শনিবার, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী র‌্যালি ও আলোচনা সভা সারাদেশে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, মানববন্ধন হাসিনার দালালরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে : সারজিস শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র বিএনপি মেনে নেবে না : জয়নুল আবদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে-তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎহীন সচিবালয়, বন্ধ দাপ্তরিক কার্যক্রম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের নিহত ৪ পেঁয়াজের দাম কমছেই, খুশি ভোক্তারা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য মিল-কারখানা, বেকারের আর্তনাদ

মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শিক জীবন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৮ বার পঠিত

আমাদের প্রিয়নবী সা:-এর আগমনের মুহূর্তটি ছিল বিশ্বমানবতার জন্য একা অনাবিল ঈদ মহামুক্তির মহোৎসব। তিনি এলেন, পৃথিবীর অন্ধকার সভ্যতাকে বদলে দিলেন। শান্তি, সমৃদ্ধি ও অনুপম সভ্যতা কায়েম করলেন। অন্ধকার দূর হলো আলোর নিশান ফিরে পেল। ইসলামের চিরন্তন বিধানের আলোকে রেখে গেলেন এক চিরায়ত আদর্শ। যার সত্যনিষ্ঠ অনুসরণ ও চর্চা দিতে পারে আমাদের সব সমস্যার সমাধান।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী ছিল বিশ্বমানবের ইতিহাসের সর্বাধিক কলঙ্কময় কাল। তাই এ সময় আবির্ভাব ঘটেছে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সা:-এর। যিনি বিশ্ব প্রতিপালকের সর্বাধিক প্রিয়নবী, যিনি সর্বকালের জন্য প্রেরিত, যিনি সব দেশের, সব মানুষের জন্য তথা পুরো বিশ্বমানবের সর্বকালীন মুক্তি ও সামগ্রিক কল্যাণের মহাসনদ পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহক, যিনি সব প্রগতির অগ্রদূত, যিনি বিশ্বশান্তি ও বিশ্বকল্যাণের আহ্বায়ক, যিনি বিশ্বমানবের যাবতীয় সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান পেশ করেছেন, যিনি মানবজীবনের সব দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন, যিনি পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম মানুষ, যিনি বিশ্বমানবের শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ, যিনি বিশ্বমানবতার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ, যাঁর অনিন্দ্য সুন্দর আদর্শকে আল্লাহ পাক সর্বকালের মানুষের জন্য একমাত্র গ্রহণযোগ্য আদর্শ বলে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ পাকের রাসূলের পূতঃপবিত্র জীবনে রয়েছে এক উত্তম নমুনা তাদের জন্য, যারা আল্লাহ পাকের রহমতের আশা করে এবং আখিরাতের দিনেরও আশা করে আর অধিক পরিমাণে আল্লাহ পাককে স্মরণ করে।’ (সূরা আহজাব) একমাত্র তিনিই সরল ও সঠিক পথের সন্ধান দেন বলেও ঘোষণা করেছেন আল্লাহ পাক। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং হে রাসূল! শুধু আপনি সরল-সঠিক পথের হিদায়াত করেন।’

যাঁর প্রতিটি কথা, কাজ এবং সমর্থন ও অনুমোদনের বিস্তারিত বিবরণ আজো সম্পূর্ণ সংরক্ষিত এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। যাঁর চরিত্র-মাধুর্যেও প্রশংসা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আপনি চরিত্র মাধুর্যের পূর্ণ পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।’

যার প্রতি সমগ্র বিশ্বমানবকে গোমরাহির অন্ধকার থেকে হিদায়াতের আলোর দিকে নিয়ে আসার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, যেমন- ইরশাদ হয়েছে, ‘আলিফ, লাম, রা, এই কিতাব (কুরআনে হাকিম) (হে রাসূল!) আপনার নিকট এ জন্য নাজিল করেছি, যেন আপনি গোমরাহির অন্ধকারে আচ্ছন্ন মানবজাতিকে হিদায়াতের আলোর দিকে নিয়ে আসেন।’
যাকে আল্লাহ পাক সমগ্র বিশ্বসৃষ্টির জন্য ‘রহমত’ বা শান্তিদূত বলে ঘোষণা করেছেন : ‘এবং আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বসৃষ্টির জন্য রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি।’

বস্তুত তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম পথিকৃৎ, তিনিই বিশ্বমানবতার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ। তিনি হজরত মুহাম্মদ রা: তিনিই বিশ্বশান্তির প্রত্যক্ষ প্রতীক।

আল আমিন (পরম বিশ্বস্ত) রূপ সত্যের সাধনায়, কুসংস্কারের মোকাবেলায়, ধৈর্য ও সহনশীলতায়, ভিন্নধর্মী ও শত্রুর প্রতি ঔদার্যে, শ্রমের মর্যাদা দানে, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক সাম্য প্রতিষ্ঠায় পরিপূর্ণতার আদর্শ হিসেবে, সমগ্র বিশ্বের কল্যাণের মূর্ত প্রতীক (রাহমাতুল্লিল আলামিন) রূপে, স্বদেশ-প্রেম ও জাতি গঠনে, দৃঢ় সঙ্কল্পতার প্রতীক হিসেবে, বীরত্ব ও সাহসিকতায়, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্র পরিচালনায়, মহত্তম আদর্শেও দিক থেকে তাঁর জীবন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি লেখা ও বলা হয়েছে। তাই আজ পর্যন্ত তাঁর জীবনের প্রতি ক্ষেত্রের প্রতি স্তরের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি কথা ও কাজ লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত রয়েছে। যেহেতু বিশ্বমানবের জন্য তিনি একমাত্র আদর্শ, তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর জীবনকে বিশ্বের সম্মুখে তুলে ধরার বাস্তব ব্যবস্থা করেছেন। মহান আল্লাহ পাক নাজিল করেছেন মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মূলত আল কুরআন নবী পাক সা:-এর জীবন আদর্শও চিরদিনের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে।

রাসূল সা: নিয়ে সমালোচনা ও পশ্চিমা বিশ্ব
যখন পশ্চিমা বিশ্ব হুজুরে আরাবি সা:-কে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ ব্যঙ্গবিদ্রুপ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে তখন অনেক নিরপেক্ষ লেখক আমার প্রিয়নবী সা: সম্পর্কে অনেক সুন্দর লিখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আল্ফোনস লামারটাইন। তিনি লিখেছেন নবী পাক সা:-এর আদর্শ সম্পর্কে লিখেছেন আরো অনেক লেখকরা। যার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক লামারটাইন নবী সা: সম্পর্কে আর কি লিখেছেন, তা কি জানতে আগ্রহ হয় না পাঠকদের? আমি জানি নিশ্চয় হবে। অধ্যাপক আলফনেস ডি লামারটাইন ফরাসি ভাষায় লেখেন ‘হিসটরি ডি লা তুর্কি (তুর্কির ইতিহাস)। এটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয় ১৮৫৪ সালে আজ থেকে প্রায় দেড় শ’ বছরেরও আগে। তুর্কি ইতিহাস, আর তাতে মুসলমানদের নবী সা: সম্পর্কে কিছু থাকবে না, তা তো হয় না।

ইতিহাসবিদ লামারটাইন লিখেন, ‘কখনো কোনো ব্যক্তি নিজের জন্য স্বেচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাঁর চেয়ে অধিকতর ভক্তিমূলক পরিবেশ স্থাপন করতে পারেননি। কারণ তা ছিল অতি মানবিক; যাতে ধ্বংস করা চলে মানুষ ও তার স্রষ্টার মধ্যে প্রক্ষিপ্ত কুসংস্কারগুলো, যাতে খোদাকে ফিরিয়ে দেয়া চলে মানুষের কাছে এবং মানুষকে খোদার আনুগত্যের কাছে। যাতে সে সময়কার পৌত্তলিকতার জড় ও বিকৃত মিথ্যা খোদাগুলোর ধারণার বিশৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মতত্ত্বের যুক্তিপূর্ণ ও পবিত্র ধারণার সম্বন্ধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা চলে।’

লামারটাইন লিখেন, ‘এত ক্ষীণ কোনো উপকরণ নিয়ে কোনো ব্যক্তি কখনো মুহাম্মদ সা:-এর মতো মানবিক ক্ষমতার এত অধিক কোনো দায়িত্বে হাত দেননি। একটি বিরাট পরিকল্পনার ধারণায় ও বাস্তবায়নে, কোনো উপকরণ ছিল না তাঁর। শুধু তিনি নিজে ও মরুভূমির এককোণে বসবাসকারী সামান্য কয়েক ব্যক্তি ছাড়া।’

লামারটাইন লিখেন, ‘মুহাম্মদ সা: নির্ভীক তবুও বিনম্র, শিষ্ট তবুও বীর ছেলেমেয়েদের প্রতি স্নেহপরায়ণ তবুও বিজ্ঞজন পরিবৃত, সবচেয়ে বেশি সম্মান, সবচেয়ে উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বস্ত, এ এক হিতৈষী পিতা, এক বাধ্য ও কৃত পুত্র, বন্ধুত্বে দৃঢ় ‘সহায়তায় ভ্রাতৃসুলভ, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বা সম্পদের সমৃদ্ধিতে অথবা যুদ্ধে অবিচলিত, দয়াদ্র, অতিথিপরায়ণ এবং উদার, নিজের সর্বদাই মিতাচারী। তিনি কঠোর মিথ্যা শপথকারীর বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে খুনি, কুৎসাকারী, অমিতব্যয়ী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষদাতা এবং এ-জাতীয় লোভের বিরুদ্ধে। তিনি ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারিতায়, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং নিয়মিত খোদায়ী প্রর্থনা অনুষ্ঠানে মহান প্রচারক।’

আলফ্রেড ডি লামারটাইন লিখেন, ‘যদি উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব (গ্রেটনেস অব পারপাস), ক্ষুদ্র শক্তি (স্মলনেস অব মিস), আশাতীত লাভ (এসটাউন্ডিং রেজাল্টস) বিশ্বে মানবীয় প্রতিভার এ তিনটি বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায়, আমরা বর্তমান বিশ্বের ইতিহাসে কোনো মহাপুরুষকে মুহাম্মদ সা:-এর সাথে তুলনা করতে সাহস পাই কি? এ ব্যক্তিরা শুধু অস্ত্রশস্ত্র, আইন ও সাম্রাজ্যগুলো গঠন করেছিলেন। তারা যদি কোনো কিছু গঠন করে থাকেন, তা জড় (বৈষয়িক) শক্তি ছাড়া আর কিছু নয়, তাও কখনো কখনো তাদের চোখের সামনে ধসে পড়ে। অন্য দিকে নবী সা: শুধু পরিচালনা করেননি, তিনি আইন প্রণয়ন ও সাম্রাজ্য গঠন করেছেন, জাতি ও শাস্ত বংশ গঠন করেছেন এবং পরিচালনা করেছেন লাখ লাখ মানুষকে সে সময়কার বসতিপূর্ণ পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ এলাকাতে। তা ছাড়াও তিনি ধর্মের বেদিগুলো পুজ্যশক্তিগুলো, ধর্মগুলো, ধারণাগুলো, বিশ্বাস ও আত্মা সব কিছুই পাল্টিয়েছেন।…

লামারটাইন লেখেন : ‘একটি কিতাবের (কুরআন) ওপর ভিত্তি করে, যার প্রতিটি শব্দ হয়ে গেছে আইন, মুহাম্মদ সা: তৈরি করেছিলেন একটি আধ্যাত্মিক জাতীয়তাবাদ, যা প্রতিটি ভাষা ও জাতির (রেস) মানুষকে এক করেছে।’ লামারটাইন লিখেন, ‘তিনি আমাদের কাছে রেখে গেছেন এই মুসলিম জাতীয়তাবাদের অমোচনীয় বৈশিষ্ট্য, যা হলো মিথ্যা খোদাগুলোর জন্য ঘৃণা এবং একমাত্র ও নিরাকার খোদার জন্য আবেগ। খোদার অমর্যাদার বিরুদ্ধে এই খোদা প্রেম মুহাম্মদ সা:-এর অনুসারীদের গুণ হিসেবে উপস্থিত হলো। দুনিয়ার তিন ভাগের দুই ভাগ এলাকায় তার আদর্শের জয় ছিল তাঁর অলৌকিক কাম (মিরাকল)। অথবা এটি কোনো মানুষের অলৌকিক কাজ নয়। লামারটাইনের এসব জোরালো লেখাই সে দিন নাস্তিক্যবাদকে ঘায়েল করছিল প্রত্যক্ষভাবে। মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়েছিল।

লেখক : শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এমসি কলেজ, সিলেট

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com