হবে।
৩. রাজনীতি সংশ্লিষ্ট বহিরাগত যারা ক্যাম্পাসে ঢুকেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, তারা কেন ও কীভাবে প্রবেশের অনুমতি পেলেন- এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট জবাবদিহি দিতে হবে বুয়েট প্রশাসনকে।
৪. ১ ও ২ নম্বর দাবি আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগ চান।
৫. ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামীকাল শনিবার ও পরদিন রোববার টার্ম ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করা হবে।