গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
মোবাইল ফোনে বাদানুবাদের জের ধরে শুক্রবার রাতে বরিশালের গৌরনদীতে সিকদার (২২) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা।
শনিবার সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড় দুলালী গ্রামের কালাম সিকদারের ছোট ছেলে ও রাজধানী ঢাকার প্লাষ্টিক পন্যের ব্যবসায়ী রাশেদ সিকদারের সাথে সম্প্রতি মোবাইল ফোনে তাদের প্রতিবেশী হামিম তালুকদার ও তার সহোদর আল আমিন তালুকদারের বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামিম ও আল আমিন রাশেদকে মারধর করার হুমকি দেয়।
রাশেদের বড়ভাই রাসেল সিকদার জানান, এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর রাশেদ তবলিগ জামায়াতের ৪১ দিনের চিল্লায় যায়। সেখান থেকে গত ১০ আগষ্ট সে ঢাকায় ফেরে। ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫আগষ্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হামিম-আল আমিন এলাকায় বে-পরোয়া হয়ে ওঠে। তারা পূর্নরায় মোবাইল ফোনে রাশেদকে মারধরের হুমকি দিয়ে বলে মাইরের হাত থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের জন্য এক লক্ষ টাকা নিয়ে এলাকায় আসবি। না হলে এলাকায় আসবি না। ওদের হুমকি উপেক্ষ করে আল আমিন শুক্রবার সকালে এলাকায় ফিরে আসে। ওইদিন শেষ বিকেলে সে পরিবারের বাজার করার জন্য বার্থী বাজারে যায়। সন্ধ্যার পূর্বক্ষনে হামিম, আল আমীন তাদের ১০/১২জন সহযোগী নিয়ে রাশেদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার ভাই কোন রাজনীতি করতনা। সে আমার সাথে ঢাকায় প্লাস্টিকের ব্যবসা করত। তাকে যারা পিটিয়ে মেরেছে তারা তারা সবাই বিএনপির লোক। শুনেছি তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানের সমর্থক।
বার্থী বাজারের খান ভ্যরাইটি ষ্টোরের মালিক মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, ১০/১২ জনের হামলার মুখে আত্নরক্ষার জন্য রাশেদ দৌড়ে এসে আমার দোকানে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা হুরমুর করে আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে রাশেদকে কিল ঘুসি ও লাথি মারতে থাকে। এতে আমার দোকানের মালামাল তছনছ হয়। এক পর্যায়ে আমি রাশেদকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করে হামলাকারীদেরকে দোকান থেকে বের করে দেই। এর কিছুক্ষন পর হামিম, আল আমিনের ভগ্নিপতি ওই বাজারের পেট্রল-ডিজেল ব্যবসায়ী সুমন সরকার এসে রাশেদকে তার বাড়িতে পৌছে দেয়ার কথা বলে আমার দোকান থেকে রাশেদকে নিয়ে যায়।
সুমন সরকার জানান, আমি অত্যান্ত মনোবল নিয়ে রাশেদকে নিরাপদে তার বাড়িতে পৌছে দেয়ার জন্য রওনা হই। পথিমধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বার্থী বাজার মসজিদের কাছে গেলে আমার শ্যালক হামিম, আল আমিন ও তাদেও সহযোগীরা পূনঃরায় রাশেদের ওপর হামলা চালায়। তারা কাঠের লাকড়ি দিয়ে রাশেদকে এলোপাতাড়ি পিটায়। এতে রাশেদ অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকগন দ্রুত তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গভীর রাতে তাকে ঢাকায় নিয়ে রওনা হন স্বজনরা। তাকে বহনকারী এ্যাম্বুলেন্স মাদারীপুরের শিবচর থানার পাঁচচর এলাকায় পৌছলে রাশেদ মৃত্যুও কোলে ঢলে পড়ে।
হত্যাকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার ওসি মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘঁনায় নিহত রাশেদ সিকদারের বড়ভাই রাসেল সিকদার বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অপ্সাতনামা আরও ৫/৬জনকে আসামী করে শনিবার সকালে গৌরনদী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য নিহতের লাশ বরিশাল মর্গে পাঠিয়েছে। আসামীদের গ্রেফতাওে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।