এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে টানা চারটি ম্যাচ হারের পর অবশেষ জিতল পাকিস্তান। চলতি আসরে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয়বারের মতো মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান।
টস জিতে এই মাঠের ইতিহাস মাথায় রেখে বাবর আজম বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রথমত এটাই পাকিস্তানকে এগিয়ে রেখেছে।
শুরুতে ব্যাট করে ভারত তুলেছিল ১৮১ রান, জবাবে পাকিস্তান ১ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয়। তবে মাঠের খেলাতেও ভারতকে চমকে দিয়েছে পাকিস্তান।
ভালো শুরু করেও ধরে রাখতে পারেনি ভারত
ভারতের টপ অর্ডারে প্রত্যাশিত শুরু এনে দেন লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মা। গতবার নাসিম শাহ’র বলে প্রথমেই বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন রাহুল। কিন্তু এই ম্যাচে এক ওভারে দু’ছক্কা মারেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। রোহিত শর্মাও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং শুরু করেন। কিন্তু দু’জনের কেউই ২০ বলের বেশি টিকতে পারেননি।
চার ওভার দু’বলে ৫০ রান তোলা ভারত, ১০ ওভার শেষে রান করে ৯৩। এই উইকেটে আগে ব্যাট করেও এই রান শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট ছিল না।
পাকিস্তানের বোলারদের কৃতিত্ব তারা ভারতের ব্যাটসম্যানদের পুরোপুরি হাত খুলতে দেননি। স্পিনাররা আট ওভার বল করে মাত্র ৫৬ রান দিয়ে সাথে নেন ৩টি উইকেট।
পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন
বাবর আজম এই ম্যাচেও সুবিধা করতে পারেননি। দু’টি চার মেরে ১০ বলে ১৪ রান করে তিনি সাজঘরে ফেরেন তরুণ স্পিনার রবি বিষ্ণইয়ের বলে। ফখর জামানও নিজের মতো ব্যাট চালাতে পারেননি। তিনি ১৮ বলে তুলেন ১৫ রান।
তবে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট ফখরের উইকেটের পর কৌশলগত একটি পরিবর্তন আনে যা শেষ পর্যন্ত ভালো ফল দিয়েছে।
মোহাম্মদ নওয়াজকে ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে পাঠান। সাধারণত নওয়াজ লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেন। কিন্তু গত রাতে দুবাইয়ে দু’উইকেট যাওয়ার পরই তিনি ব্যাট করতে নামেন। ২০ বলে ৪২ রান করেন তিনি। মূলত মাঝের ওভারগুলো ভারতের লেগস্পিনারদের তিনি খুব ভালোভাবে সামলেছেন। নওয়াজ ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত এই ধরনের টার্গেট তাড়া করে ম্যাচ জেতান। পাকিস্তান সুপার লিগে হার্ড হিটিংয়ের জন্য সুপরিচিত তিনি।
রিজওয়ান যখন উইকেটে ছিলেন, সব চাপ নিজের কাঁধে নিয়ে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করেন নওয়াজ। তিনি মাঠে নামার পর পাকিস্তান টানা ছয় ওভারে রান নেয়- ৯, ১০, ১০, ১১, ১২, ১৬।
নওয়াজ বল হাতেও ছিলেন দুর্দান্ত, তিনি চার ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন।
ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া বলেন, ‘মোহাম্মদ নওয়াজ ভারতের জন্য ছিলেন আউট অফ সিলেবাস।’
তিনি রবিন্দ্র জাদেজার চোটের দিকেও ইঙ্গিত করে বলেন, ‘একটা মাত্র পরিবর্তন, ভারতের পুরো দৃশ্যপট বদলে গেছে।’
জাদেজা আর নওয়াজ একই ধরনের ক্রিকেটার, বাঁ হাতে বল করেন, বাঁ হাতে ব্যাট করেন, দু’ক্ষেত্রেই তারা পটু।
মোহাম্মদ রিজওয়ানের ফর্ম
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে রিজওয়ানের ব্যাটিং নিয়ে বেশ প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষত বাবরের সাথে নামলে দু’জন পাকিস্তানের ব্যাটিং মন্থর করে দেন বলে অভিযোগ তুলেন বিশ্লেষকরা। তবে রান তাড়া করার সময় রিজওয়ানের মতো একজনের প্রয়োজন রয়েছে সেটা তিনি প্রমাণ করেন।
হংকংয়ের বিপক্ষে ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পর ভারতের বিপক্ষে তিনি ৫১ বলে করেন ৭১। রিজওয়ানই ইনিংসটাকে ধরে রাখেন। এ ধরনের রান তাড়ায় উইকেট পড়ে গেলে যারা নামেন তাদের মাথায় একটা চাপ থাকে। রিজওয়ান চেষ্টা করেছেন উইকেটে টিকে থাকতে ও ডট বল না দিতে।
শেষ পর্যন্ত স্নায়ু ধরে রাখা
ভারত শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে পারেনি। ম্যাচে রোহিত শর্মাকে খুবই উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছিল, বিশেষ করে শেষ কয়েকটি ওভারে ফিল্ডিং সাজানোর সময় বা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করার সময় মনে হচ্ছিল তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
শেষ ওভারে ভারতকে বৃত্তের ভেতর একজন ফিল্ডার বাড়তি নিয়ে খেলতে হয়েছে, ওভার রেট ধরে না রাখার শাস্তি হিসেবে।
১৮ ওভারে সহজ একটি ক্যাচ ফেলে দেন আরশদিপ সিং। অনেকেই এ ক্যাচটিকেই ম্যাচ হারার কারণ হিসেবে দেখছেন। তবে সাবেক ক্রিকেটার হরভজন সিং টুইটারে লিখেন, ‘কেউ ইচ্ছা করে ক্যাচ ছাড়ে না। তরুণ আরশদিপকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করুন।’
আসিফ আলির রান ছিল তখন ১, পরে আরো ৭ বল খেলে তিনি একটি ছক্কা ও দু’টি চার মেরে পাকিস্তানের জয় সহজ করে তোলেন। এ সময় পাকিস্তানের ড্রেসিংরুমের দৃশ্য ছিল দেখার মতো। প্রতিটি রান, প্রতিটি বলের উত্তেজনা টের পাওয়া যাচ্ছিল।
পাকিস্তান ক্রিকেটের অফিসিয়াল টুইটার পাতার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দলের ক্রিকেটাররা রীতিমতো অস্থির হয়ে ছিলেন মাঠের পরিস্থিতি দেখে।
ম্যাচ শেষে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ টুইট করেন, ‘পয়সা উসুল ম্যাচ।’
সূত্র : বিবিসি