শনিবার, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বিজয় একাত্তর হল সভাপতি সজিব গ্রেফতার বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে অস্ত্র-বোমা উদ্ধার করল সেনাবাহিনী পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন বন্ধে জোরদার হচ্ছে অভিযান আইসিউতে মুশফিক ফারহান সাবেক প্রতিমন্ত্রীর চাচাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে পিটুনি ফ্যাসিবাদের ঘৃণাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ কর্মসূচি তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আগামী সোমবার লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ১২০ দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে কমিশন

যেসব কারণে ৮ বছর পর ফের জাতীয় দলে রনি তালুকদার

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩
  • ৭৫ বার পঠিত

“বাবা বেঁচে থাকলে আরো বেশি খুশি হইতো”- ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে ডাক পেয়ে মরহুম বাবাকে স্মরণ করলেন রনি তালুকদার।

জাতীয় দলে ফিরছেন রনি, এই খবরটি তিনি পান নির্বাচক কমিটির সদস্য সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ফোন কলে।

সাথে সাথে মাকে ফোন দিয়ে জানান রনি তালুকদার।

রনি তালুকদার বিবিসি বাংলাকে বলেন মা আগেই বলেছিলেন, ‘এবার ডাকতে পারে’।

“প্রথমে বাশার ভাই যখন আমাকে ফোন দিয়ে জানালেন মাকেই জানালাম প্রথমে। মায়ের বিশ্বাস ছিল যে ‘তোকে নিতে পারে। ভালো খেলছিস’ এটা মা বিশ্বাস করতেন।”

নারায়ণগঞ্জের এই ক্রিকেটারের বাড়িতে এখন যে আনন্দ বইছে এমন সময় শেষ এসেছিল ২০১৫ সালে, যখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে ডাক পেয়েছিলেন।

মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাকে দেখা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ জাতীয় দলে আর রনি তালুকদারকে ডাকা হয়নি।

ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় তারকা
তামিম ইকবাল ছিলেন নিয়মিত ওপেনার তিন ফরম্যাটেই, তামিমের সাথে কখনো সৌম্য সরকার, কখনো ইমরুল কায়েস ব্যাট করতে নেমেছেন। মাঝেমধ্যেই এনামুল হক বিজয় এই সুযোগ পেয়েছেন।

সব শেষ থিতু হয়েছেন লিটন দাস কিন্তু রনি তালুকদার এই আট বছর একবারও ডাক পাননি। অথচ ২০১৪-১৫ সালে যখনই নির্বাচকরা দল নির্বাচনের জন্য আলোচনার টেবিলে বসেছেন রনি তালুকদারের নামটাই সবার আগে আসতো।

রনি তালুকদার ছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় তারকা। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রনি তালুকদার ৭১৪ রান তুলেছিলেন, এই তালিকায় তার পেছনে ছিলেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে চলতি ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচের ম্যাচসেরা ডেভিড মালান ও রনি তালুকদার তখন একই ক্লাব প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে খেলতেন। রনি তালুকদার ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি সিরিজ খেলে হুট করেই জাতীয় দলের দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলেন।

আর ফিরলেন আট বছর পরে, তাই রনি তালুকদারের জাতীয় দলে ফেরা বাংলাদেশের ক্রিকেটে তাৎপর্যময় একটা ঘটনা। এর বড় কারণ রনি তালুকদারের বয়স।

ফিটনেস নিয়ে আলাদা কাজ
বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে একটা বয়সের পরে বাদ পড়া ক্রিকেটারদের ফেরা কঠিন হয়ে যায়। শাহরিয়ার নাফীস, তুষার ইমরান, নাইম ইসলামদের মতো ক্রিকেটাররা দিনের পর দিন পারফর্ম করেও জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হননি।

রনি তালুকদার এদিক থেকে পৃথক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। ৩২ বছর বয়সে জাতীয় দলে ফেরা রনি তালুকদার নারায়ণগঞ্জের একটি ক্রিকেট একাডেমিতে নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশে যেহেতু ঘরোয়া ক্রিকেট নির্দিষ্ট সময়েই আয়োজিত হয়, তাই জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে বাড়তি যত্ন নেয়াটা কঠিন হয়ে যায়।

বিবিসি বাংলাকে রনি তালুকদার বলেন, “আমি সবসময়ই কাজ করে গেছি। নারায়ণগঞ্জে আমাদের ট্রেনার সাজু দত্ত, ওনার সাথে কাজ করেছি।”

“আমি জানতাম এক সময় আমার সুযোগটা আসবে।” রনি তালুকদারের বিশ্বাস, দল যদি ভালো না করে তাহলে ব্যক্তিগত সাফল্যের খুব একটা মূল্য নেই।

কোথায় পরিবর্তন এসেছে?
রনি তালুকদার একটা সময় পর্যন্ত চেষ্টা করতেন প্রতি বলে ছয় মারতে কিন্তু সেটা ক্রিকেটে খুব একটা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি।

“রনি সমস্যা যেটা ছিল ওভার দ্য টপ শট খেলতো বেশি। নরমালি চিন্তা করতো সব বলে ছক্কা মারতে।” এবারের বিপিএলে এটা পরিবর্তন হয়েছে বলছেন সামি।

“এবারে দেখবেন খুব বেশি ছয় মারেনি, ৫০ এর ওপর চার মেরেছেন”। তার মতে রনি তালুকদারের, টেকনিকের পরিবর্তন নয়, মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে।

নারায়ণগঞ্জের পাগলায় নিজেদের একাডেমিতে নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে গেছেন বিশেষ পদ্ধতিতে যেখানে ৬০০ গ্রাম ওজনের বল দিয়ে ব্যাট করেছেন।

এই বলের ভেতরে কিছু ম্যাটেরিয়াল থাকে, যার কারণে নরমাল বলের ওজন। এই বল দিয়ে রনি অনুশীলন করেছেন। নরমাল বলের চেয়ে এই বলে হিট করা কঠিন বলছেন সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি। রংপুর রাইডার্সের অনুশীলনে এই বলগুলো দেখা গেছে।

রংপুর রাইডার্সের প্লে অফ খেলায় বড় ভূমিকা রেখেছেন
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ মৌসুমে নিজের দল রংপুর রাইডার্সকে প্লে-অফে তুলতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন রনি তালুকদার। তিনি একটা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছেন।

“আমার মাথায় ছিল যে যদি ১০ বলের জন্যও সুযোগ পাই এমন কিছু করবো যাতে দলের উপকার হয়। নতুবা ১০০ রান করলেও লাভ নেই যদি দল না জেতে।”

রংপুর রাইডার্স শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠতে পারেনি তবে দ্বিতীয় সেমিফাইনালেও রনি তালুকদার ৫২ বলে ৬৬ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন। ১৩ ম্যাচে চার শ’র বেশি রান তুলে নির্বাচকদের নজরে আবারো এসেছেন রনি তালুকদার।

মূল একাদশে জায়গা পাবেন কিনা, সেটা এখন অধিনায়ক ও কোচের ওপর নির্ভর করবে কিন্তু রনি তালুকদার মনে করেন জাতীয় দলে ফেরার, ‘জার্নিটাই স্পেশাল’।

মাত্র এক ম্যাচ খেলার পর আর রনি তালুকদারকে বিবেচনা করা হয়নি আট বছর আগে। রনি তালুকদার মনে করেন জাতীয় দল এমনই জায়গা, যেখানে সুযোগ পাওয়া মাত্র কাজে লাগাতে হবে।

“পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচ কিভাবে খেলতে হবে, চার দিনের ম্যাচ কিভাবে খেলতে হবে এবং টি-টোয়েন্টি কিভাবে খেলতে হবে সেটা আমাকে জানতে হবে। আমার সুযোগ আসবে এবং আমি সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।”

নির্বাচকরা নিয়মিত রনি তালুকদারের খোঁজ রেখেছেন বলে জানান তিনি।

একটা বার্তাও তাকে দিয়ে রেখেছিলেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর নির্বাচক প্যানেল- ‘যদি ভালো করো, বয়স কোনো ব্যাপার না’।

বিপিএল নিয়ে ‘আলাদা পরিকল্পনা
রনি তালুকদার বিশ্বাস ধরে রেখে চেষ্টা করে গেছেন, “আপনি যদি ভালো খেলেন অবশ্যই সুযোগ পাবেন। বয়সটা কোনো ব্যাপার না। নির্বাচকরা এমন বার্তা দিয়ে রেখেছেন।”

“আপনি যদি ফিট থাকেন, প্রভাব রাখতে পারেন ম্যাচে অবশ্যই দলে ডাক পাবেন আপনি।”

“আমি দোয়ায় বিশ্বাস করেছি এবং কাজ করে গেছি।”

তবে এবারের বিপিএলটায় ‘আলাদাভাবে পরিকল্পনা’ ছিল রনি তালুকদারের মাথায়।

তামিম ইকবাল গত বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরে গেছেন, নাইম শেখ দলের এবং নির্বাচকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি, সৌম্য সরকারকেও সুযোগ দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের প্রতিশ্রুতি শেষ পর্যন্ত রাখতে পারেননি।

এই একটা জায়গায় বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে একটা শূণ্যস্থান তৈরি হয়েছে।

এখন নির্বাচকদের হাতে নাজমুল হোসেন শান্তর সাথে আরো একজন বিকল্প ওপেনার আছে।

এটাকে বড় সুযোগ হিসেবেই দেখছেন রনি তালুকদার।

বিবিসি বাংলাকে রনি তালুকদার বলেন, “আমার আগেই পরিকল্পনা ছিল। ভালো খেলতে সবাই চায়, আমি চেষ্টা করে গেছি দলকে জেতাতে। দল যদি জেতে, তারপর যদি আমি পারফরম্যান্স ভালো করতে পারি, নির্বাচকরা তো দেখবেনই।”

জাতীয় দলে খেলা প্রতিটা ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন তাই মাঝের আটটা বছর রনি তালুকদার কখনোই আশা হারাননি।

খারাপ সময়ও এসেছে তবে তিনি ভালো সময়টাকেই মনে রাখতে চান, “ভালো খারাপ মিলিয়েই গেছে। তবে আমি ভালোটাই মনে রাখতে চাই। আমি খুশি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে।”

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com