শুক্রবার, ০৭:১৯ অপরাহ্ন, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে সন্ত্রাস-মাদক বিরোধী র‌্যালি ও আলোচনা সভা সারাদেশে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, মানববন্ধন হাসিনার দালালরা বিভিন্ন অপকর্মের ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে : সারজিস শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র বিএনপি মেনে নেবে না : জয়নুল আবদিন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে কোনো দেশের সম্পৃক্ততা পেলে দায়ী করা হবে-তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎহীন সচিবালয়, বন্ধ দাপ্তরিক কার্যক্রম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের নিহত ৪ পেঁয়াজের দাম কমছেই, খুশি ভোক্তারা প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে অসংখ্য মিল-কারখানা, বেকারের আর্তনাদ

মানুষ কখনো বংশগতভাবে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১০৪ বার পঠিত

বংশগত রোগ নিয়ে অনেক ভুল ধারণায় আমরা বিশ্বাসী। অনেকেই মনে করেন, বাবা-মা বা পূর্বপুরুষ যেসব রোগে আক্রান্ত ছিলেন, আমরা সেগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার অর্থই হলো আমাদের ওই রোগগুলো কেবলই বংশগত কারণে, অন্য কোনো কারণে নয়। কিন্তু এমন কি হতে পারে না, আমাদের পূর্বপুরুষ যেসব রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, সেসব রোগে আমরাও আক্রান্ত হতে পারি, তাদের কাছ থেকে সংক্রমিত হওয়া ছাড়াই? বংশগতভাবে হওয়া-না হওয়ার এই বিষয়টা আমার মনে হয়, আমরা কেউই এখনো ভেবে দেখেনি। আমাদের এই এককেন্দ্রিক চিন্তাধারার বড় কারণ হচ্ছে, বিভিন্ন রোগের সঠিক কারণ সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা। রোগের কারণ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবেই আমরা অনেক রোগকে বংশগত বলে ভুল করি। বিভিন্ন গুরুতর রোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে এখনো বিশ্বব্যাপী মারাত্মক অজ্ঞতা রয়ে গেছে।
আপনি জেনে অবাক হবেন, ধূমপানকে শুধু ক্যান্সার বা ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার জন্যই দায়ী করা হয় না, বরং উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্যও ধূমপানকে দায়ী করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কি এমন হচ্ছে? বাস্তবে দেখা যায়, যারা ধূমপান করেন, তারা যেমন এই সব রোগে আক্রান্ত হন, যারা কখনো ধূমপান করেন না, তারাও অহরহ এইসব রোগে আক্রান্ত হন। ধূমপান হচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটা ‘নন্দঘোষ’ বা গিনিপিগ। যেকোনো ধূমপায়ী কোনো রোগে আক্রান্ত হলে, তাকে সিরিয়াসলি বলা হয়, আপনি শুধু ধূমপান করার কারণেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ দেখা যায়, ধূমপান করেন না, এমন অসংখ্য লোকও প্রতিনিয়ত রোগটিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ধূমপানে যদি কোনো রোগ হতো, তাহলে কেবল ধূমপায়ীরাই সেই রোগে আক্রান্ত হতো, অধূমপায়ীরা কখনো সেই রোগে আক্রান্ত হতো না। কিন্তু এমন কোনো রোগে কি মানুষ আক্রান্ত হয়, যাতে কেবল ধূমপায়ীরাই আক্রান্ত হয়, অন্যরা নয়? নেই। আপনিই বলুন, অধূমপায়ীরা যে কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, ধূমপায়ীরাও কি সেই একই কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে না? অধূমপায়ীরা যেই কারণে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়, ধূমপায়ীরাও কি সেই কারণেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে না?

আমার পরিচিত ও কাছের অনেক মানুষকে দেখেছি হার্ট অ্যাটাকে (হৃদরোগ) আক্রান্ত হতে, যারা কখনোই ধূমপান করেন না। তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন শুধুই শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার কারণে। আর তাদের শরীরে চর্বি-কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকতেন বেশি। অথচ ধূমপায়ীরাও এই একই কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য প্রথমেই ধূমপানকে দায়ী করা হয়।

এভাবে একতরফা কোনো কিছুকে বিভিন্ন রোগের কারণ বলে দায়ী করার ফলে কী হচ্ছে? রোগগুলোর সঠিক কারণ আমাদের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাচ্ছে যেভাবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের সঠিক কারণ এখনো অনেকের দৃষ্টির বাইরে রয়ে গেছে। এই রোগগুলোর জন্য শুধু ধূমপানকে নয়, টেনশনকেও দায়ী করা হয়, বংশের কারো থাকাকেও দায়ী করা হয়। কিন্তু বংশের কারো থাকলে সন্তানরাও যে এই রোগে আক্রান্ত হবেই, তা কি অবশ্যম্ভাবী? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদেরকে আগে জানতে হবে, একটি রোগ কিভাবে বংশগতভাবে হতে পারে?

সন্তান জন্মের সময় এবং মাতৃদুগ্ধ পানের সময় বাবা-মা যেসব রোগে আক্রান্ত থাকেন, কেবল সেসব রোগ সন্তানের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও কথা আছে। যেসব রোগ রক্তবাহিত, কেবল সেগুলো একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন : অ্যালার্জি, ক্যান্সার, বাতব্যথা বা আর্থ্রারাইটিস ইত্যাদি। কিন্তু সন্তান জন্মের সময় নয় ও মাতৃদুগ্ধ পান শেষ হওয়ার পর বাবা-মা যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন, সেই রোগ সন্তানের শরীরে আপনাআপনি সংক্রমিত হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। তবে শুধু বাবা-মা যদি রোগটিতে আক্রান্ত অবস্থায় কখনো সন্তানকে রক্ত দিয়ে থাকেন, তখনই বাবা-মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে সেই রোগ সংক্রমিত হতে পারে। রক্তদানের মাধ্যমে এই সংক্রমণকে কিন্তু বংশগত বলার সুযোগ নেই। কারণ যদি বাবা-মা কেউ তাদের সন্তানকে রক্ত না দিয়ে সেই রোগে আক্রান্ত অন্য কেউ তাদের সন্তানকে রক্ত দিত, তাহলেও সন্তান সেই রোগে আক্রান্ত হতো।

কিন্তু বংশগতভাবে আক্রান্ত হওয়ার এই মূল কারণটার দিকে লক্ষ না করে যেকোনো রোগকে বংশগত বলে আখ্যায়িত করার একটা মারাত্মক প্রবণতা চতুর্দিকে লক্ষ করা যায়। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, ডাক্তাররাও মানুষের মধ্যে এই ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাপকহারে। কোনো ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগী ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার অনেকসময় প্রশ্ন করেন, আপনার বাবা-মা কারো রোগটি ছিল কি না। রোগী হ্যাঁ বললেই হলো। ডাক্তাররা তার রোগটিকে বংশগত বলে আখ্যায়িত করতে দু’বার ভাবেন না। কিন্তু রোগী হ্যাঁ বলার পর কোনো ডাক্তার কখনো রোগীকে এই পাল্টা প্রশ্নটি করেন না, ‘আপনার জন্মের সময় বা আপনি মাতৃদুগ্ধ পান করার সময় কি তারা রোগটিতে আক্রান্ত ছিলেন?’

এটা বংশগত রোগ সম্পর্কে মানুষের এক ভয়াবহ অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতার একটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। বাস্তবে বংশগত নয়, বরং সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ), কিন্তু বংশগত বলে প্রচার করা হয়, এমন কোনো রোগে কারো বাবা-মা আক্রান্ত হলে সন্তানরা ভাবে, তাদের বাবা-মা যেহেতু রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে, তারাও নিশ্চিতভাবে রোগটিতে আক্রান্ত হবে। এটা ভেবে তারা রোগটি প্রতিরোধের কোনো চেষ্টা করে না যার ফলে তারাও একসময় রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু রোগটি যে বংশগত নয়, বরং সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য, এটা জানলে তারা রোগটি প্রতিরোধের চেষ্টা করত এবং প্রতিরোধ করতে সক্ষম হতো।

ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে এই ভুল বিশ্বাসগুলোর মূল কারণ হচ্ছে, এই রোগগুলোর মূল কারণ সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা। যে যা-ই বলে, আপনি নিশ্চিত থাকুন, এই রোগগুলোর মূল কারণ শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকা। পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখব, আমাদের অনেকের বাবা-মাও একসময় এই সব রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু যখন থেকে তারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজকর্ম থেকে অবসরে চলে গেছেন, তখন থেকেই তারা রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরাও শারীরিক পরিশ্রম করছি না বলেই রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছি, সন্দেহ নেই। দেখবেন, যারা এখনো নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করছেন, তারা কেউই রোগগুলোতে আক্রান্ত হচ্ছেন না। আমরা যদি বিশ্বাস করি, রোগগুলো বংশগত নয়, বরং শারীরিক পরিশ্রম থেকে দূরে থাকলেই রোগগুলো মানুষকে আক্রমণ করে এবং এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করি, তাহলে রোগগুলো কোনোভাবেই আমাদেরকে আক্রমণ করার সুযোগ পাবে না।

লেখক : শিক্ষক; কলামিস্ট ও গবেষক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com