যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত খালিস্তানপন্থী এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে ভারতের বিরুদ্ধে। আজ বৃহস্পতিবার এ অভিযোগের জবাব দিয়েছে নয়াদিল্লি। খবর বিবিসির।
এর আগে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক একজন খালিস্তানপন্থী নেতাকে মার্কিন মুলুকে বসেই হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, আর এ নিয়ে ভারতকে সতর্কও করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র কয়েকজন অপরাধী ও সন্ত্রাসীসহ অন্য কয়েকজনের সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’
ফিনান্সিয়াল টাইমস দাবি করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সেদেশের নাগরিক একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যার ষড়যন্ত্র তারা ব্যর্থ করেছে এবং ওই ষড়যন্ত্রে ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে ওই প্রতিবেদনে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি। ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, ওই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার নাগরিক গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু, যিনি ‘শিখস্ ফর জাস্টিস’ নামে একটি সংগঠনের আইনজীবী। ওই সংগঠনটি একটি স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান গঠনের প্রচারাভিযান চালায়।
পান্নুকে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী ঘোষণা করে ভারত।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবর অনুযায়ী, জুন মাসে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার পর, পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের তথ্য তার মিত্র দেশগুলোকে জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত জুনে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরের পরে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতকে সতর্ক করার পাশাপাশি মার্কিন সরকারি আইনজীবীরা কথিত ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নিউইয়র্ক জেলা আদালতে একটি সিলমোহর খামে মামলা দায়ের করেছেন।
বর্তমানে মার্কিন বিচার বিভাগে আলোচনা চলছে যে, ওই মামলাটি জনসমক্ষে আনা হবে নাকি নিজ্জারের মৃত্যু নিয়ে কানাডা যে তদন্ত চালাচ্ছে, সেটা শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে।
ব্রিটিশ সংবাদপত্রের খবরে বলা হয়, মার্কিন বিচার বিভাগ এবং এফবিআই এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদও এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি।
তারা শুধু জানিয়েছে, তারা আইনি বিষয় এবং গোপনীয় কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করে না। ভারতের আপত্তির পর ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে কি না বা এফবিআই হস্তক্ষেপ করে কোনো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছে কি না তা জানায়নি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি জারি করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ‘ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার সময় মার্কিন পক্ষ সংগঠিত অপরাধী, অবৈধ বন্দুক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী এবং অন্যান্যদের সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের কাছে ভাগ করে নিয়েছে। এই তথ্য উভয় দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় এবং তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাগচী আরও বলেন, ‘ভারত তাদের দিক থেকে এই তথ্যকে গুরুত্ব-সহকারে নিয়েছে কারণ এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও আঘাত হানছে।’
গুরপতওয়ন্ত সিং পান্নু একজন খালিস্তানপন্থী আমেরিকান আইনজীবী। পাঞ্জাবের অমৃতসরের কাছে আদি বাসস্থান ছিল তার। তাকে প্রায়শই কানাডায় খালিস্তানপন্থী অনুষ্ঠান এবং বিক্ষোভে দেখা যায়।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রশাসন তাকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল কিনা তা বলতে অস্বীকার করেছেন পান্নু।
পান্নু বলেন, ‘আমেরিকার মাটিতে আমেরিকান নাগরিকদের জন্য হুমকি আমেরিকার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং আমি নিশ্চিত যে বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম।’ পান্নু গত সপ্তাহে শিখদের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ভ্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেছিলেন।