কমবেশি সব মানুষই নিজের সৌন্দর্য উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে বাহ্যিক সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ আগে দর্শনধারী, তারপর গুণবিচারী। সুদর্শন মানুষের প্রতি সবার আকর্ষণ জন্মগত। গোত্র, বর্ণ অনুযায়ী মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের (নাক, চোখ, ঠোঁট ইত্যাদি) গড়ন ভিন্ন হয়ে থাকে। জন্মগত কারণ, দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি, ক্যানসার বা পুড়ে যাওয়ায় মানুষের সৌন্দর্যহানি ঘটতে পারে। তবে এখন শরীরের আক্রান্ত অংশের গঠন ফিরিয়ে আনা, সেই অংশ পুনরুদ্ধার করে সৌন্দর্য রক্ষা করা চিকিৎসকদের কাছে এখন সাধারণ বিষয়। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অ্যাসথেটিক বা কসমেটিক সার্জারি এক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলছে।
যেসব ক্ষেত্রে কসমেটিক সার্জারি : দুর্ঘটনায় সৌন্দর্য বা পুড়ে যাওয়া অংশের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কসমেটিক সার্জারি একটি প্রক্রিয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাধিকবার অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। অগ্নিদগ্ধ রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় পুড়ে যাওয়ার কারণে কাঁধ, হাত-পা ইত্যাদি অঙ্গের টিস্যু শক্ত হয়ে গিয়ে সেগুলোর স্বাভাবিক সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়। রোগীর এসব অঙ্গ ব্যবহার করে কাজকর্ম করা অনেকটা সীমিত হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়া অঙ্গের শক্ত হয়ে যাওয়া টিস্যু অপসারণ করে শরীরের অন্য কোনো অংশের সুস্থ টিস্যু প্রতিস্থাপন করে অঙ্গটির স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। ঠোঁটকাটা বা তালুকাটা সমস্যায়ও এমন সার্জারির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।
অতিরিক্ত চর্বির কারণে পেটের স্থূলভাব ধারণ করে এবং চামড়া ঝুলে পড়তে পারে। লাইপোসাকশন অথবা অ্যাবডোমিনোপ্লাস্টি (টামিটাক অপারেশন) অথবা দুটি পদ্ধতি একসঙ্গে ব্যবহার করে পেটের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
পুরুষের স্তন বড় হলে লাইপোসাকশন বা দাগবিহীন সার্জারির মাধ্যমে পুরুষালি শারীরিক গঠন দেওয়া সম্ভব। ভোঁতা নাক, নাকের বাঁশি বাঁকা অথবা প্রসারিত নাকের মানুষ অ্যাসথেটিক রাইনোপ্লাস্টির মাধ্যমে সুন্দর নাকের অধিকারী হতে পারেন। পুরু ঠোঁট চিকন করা এবং পাতলা ঠোঁট ফ্যাট গ্রাফটিং বা ফিলারের মাধ্যমে পুরু করে তোলা। কোঁচকানো চোখের পাতা (ওপর/নিচ) সার্জারির মাধ্যমে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বোটক্স থেরাপির মাধ্যমে ত্বক টান টান করা সম্ভব। ভুরুর সৌন্দর্য বাড়ানোর অস্ত্রোপচার। সার্জিক্যাল ও ননসাজিক্যাল পদ্ধতিতে মুখম-লের কোঁচকানো চামড়া টান টান করা যায়। অনেকেই নিতম্বের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য আসেন। ফ্যাট গ্রাফটিং বা ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে নিতম্বের গঠন আকর্ষণীয় করা সম্ভব। শরীরের যে কোনো ছোটখাটো অসঙ্গতিও দূর করা যায়। দেশেই এখন এমন সার্জারি হচ্ছে সমস্যা ছাড়াই। দুর্ঘটনা-পরবর্তী বিভিন্ন অঙ্গের আকৃতি আগের মতো বা সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে কসমেটিক সার্জারি হতে পারে উত্তম চিকিৎসা।
লেখক : চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন