চলচ্চিত্রে প্রায় আমরা দেখি, মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর বিচারক তাঁর কলমের নিব ভেঙে ফেলছেন। আর মনে মনে ভাবি, এটি কোনো আইনে আছে, নাকি কোনো ড্রামাটিক এক্সপ্রেশন। দেখা যাক, তাহলে এর পেছনে কারণগুলো কী। মূলত এ নিব ভেঙে ফেলাটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা একটা কাস্টমস বা রেওয়াজ, যেটি মূলত একটি প্রতীকী বিষয়। এর প্রথম ব্যাখ্যা হলো যে কলম একজনের জীবনের আলো নিভে যাওয়ার রায় লিখেছে, সে যেন আর কারো জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিও বেশ চমৎকার। বলা হয়ে থাকে, বিচারককেও তাঁর রায়ের বিষণ্ণতা ছুঁয়ে যায়। এতে তিনিও ব্যথিত হন। কিন্তু ওই যে বলা হয় :
দণ্ডিতের সাথে
দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে
সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।
যার তরে প্রাণ কোন ব্যথা নাহি পায়,
তার দণ্ডদান প্রবলের অত্যাচার।
তো, সে মন খারাপের অনুভূতি থেকে নিজেকে দূরে রাখতেই মৃত্যুদণ্ডদাতা বিচারক নিবটি ভেঙে ফেলেন। এর তৃতীয় ব্যাখ্যায় বলা হয়, মন খারাপের অনুভূতি থেকে বা অপরাধবোধ হতে বিচারক তাঁর প্রদত্ত দণ্ড ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন। কিন্তু তিনি যেন তা না করতে পারেন, তার জন্যই কলমের এ নিব ভেঙে ফেলা।
চতুর্থ বা সর্বশেষ ব্যাখ্যায় বলা হয়, যেকোনো মৃত্যুই দুঃখ দেয়, কম বা বেশি, যদিও কখনো কখনো গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের মতো সর্বোচ্চ শাস্তিরও প্রয়োজন হয়। তার পরও কলমের নিব ভেঙে ফেলার মাধ্যমে বোঝানো হয়, মৃত্যু একটি দুঃখজনক বিষয়।
লেখক : সিনিয়র সহকারী জজ ও লিগ্যাল এইড অফিসার, ঢাকা।