চলতি বছরের জুলাই মাসে পদ্মা সেতুর চেয়ে যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুতে বেশি যানবাহন পার হয়েছে। তারপরও টোল আদায়ে যমুনাকে ছাড়িয়ে গেছে পদ্মা। আজ বুধবার সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর টোল আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত ২৫ জুন চালু হওয়ার পর পদ্মা সেতুতে জুলাই মাসে টোল এসেছে ৭৮ কোটি ৫০ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা। একই মাসে যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল উঠেছে ৬৬ কোটি ৩২ লাখ ১১ হাজার ৯৫০ টাকা।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, জুলাই মাসে পদ্মা সেতুর চেয়ে বেশি যানবাহন পার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুতে। জুলাইয়ে পদ্মা সেতু পার হয়েছে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ২০টি যানবাহন। একই মাসে বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করেছে ৭ লাখ ৮০ হাজার ১০১টি যানবাহন। তবে এর বড় অংশই মোটরসাইকেল। দুর্ঘটনা এড়াতে উদ্বোধনের দুদিন পর থেকেই পদ্মায় মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় টোল হার প্রায় দ্বিগুণ। তাই পারপার হওয়া যানবাহনের সংখ্যা কম হলেও দেশের দীর্ঘতম সেতুতে টোল এসেছে বেশি। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩২ আসনের বেশি বাসের টোল ১ হাজার টাকা। পদ্মা সেতুতে সমজাতীয় বাসের টোল ২ হাজার টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুতে মিনিবাসের টোল ৭৫০ টাকা। পদ্মায় তা ১ হাজার ৪০০ টাকা।
এ ছাড়া ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাসের টোল ৬০০ টাকা। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুতে এই গাড়ির টোল ১ হাজার ৩০০ টাকা। প্রাইভেটকারের টোল ৭৫০ টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে প্রাইভেটকারকে দিতে হয় ৫৫০ টাকা। পণ্যবাহী যানেও পদ্মা সেতুর টোল প্রায় দ্বিগুণ। চার এক্সেলের ট্রেইলার পদ্মা সেতু পার হতে টোল ৬ হাজার টাকা। যমুনায় তা ৩ হাজার টাকা।
৩ হাজার ৮৪০ কোটির বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২৪ বছরে মাসওয়ারি হিসাবে গত ডিসেম্বরে রেকর্ড ৬৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা টোল আদায় হয়। জুলাইয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টোল ওঠে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭ হাজার ২৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা টোল এসেছে। যদিও এখনো সেতু নির্মাণে নেওয়া বিদেশি ঋণ শোধ হয়নি। ২০৩৪ সাল পর্যন্ত কিস্তি টানতে হবে।
পদ্মা সেতুতে জুলাই মাসে দৈনিক গড়ে ১৮ হাজার ৯৩৬টি করে যানবাহন চলেছে। সেতুর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে দৈনিক গড়ে ৪১ হাজার ৫৫০ যানবাহন চলবে। গত ৮ জুলাই সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৭২৩টি গাড়ি পদ্মা সেতু পারাপার হয়।
জুলাইয়ে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পার হওয়া ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬১২টি গাড়ি থেকে টোল এসেছে ৪০ কোটি ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা। জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পারপার হওয়া ২ লাখ ৯২ হাজার ৪০৮ গাড়ি থেকে আদায় হয়েছে ৩৮ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ টাকা।
প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, প্রথম বছরে পদ্মা সেতুতে ৫৪৩ কোটি টাকা টোল আদায় হবে। তবে আশা করা হচ্ছে, এর দ্বিগুণ বা কাছাকাছি টোল উঠবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে।
এ ছাড়া ১২তম বছরে কিস্তি ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়ের চেয়ে টোল বেশি আদায় হবে পদ্মা সেতুতে। ৩৫ বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা টোল উঠেবে। কিস্তি, ভ্যাট ও আয়কর, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায়ের খরচ ও সংস্কারের ব্যয় মিটিয়ে ৩৫ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা দেবে পদ্মা সেতু।