মৃত্যুর ১৪ বছর পর কবরে মিলল ক্ষত লাশ, কাফনের কাপড়ে লাগেনি সামান্য দাগ। চারপাশে চিকচিক করছে পরিষ্কার বালু। ঘটনাটি ঘটছে রংপুর মহানগরীর নব্দিগঞ্জ গোদা-শিমলা এলাকায়।
গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইনের কাজ করার কারণে কবর স্থানান্তরের সময় ঘটেছে বিরল এই ঘটনা। দ্বিতীয় বার মৃত মানুষকে অবিকল দেখতে পেয়ে অবাক হয়েছে স্বজন ও স্থানীয়রা।
ইসলামিক স্কলারদের দাবি, আল্লাতর বিধি-নিষেধ মান্যকারী মানুষের রিজিকও কবরে হয়। তাদেরকে কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। ওই ব্যক্তির বেলায়ও হয়েছে তাই।
এই বিরল ঘটনা ছিল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেলের। রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রংপুর মহানগরীর গোদা শিমলা এলাকায় গ্যাসের সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণকাজ চলায় স্থানীয় কয়েকটি কবর স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় স্বজনরা। দু’দিনে চারটি কবর স্থানান্তরের পর আরেকটি কবর খুড়তেই ঘটে আশ্চর্য এই ঘটনা। দেখা গেল অক্ষত অবস্থায় ধবধবে সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো আছে লাশ। পিঁপড়াও স্পর্শ করেনি কাফনের কাপড় কিংবা শরীর। ১৫ বছর আগে দাফন করার সময় যেভাবে কেবলামুখী করে রাখা হয়েছিল, সেভাবেই আছে লাশটি।
জানা গেছে, ২০১০ সালে সেখানে দাফন করা হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদকে। তখন তার বয়স হয়েছিল ১২৩ বছরেরও বেশি।
লাশ উত্তোলনে অংশ নেয়া মরহুম আব্দুস সামাদের ছেলে নুর উন নবী ইসলাম বলেন, ‘২০১০ সালে আমার বাবা যেদিন মারা যান সেদিন নিজে বাড়ি থেকে হেঁটে গিয়ে পুকুরে গোসল করেছিলেন। গোসল করে বাড়িতে গিয়ে চেয়ারে বসার পর পরই মৃত্যু হয়েছিল তার। সড়ক ও জনপথের জায়গায় আমাদের পারিবারিক কবরস্থান পড়ে যাওয়ায় আমরা কবরগুলো সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছি। দু’দিনে ছোট মায়ের কবরসহ চারটা কবর তুলি। যখন বাবার কবর তোলার জন্য হাত লাগাই, খোড়াখুড়ি শুরু করি প্রথমে দেখা গেল যে সাদা কাপড়। তখন কোদাল চালানো বন্ধ করি। পরে হাত দিয়ে মাটি সরাতে থাকলাম। দেখলাম আয়নার মতো বালু। বালুটাকে মনে হচ্ছিল আয়না, ঝকঝকা। পরে রাজমিস্ত্রির করনি দিয়া বালু সরাই। এরপর পুরা লাশটা পাওয়া গেল। যেভাবে ২০১০ সালে রাখছিলাম, সেভাবেই পাইছি বাবাকে। কিছুই নষ্ট হয়নি। কাপড়রের ওপরের বাঁধনগুলোও সাদাই আছে। পরে অন্য জায়গায় নিয়ে আবার দাফন করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে পড়তেন। তাবলিগে যাইতেন। চিল্লাই যাইতেন। আর চাষাবাদ করতেন। তার বয়স হয়েছিল ১২৩ বছর। আল্লাহ আমার বাবাকে অক্ষত রেখেছেন। মানে আমার বাবা বেহেশবাসী। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
লাশ উত্তোলনে অংশ নেয়া অপর ছেলে নুরু ইসলাম বলেন, ‘১৯৯৮ সালে আমি হজ করে সেই কাপড় রেখেছিলাম। সেই কাপড় দিয়েই ২০১০ সালে আব্বাকে কবর দিয়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, কাপড়েরও ক্ষতি হয়নি। বাবার লাশ যেমন কেবলামুখী রেখেছিলাম নিজ হাতে, ওইভাবেই ছিল। ঘটনা শুনে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিল। মানুষ ছবি তোলে, ভিডিও করে নেটে দিচ্ছিল। তাই আলেমদের সাথে পরামর্শ করে তারাতারি আবারো পাশে অন্যদের সাথে কবরস্থ করি।’
রংপুর ধাপসাতগড়া বাতুল মোকাররম মডেল কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ ন ম হাদিউজ্জামান বলেন, ‘যে মানুষ দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালার ঠিকমতো এবাদত করবে, আল্লাহ তায়ালা যা আদেশ আছে সেটা পালন করবে তাহলে কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, তাকে কিছুই স্পর্শ করবে না। কেয়ামত পর্যন্ত কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না। এই ধরনের মানুষদেরকে আল্লাহ তায়ালা কবরের মধ্যেও রিজিক দিয়ে থাকেন।’
ইসলামিক স্কলার হাদিউজ্জামান বলেন, ‘পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে যারা আল্লাহর রাস্তায় মারা যায়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না। তারা জীবিত এবং কবরে আল্লাহ তাদের রিজিক দেন। এই জাতীয় লোকগুলোকে আল্লাহ তায়ালা তার বিহেশতি খানা কবরে পৌঁছে দেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এভাবেই তার লাশ অক্ষত থাকবে। ওই অক্ষত লাশ হিসেবেই তিনি কিয়ামতের মাঠে উড্ডয়ন হবেন। আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের দেখিয়ে দেখিয়ে বলবেন যে দেখো, এরা আমার খাস বান্দা। আমার বিশ্বাস এই মানুষটি একজন মহিয়সি ঈমানদার মানুষ ছিলেন। যার কারণে কোনো পিঁপড়া বা অন্যকিছু কোনোভাবেই তার শরীরে ও কাপড়ে স্পর্শ করেনি। এটা আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশ। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক, আমরা সেই দোয়া করি।’