ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী মেহজাবীনের বড় পর্দায় অভিষেক হতে যাচ্ছে। চুপিসারে সেই ছবির শুটিংও সেরে নিয়েছেন তিনি। এত দিন ছিল খবরটি প্রকাশ্যে আনার পালা। ‘প্রিয় মালতী’ নামে সেই ছবির ঘোষণা এল গতকাল। রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ছবিটির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। নারীপ্রধান গল্পের এমন একটি সিনেমায় প্রধান চরিত্রের অংশ হতে পেরে মেহজাবীনও আনন্দিত।
বাবার চাকরিসূত্রে মেহজাবীনের ছেলেবেলা কেটেছে ওমান ও দুবাইয়ে। মরুর দেশ থেকে ২০০৮ সালে দেশে ফেরেন তিনি। পরের বছর নাম লেখান লাক্স–চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায়। এ আয়োজনে চ্যাম্পিয়ন হয়েই অভিনয় অঙ্গনে পথচলা শুরু তাঁর। এরপর কেটে গেছে ১৫ বছর। চার শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। বিচিত্র সব চরিত্রে তাঁকে পর্দায় পেয়েছেন দর্শকেরা। তবে মেহজাবীনের শুরুটা হয়েছিল ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, ‘তুমি থাকো সিন্ধুপারে’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। এটি পরিচালনা করেন ইফতেখার আহমেদ ফাহমি।
বড় পর্দায় অবশ্য মেহজাবীনের অভিষেক হওয়ার কথা ছিল দেড় দশক আগে। ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মহরতও হয়েছিল। ‘ওয়ারিশ’ নামে সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করার কথা ছিল আরিফিন শুভর।
ছবিটি বানানোর কথা ছিল সালাহউদ্দিন লাভলুর। সেই ‘ওয়ারিশ’ ছবিটি আজও তৈরি হয়নি। এদিকে আরিফিন শুভ বড় পর্দায় ব্যস্ত হলেও মেহজাবীনকে দেখা যায়নি। নাটক, টেলিছবি ও ওয়েব সিরিজ আর ওয়েব ফিল্ম নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। নানান সময় পরিচালকেরাও তাঁকে নিয়ে বড় পর্দায় আনতে চেয়েছেন। কিন্তু তা চূড়ান্ত রূপ পেতে এতটা সময় লেগে গেল। প্রথমবারের মতো প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রিয় মালতী সিনেমাটি। মেহজাবীন চৌধুরীর জন্য এ যেন স্বপ্নের দিনের মতো। সেই সঙ্গে তাঁর দর্শকের জন্যও বড় সংবাদ।
‘প্রিয় মালতী’ ছবিটির পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত। ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি এ বছরের কোনো একটা সময় মুক্তি দেওয়া হবে দেশের প্রেক্ষাগৃহে। গতকাল ১৯ এপ্রিল ছিল মেহজাবীনের জন্মদিন, এদিন বিকেলে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে জমকালো আয়োজনে সিনেমার ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথমেই মঞ্চে আসেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা। মেহজাবীনকে নিয়ে মজার তথ্য দিয়ে তিশা বলেন, ‘মেহজাবীন তার জেনারেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী অভিনেত্রী। সিনেমার জন্য সে নিজেকে দুর্দান্তভাবে প্রস্তুত করেছে।’ এরপর মঞ্চে আসেন আশফাক নিপুন ও এলিটা করিম। নিপুন বলনে, ‘মেহজাবীন অভিনয়ে নিজেকে যেভাবে গড়েছেন, সেটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’
‘প্রিয় মালতী’ ছবির অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফ্রেম পার সেকেন্ডের প্রযোজক আদনান আল রাজীব বলেন, ‘প্রডিউসিং কাজটা আমার জন্য একটু ভিন্ন। প্রথমত, পুরো বিশ্বে প্রডিউসিং মানে শুধু টাকা বিনিয়োগ না। এটা আসলে ক্রিয়েটিভের সঙ্গে থাকা, টিজি কারা হবে, গল্পটা কেমন হবে, সিনেমা মুক্তি নিয়ে কাজ করা। এটা পুরো একটা প্রক্রিয়া। আমি এই প্রক্রিয়াটার সঙ্গেই থাকতে চেয়েছি। আর দ্বিতীয়ত, ‘প্রিয় মালতী’র গল্পটা একদম ইউনিক। এই গল্পটা শঙ্খ (পরিচালক) যখন আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে, তখনই সবাই পছন্দ করি। এমন গল্প আমরা কখনো দেখিনি। সেই সঙ্গে মেহজাবীন এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় অন্য একটা মাত্রা যোগ হয়েছে।’
আরেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চরকির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘এই সিনেমার সঙ্গে থাকতে পারাটা আমার জন্য খুব ইমোশনের। প্রতিটা সিনেমা স্পেশাল। কাছের মানুষজন নিয়ে একটা সিনেমা নির্মাণ করার আনন্দটা ভাষার প্রকাশ করার না। গুণী পরিচালক, গুণী অভিনেত্রীসহ দুর্দান্ত একটা টিম এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সিনেমা হলে দর্শকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছানোটা এখন আমাদের অপেক্ষা।’
‘প্রিয় মালতী’ ছবির পরিচালক শঙ্খ দাশগুপ্ত বলেন, ‘সিনেমা বানানোটা আমার কাছে সব সময় কষ্টের কাজ মনে হয়। তবে ‘প্রিয় মালতী’ কাজটা আমার জন্য একদম সহজ করে দিয়েছে দুই প্রযোজক। আমি শুধু নির্মাণ ও গল্প নিয়েই ভেবেছি। সেই সঙ্গে যাদের কাস্ট হিসেবে চিন্তা করেছি, তাদের সঙ্গে পেয়েছি। মেহজাবীনের মতো অভিনেত্রীকে নিয়ে কাজ করতে পারাটাও আনন্দের। এই সিনেমার ক্যামেরার সামনে-পেছনে যাঁরাই কাজ করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
মেহজাবীন তাঁর কাজ দিয়ে দর্শককে কখনো হাসিয়েছেন আনন্দে, কখনো ভাসিয়েছেন দুঃখের সাগরে। তবে মানুষের মনে ধীরে ধীরে নিজে স্থান যে তিনি পোক্ত করেছেন, তা মেহজাবীনের বর্তমান পরিস্থিতি দেখলেই আন্দাজ করা যায়। চরকিতে ‘রেডরাম’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে ওটিটিতে যাত্রা শুরু করেন মেহজাবীন। তিনি নিজেই বেশ রোমাঞ্চিত এই সিনেমা নিয়ে। মেহজাবীন বললেন, ‘জন্মদিনে সিনেমার ঘোষণা আমার জন্য খুবই বিশেষ। এই সিনেমায় দর্শক ভিন্ন এক মেহজাবীনকে দেখতে পাবে। এমন একটা টিমের সঙ্গে কাজ করতে পেরে নিজেকে সত্যিই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’
‘প্রিয় মালতী’ ছবিতে মেহজাবীন ছাড়াও অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী, শাহজাহান সম্রাট, রিজভী রিজু প্রমুখ। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ঢাকা-বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ছবির শুটিং হয়েছে। সিনেমার নাম ঘোষণার পাশাপাশি কেক কেটেও উদ্যাপন করা হয় মেহজাবীনের জন্মদিন। এ আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন মোস্তফা মন্ওয়ার, জেফার রহমান, রাকা নওশীন নাওয়ার এবং সাংবাদিক, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ফিল্মি ফিচার, ফ্রেম পার সেকেন্ড ও চরকির সদস্যরা।
এদিকে এ বছরের শুরুর দিকে আরেকটি ছবিতে অভিনয়ের জন্যও খবরে এসেছিলেন মেহজাবীন চৌধুরী। ‘সাবা’ নামে সেই ছবির পরিচালক মাকসুদ হোসেন। ২০২১ সালে সিনেমাটি ভারতের ফিল্ম বাজারে জায়গা করে নিয়েছিল। পরে ২০২২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের কো-প্রোডাকশন মার্কেটে নির্বাচিত হয়। কোরিয়ার এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে বাংলাদেশের এই সিনেমার চিত্রনাট্য অংশ নিয়েছিল।