সারভাইকাল ক্যান্সার (Cervical Cancer) বা জরায়ু মুখের ক্যান্সার মহিলাদের জন্য একটি ভয়াবহ ব্যাধি। সারা বিশ্বে মহিলাদের ক্যান্সারের মধ্যে এটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৫ লাখ ৭০ হাজার নারী এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার নারী এর ফলে মারা যান। আর ৯০ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনাই ঘটছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
এই ক্যান্সারে, জরায়ুমুখে, গর্ভাশয়ে বা জরায়ুর নিচের অংশে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে নিরাময় সম্ভব, নয়তো ক্যান্সার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসকে (এইচপিভি) জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ১০০টিরও বেশি প্রজাতির এইচপিভি আছে। এর মধ্যে দুই ধরনের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের কারণে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পরপরই ক্যান্সার হয় না। গবেষকদের তথ্যমতে, এমন ও আছে যে জীবাণু প্রবেশের পর ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জরায়ুমুখের ক্যান্সার হতে।
সুতরাং সুরক্ষিত থাকতে নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের ওপর জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
জরায়ু ক্যান্সারকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রিক্যান্সারাস, আর্লি স্টেজ এবং লেট স্টেজ। প্রিক্যান্সারাস অর্থাৎ এখনও অবধি ক্যান্সার হয়নি কিন্তু এমন একটা স্টেজে আছে যে ক্যান্সার হয়ে যাওয়ার চান্স অনেক বেশি।
প্রিক্যান্সারাস, আর্লি স্টেজে অনেক সময় কোনও লক্ষণ বা উপসর্গ নাও থাকতে পারে। প্রধাণত যে লক্ষণ গুলি দেখা দেয় সেগুলি হল – অস্বাভাবিক রক্তপাত, দুই পিরিয়ডের সময়ের মাঝখানে আবারও ব্লিডিং হওয়া অথবা পিরিয়ডের সাইকেলের সময় বেড়ে যায়।
তাছাড়া যৌন মিলনের পর ব্লিডিং, মেনোপজের পর রক্তপাত, তীব্রগন্ধযুক্ত যোনি স্রাব ও জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে পড়ে।
এছাড়া আরও কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যেমন, ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, ব্যথা অনুভব করা।
রোগটা যদি ব্লাডারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে ব্লাডার সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন বার বার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা।
একইভাবে রেকটামে ছড়িয়ে পড়লে রেকটামে ব্লিডিং হতে পারে বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।
সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব ক্যান্সার অপসারণ করা হয়। এছাড়া রেডিয়েশন উচ্চ-শক্তি এক্স-রে বিম ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষকে হত্যা করা হয়। এবং কেমোথেরাপি অর্থাৎ সারা শরীরে ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলার জন্য ওষুধ ব্যবহার করে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেমোথেরাপি কয়েকটি ধাপে ধাপে করা হয়।
নারীদের জন্য জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার খুবই ভয়াবহ একটি রোগ। বিশেষ করে যেসব নারী কর্মক্ষেত্র ও বাড়িতে বেশিরভাগ সময় বসে কাটান, তাদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে,
১. মানসিক সমস্যা বা স্নায়ুর সঙ্গে যুক্ত মনের রোগে আক্রান্ত নারীদেরও জরায়ুমুখের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ।
২. ধূমপান ও জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি, এই দুটির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারেও নারীরা জরায়ুমুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
৩. এছাড়া অনিরাপদ যৌনমিলন ও জরায়ু মুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।