দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে নতুন করে আরও এক ধাপ বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এবার বাড়তে শুরু করেছে গরিবের খাদ্য মোটা চাল ও খোলা আটার দাম। এতে মহাবিপদে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এসব মানুষের এখন একটাই জিজ্ঞাসা- মূল্যবৃদ্ধির এ দৌড়ের শেষ কোথায়। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের খাওয়ার বাজেটের বড় অংশ খরচ হয় চাল কেনায়।
এরপর রয়েছে আটা, তেল, ডাল ও চিনি। কিন্তু বাজারে পণ্যগুলোর দাম কেবল বাড়ছেই। খরচ বাঁচাতে তাই মাঝারির বদলে মোটা চাল, প্যাকেটের বদলে খোলা আটা এবং ছোট দানার বদলে মোটা দানার ডালের দিকে ঝুঁকছে এসব পরিবার। কিন্তু সেখানেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। রাজধানীর বাজারগুলোতে এক কেজি মোটা চাল কিনতে খরচ পড়ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকা পর্যন্ত। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যা ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া গেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সবশেষ ২৭ আগস্টের প্রতিবেদনও বলছে, বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত মাসে যা বিক্রি হয় ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং গত বছরের একই সময় বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের চাল বিক্রেতা মো. সোলেমান জানান, এখন যে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে। ৫০ টাকার নিচে মোটা চাল মিলছে না। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দেশি পাইজামের। স্বর্ণার বাজারও চড়া।
কারওয়ানবাজারের মেসার্স রনি রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. মনিরুল ইসলাম জনি বলেন, জ্বালানির দাম বাড়াতে পরিবহনে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা দাম বাড়তে পারে। অথচ মোকামে ৩০০-৪০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে যে রেট পাচ্ছি তাতে নতুন করে চাল কেনা বন্ধ রেখেছি।
চালের বিকল্প আটার দামও বেড়েছে। খোলা আটার কেজি এখন ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। কয়েকটি কোম্পানি নতুন অর্ডারে প্যাকেট আটার দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছে বলে জানায় খুচরা বিক্রেতারা।
টিসিবির গতকালের বাজার প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে খোলা আটার কেজি এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত মাসে যা ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং গত বছর একই সময়ে ৩০ থেকে ৩৩ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। অর্থাৎ পণ্যটির দাম মাসের ব্যবধানে ২৮ শতাংশের বেশি এবং বছরের ব্যবধানে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে।
মালিবাগ বাজারে খোলা আটা কিনতে এসে দাম শুনে হতবাক ভ্যানচালক মো. হাসনাত রিপন। তিনি বলেন, ‘একসময় আটাশ চাল কিনা খাইছি এহন খরচ কমাইতে মোটা চাল খাই। এহন মোটা চালও জুটতাছে না কপালে। আইলাম আটার খোঁজে। সেইটার দামেও আগুন। তেল, ডাল, চিনি, তরিতরকারি সব কিছুতে আগুন। এর শেষ কোথায়। ভালো দিন আইবো কবে।’
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের নৈতিকতায় ঘাটতি রয়েছে। বাজারে পণ্যের সংকট না থাকলেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। চালের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে চালকলগুলোতে মজুদ ও সরবরাহের প্রকৃত হিসাব যাচাই করতে হবে। গরিবের কষ্ট লাঘবে টিসিবি ও ওএমএস কার্যক্রমের বরাদ্দ এবং পরিধি বাড়াতে হবে।
টিসিবির হিসাবে, প্রতিলিটার খোলা তেলের দাম এক মাসে প্রায় ৪ শতাংশ এবং এক বছরে সাড়ে ৩৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। পাম তেলের দাম এক মাসে ১২ শতাংশ এবং এক বছরে ১৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে মাসের ব্যবধানে মোটা দানার মসুর ডালে ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও বছরের ব্যবধানে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। একইভাবে চিনির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত।